সরকারি নির্দেশে স্কুলের তিন মাসের বেতন ছাড়, চিন্তামুক্ত করে নজির করল বালির বিধায়ক বৈশালী
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, বালি, ৫ই জুন ২০২০ : করোনা ভাইরাসের দুর্জোগের ফলে গোটা ভারতে লকডাউন চলেছে প্রায় ২ মাস পেড়িয়ে ২ মাস। আর এই তিন’মাস মানুষের রোজগার নেই, বাড়িতে খাদ্য নেই, অর্জিত টাকাও প্রায় শেষের দিকে।সাংসারিক ও সামাজিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।এর ওপর রয়েছে ব্যাঙ্ক লোন, সন্তানদের বেসরকারি স্কুলের বেতনের চাপ। কিকরে সামাল দেবেন তা ভেবে পারছে না মানুষ।বেসরকারি স্কুলের বহু অভিভাবক এব্যাপারে বালি বিধানসভার বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়াকে অনুযোগ করেন। সাথে সাথে বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া এই জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে সরব হন। তিনি বালি বিধানসভার বেসরকারি স্কুলগুলোর সাথে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেন স্কুল কতৃপক্ষের সাথে।
বৈশালী ডালমিয়ার সাথে কথা হওয়ার পর থেকেই বেসরকারি স্কুলগুলো নড়ে বসে। বিধায়ক বৈশালীর স্কুল কতৃপক্ষের কাছে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী অনুরোধ করেন লকডাউনে স্কুল যখন বন্ধ, ছাত্রছাত্রীদের কোন পরিষেবা দেয় নি স্কুল, বিদ্যুৎ জ্বলে নি, জেনারেটর চলে নি, কোন স্কুল মেনটেইনেন্স ছিল না তবে কেন স্কুলের বেতন দেওয়ার প্রশ্ন আসবে। এছাড়া অভিভাবকেরা লকডাউনের মধ্যে বাড়ির বাইরে যেতে পারেন নি, রোজগার ছিল না, জমানো টাকা ভেঙে খেতে হয়েছে। সুতরাং বেতন নেওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না।বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া স্কুল কতৃপক্ষকে বলেন এপ্রিল, মে এবং জুন মাসের কোন বেতন নিতে পারবে না স্কুল এবং আগামী বছরের কোন সেশন ফি নেওয়া যাবে না। এছাড়া স্কুল বাসের এই তিন মাস কোন ফি নেওয়া যাবে না।বালির বহু অভিভাবকেরা বলছেন, স্কুলগুলো বেতন নেওয়ার ব্যাপারে চালাকি করছে। অনলাইন ক্লাস শুরু করে স্কুলের মাইনে নেওয়ার একটা রাস্তা তৈরি করছে। কিন্তু নরমাল দিনে স্কুল হয় ৮টা পিরিয়ড আর এখন হচ্ছে প্রতিদিন মাত্র ৩-৪টে বিষয় নিয়ে। সুতরাং সেই দিক দিয়ে দেখতে গেলে অর্ধেক ক্লাস দিচ্ছে বেসরকারি স্কুলগুলো। এছাড়া সরকার ঘোষণা করে দিয়েছে এবছর ক্লাস ১ থেকে ক্লাস ৮ পর্যন্ত সকলকে পাস করাতে হবে। তবে এখানেই তো সরকার বলে দিচ্ছে স্কুল খোলার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা আছে। তবে আমরা এরকম পরিস্থিতিতে স্কুলের বেতন দেব কিভাবে যখন আমাদের কোন রোজগার নেই।
বৈশালী ডালমিয়া এই সকল অনুযোগ নিয়ে কথা বলার পর বালি বিধানসভার একের পর এক স্কুল তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে শুরু করে। সেন্ট’স জোসেফ স্কুল ৪ঠা জুন এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অভিভাবকদের প্রতি এই কঠিন পরিস্থিতিতে সহৃদয় হয়ে সহমত প্রকাশ করে জানিয়ে দেয় ১) এপ্রিল ২০২০ থেকে যতদিন না স্কুল স্বাভাবিক ভাবে খুলছে ততদিনের বেতন দিতে হবে না। ২) সেশন ফি অর্থাৎ বাৎসরিক স্কুল খরচের ৫০% অর্থাৎ অর্ধেক দিতে হবে। সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল একই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এই বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার পর বালি বিধানসভার সব অভিভাবকেরা প্রাণ খোলা উচ্ছাস নিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। তাঁরা বলেন, আজ আমাদের এই দুর্জোগের সময়, অসহায় অবস্থায় বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া যেভাবে পাশে দাড়িয়েছেন তা অভুতপুর্ব। এই মহামারীতে বৈশালী ডালমিয়াকে প্রথম দেখেছি নিজের উদ্যোগে ভিন রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের বালিতে ফিরিয়ে আনতে। এছাড়া ভিন রাজ্যে চিকিৎসার জন্য বালি বিধানসভার বাসিন্দা কেউ থাকলে তাঁকে সাহায্য করতে, এমনকি নিজে না আসতে পারলেও তাঁর প্রতিনিধিদের দিয়ে শিশুদের জন্য খাদ্য সামগ্রী (দুধ, কেক, ফল) এবং দুঃস্থদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। বেশ কিছুদিন নিজে উদ্যোগ নিয়ে রান্না করা খাবার মানুষকে সরবরাহ করেছেন।কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে নিজস্ব উদ্যোগে বালি অঞ্চলের বেসরকারি স্কুলের বেতন মুকুব করে দেওয়া।বৈশালী ডালমিয়া এরকম একটা উদ্যোগ নিয়ে গোটা রাজ্যের কাছে একটা নজির করে দিলেন।রাজ্যে অন্যান্য বিধানসভার বিধায়কদেরও উচিত এই রাস্তায় তাদের এলাকার বেসরকারি স্কুলগুলোকেও অনুরোধ করে বেতন মুকুব করানো।এতে মানুষ অনেকটা চাপমুক্ত হবে এবং দুশ্চিন্তামুক্ত হবে।