আর জি কর কান্ড নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের ঔদ্ধত্য সব সীমা অতিক্রম করেছে, তাদের পারিবারিক শিক্ষার পরিচয় দিচ্ছে, তাদের আচরণে অনেক প্রশ্ন উঠে আসছে, অনেক বেনিয়ম উঠে আসছে যার উত্তর তাদের কাছেও নেই।
অম্বর ভট্টাচার্য, তকমা নিউজ, কলকাতা, ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ : আর জি কর কান্ড নিয়ে যা ঘটেছে তা সত্যিই জঘন্য ও ঘৃণ্য কিন্তু এই ঘটনাকে নিয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা যা করছেন সেটা আরও বেশি অপরাধের। তাদের ৫ দফা দাবি সরকারের কাছে রেখেছেন ঠিকই কিন্তু সেটার নেপথ্যে তারা যে রাজনীতির ছত্রতলে গিয়ে প্রশাসনকে পদে পদে হেনস্থা ও অপমান করছেন সেটা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ডাক্তার ছাত্রছাত্রীরা এমন কোন বড় আন্দোলনকারী হয়ে যায় নি যারা একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আসম্মান করতে পারে। তাদের আচরণ সব শালীনতাকে লঙ্ঘন করেছে। জুনিয়র ডাক্তারদের যে ৫ দফা দাবি দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাতে কি বলা হয়েছে ——-
রেসপেক্টেড ম্যাম, ডেপুটি হেলথ মিনিস্টারের প্রেস মিট দেখে জানতে পারলাম আপনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী। তবে স্বাস্থ্যসচিবের কাছ থেকে যে মেল ১০ তারিখ সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটে পেয়েছিলাম তাতে তেমন কিছু উল্লেখ ছিল না। সেই প্রসঙ্গে আমাদের মূল দাবি আমরা উল্লেখ করছি। তখনও ভালো করে আলো ফোটেনি। গভীর ঘুমে কলকাতা। আর আন্দোলনের বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেই সময় রাত তিনটে বেজে ৪৯ মিনিটে বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে একটি মেল করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
সেই চিঠিতে লেখা হয়েছে,
‘রেসপেক্টেড ম্যাম, ডেপুটি হেলথ মিনিস্টারের প্রেস মিট দেখে জানতে পারলাম আপনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী। তবে স্বাস্থ্যসচিবের কাছ থেকে যে মেল ১০ তারিখ সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটে পেয়েছিলাম তাতে তেমন কিছু উল্লেখ ছিল না। সেই প্রসঙ্গে আমাদের মূল দাবি আমরা উল্লেখ করছি। ‘
১) জাস্টিস ফর অভয়া- এটা রাজ্য সরকারে ব্যাপার নয়, তবে আমরা চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিবিআই, সুপ্রিম কোর্ট তদন্তকে যেন এগিয়ে নিয়ে যায় ও দেরি না করে দোষীদের যেন শাস্তি দেয়।
২) ডিএমই, ডিএইচএস ও স্বাস্থ্যসচিবকে অপসারণ করতে হবে। কারণ সেমিনার রুমের পাশের রুম ভাঙার ক্ষেত্রে তাঁদেরই সই ছিল। আমরা মনে করি গোটা স্বাস্থ্য পরিকাঠামোতে দুর্নীতিতে তাঁরাও জড়িত।
৩) বিনীত গোয়েলকে অপসারণ( রিমুভাল) হবে। তিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনার। ডিসি নর্থ ও ডিসি নর্থের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪) সমস্ত হাসপাতাল ও সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপযুক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সমস্ত জুনিয়র ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মী বিশেষত মহিলা হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার্সদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৫) সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় থ্রেট কালচারের অবসান ঘটাতে হবে। মেডিক্যাল পড়ুয়া, জুনিয়র ডাক্তার ও ডাক্তারদের গণতান্ত্রিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা নির্দিষ্ট করে আমাদের দাবি জানিয়েছি। আপনার সঙ্গেও আলোচনা করতে আমরা আগ্রহী। অন্তত ৩০জনের প্রতিনিধি দল যাবে। কারণ একাধিক মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
গোটা রাজ্য এই মিটিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা জানি আপনার প্রশাসন বিভিন্ন ক্ষেত্রে মিটিংয়ের লাইভ টেলিকাস্ট করে। আমরা চাই এখানেও তেমনটাই হবে।
ইয়োরস সিনসিয়ারলি
ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট।
মমতাকে এভাবেই চিঠি লিখেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। একেবারে ভোরবেলা এই চিঠি লেখা হয়েছিল। সেখানে সরাসরি বলা হয়েছিল ৩০জন যেতে চান তাঁরা। সেই সঙ্গেই সেই মিটিংয়ের যাতে লাইভ টেলিকাস্ট করা হয় যা পুরোপুরি মৌখিক দাবিও তুলেছিলেন তাঁরা।
এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি স্বাস্থ্যভবনের সামনে বিক্ষোভরত জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্ণা মঞ্চে গিয়ে হাজির হন এবং তাদের সহানুভুতি দেখিয়ে তাদের অনুরোধ করেন কর্মবিরতি থেকে সরে আসতে যাতে রাজ্যের মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা পায়। তিনি সাথে এও বলেন যে লাইভ স্ট্রিমিং-এর কথা বলা হয়েছে তা আইনত সমস্যা আছে কারণ বিষয়টা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন এবং এই ঘটনার তদন্ত করছেন সিবিআই। সেখানে এভাবে লাইভ স্ট্রিমিং করা উচিত হবে না কিন্তু এই সমস্যা বা দাবি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে। তিনি এমনও বলেন, আমি তোমাদের কাছে শুধু একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আসি নি, আমি তোমাদের কাছে একজন দিদি হিসাবে অনুরোধ করছি। আমার উপর বিশ্বাস বা আস্থা থাকলে আমি নিশ্চয়ই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো কিন্তু তার জন্য আমাকে তদন্ত করতে হবে যার জন্য সময় লাগবে। যাদের নামে তোমাদের অভিযোগ তারা কেউ আমার বন্ধু নয়, শত্রুও নয়, তাদের আমি চিনি না। তাদের একটা পদ্ধতির মাধ্যমে আমার কাছে আসে। আমিও তিলোত্তমার বিচার চাই কিন্তু পাশাপাশি রাজ্যের মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার অনুরোধ করবো। আমি কোন পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে নই। আমি কোন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনরকম ব্যবস্থা নেবো না। ১৭ই সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে শুনানি আছে তার আগে আবার তোমাদের অনুরোধ করতে এসেছি। আমি আমার শেষ চেষ্টা করতে এসেছি। আমি তোমাদের আবেগকে মাথায় রেখে তোমাদের সাথে তোমাদের মঞ্চ থেকে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। আমিও তোমাদের সাথে সমব্যাথী।
একজন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য এর থেকে আর কিছু করা সম্ভব নয়। কিন্তু এরপর কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে
১) আজ যারা আন্দোলন করছেন তারা এতদিন কেন মুখ খলেন নি? ২) তারা নিজেরাও এই দুর্নীতির সাথে এতদিন কোন স্বার্থের কারণে আপোষ করেছেন? ৩) তারা এখনও চিকিৎসক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন নি কিন্তু তারাও নিজেরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন হাসপাতালে যুক্ত থেকে কোন বেআইনি রোজগার করেন নি, তবে তো সেটাও দুর্ণীতি? ৪) হাসপাতালে আজ যে দুর্ণীতি নিয়ে সরব হয়েছেন সেই সচেতনতা এতদিন কোথায় ছিল? যদি এই সাহস আগে দেখাতেন তাহলে তো তিলোত্তমাকে প্রাণ দিতে হত না। সকলে তো জানতেন তিলোত্তমা প্রতিবাদী ছিলেন, যখন তিনি প্রতিবাদী হয়েছিলেন তখন তাদের সাহস কোথায় ছিল? নাকি আজ কিছু বিরোধী শক্তি তাদের মদত দিচ্ছে বলে তাদের সাহস এসেছে? ৫) হাসাপাতালের ডিউটির পর কোন চিকিৎসক কি বাইরে প্র্যাকটিস-এর সাথে জুক্ত নন? ৬) আদালত বহুবার বলেছেন জেনেরিক ওষুধ ব্যবহার করতে এবং ওষুধের নাম বড় অক্ষরে (CAPITAL LETTER) লিখতে, সেটা কি তারা করেছেন? ৭) চিকিৎসকদের বলা আছে তার ধার্জ্য পারিশ্রমিক চেম্বারের বাইরে সকলের জন্য উল্লেখ করতে হবে, ক’জন চিকিৎসক আছেন সেই নিয়মের আওতায়? ৮) রোগীর থেকে যে পারিশ্রমিক একজন চিকিৎসক নেন তা মানি রিসিপ্ট দেওয়াটা কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, ক’জন চিকিৎসক তা মানে কারণ এটা তার পেশাগত পারিশ্রমিক, এর উপর তার কর দিতে হয়। তারা কি তা মানেন?
এতকিছু অসামঞ্জস্য থাকার পর তাদের এত ঔদ্ধত্য আসে কোথা থেকে, কাদের প্রশ্রয়ে এই সাহস আসছে তা আজ রাজ্যবাসী কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে। এটা তাদের পারিবারিক শিক্ষার পরিচয় দিচ্ছেন কারণ একজন মুখ্যমন্ত্রী যখন বলছেন, এই খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে তোমরা আন্দোলনে আছে, এটা চিন্তার বিষয় এবং তোমাদের বাড়ির লোকেদের চিন্তার ব্যাপার। এখানেই বোঝা যায় তিনি কতটা চিন্তিত কিন্তু তারপরও এই জুনিয়র চিকিৎসকেরা যারা আজ চিকিৎসক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন নি তারা তাদের জেদ বা ইগো দেখাচ্ছেন, কার সাথে না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে জিনি নিজে বারবার বলছেন তোমরা আমার ভাইবোন, আমি তোমাদের দিদি হিসাবে অনুরোধ করছি। আমার উপর ভরসা রাখো, তোমরা জাস্টিস পাবে, কোনরকম ইনজাস্টিস হবে না। তাতেও তারা সুর নরম না করে সেই একই গোঁ ধরে বসে আছে লাইভ স্ট্রিমিং ছাড়া কোন আলোচনা হবে না। এ কি ধরনের অসভ্যতামো, কিসের বিচারের দাবি করছেন? এবার তো তাদের বিচার করার পালা চলে আসছে কারণ ২৯জন প্রাণ হারিয়েছেন তাদের এই কর্মবিরতির জন্য যার ক্ষতিপূরণ হিসাবে সরকারকে ২ লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। তাদের পড়াশুনোর খরচ বহন করবে সরকার আবার তাদের ইগো সামলানোর জন্য সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে? কি আবদার। রাম-বাম এক হয়ে বাজার গরম করতে মদত দিচ্ছে আর অন্যদিকে এই জুনিয়র চিকিৎসকেরা নাটক করে বলছে, আমরা তো ওনার চেয়ার চাই নি। কথাটা ঠিক কারণ তারা চেয়ার চাইছে না কিন্তু তাদের স্কেপগোট করে চেয়ারের স্বপ্ন দেখছে বিরোধী দলগুলো। আলোচনার নামে তিনদিন সময় নষ্ট করলেন আবার অপমান করতেও ছাড়লেন না তারা। যখন তারা কোনভাবেই সৌজন্য আলোচনায় রাজি হলেন না তখন মুখ্যমন্ত্রীর চা পান করার অনুরোধ পর্যন্ত অগ্রাহ্য করলেন। সেই ভদ্রতা বা শালীনতা পর্যন্ত তাদের শিক্ষার রুচিবোধে নেই। যখন পূর্ব রাজনৈতিক পরিকল্পনা করে এসেছিল তবে এই নাটকের কি প্রয়োজন ছিল?