রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা অবহেলিত, উন্নয়নের দাবিতে আজ পৌরসভা ঘেরাও,বিক্ষোভ দেখায়, চলে ভাঙচুর
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ১৯শে জানুয়ারি ২০২১ : নির্বাচন নিয়ে এত চিৎকার হয়, চলে তরজা কিন্তু সবটাই উন্নয়নকে ঘিরে। আর নির্বাচনের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যদি উন্নয়ন না হয়, তার জায়গায় যদি চলে শুধু দাদাগিড়ি আর জুলুমবাজি তখন মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। মানুষ চায় উন্নয়ন, নিজের বাড়ির সামনে রাস্তা, ড্রেন, আলো। কিন্তু সেটা দীর্ঘদিন দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হয় নি। রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মানুষ উন্নয়ন থেকে দীর্ঘদিন অবহেলিত। সেই জায়গায় কোথায় কার বাড়িতে ছাদ ঢালাই হচ্ছে, কোথায় কার বাড়িতে সামান্য পাঁচিল দেওয়া হচ্ছে, কোথায় কার একটা জানলার উপর কার্নিশ হচ্ছে অথবা কার জমিতে প্ল্যান জমা পড়ছে তার দিকেই নজর থাকে, সাথে শুধু টাকার জুলুমবাজি তবে মানুষ কেন সহ্য করবে।এই ওয়ার্ড এই কারণে গত লোকসভা নির্বাচনে হেরেছে তৃনমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তী। এমনকি সুদুর মুম্বাই থেকে অভিনেত্রী ভাগ্যশ্রী ও রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু শুধুমাত্র এই ওয়ার্ডে প্রচারে এসেও মিমির ভাগ্য ফেরাতে পারে নি।সেই থেকে তৃনমূল এই ওয়ার্ডে পিছোতে শুরু করে যা আজ আরও বেড়ে গেছে।
ওয়ার্ডের বিদায়ী পৌরপিতা অমরেশ সরদার মানুষের সামনে শিক্ষকের সম্মান পেলেও ওয়ার্ডের উন্নয়ন তাঁর হাতের বাইরে ছিল। উন্নয়নের রেশ তাঁর সুযোগ্য শ্যালক ওয়ার্ড সম্পাদক ও গড়িয়া টাউন তৃনমূলের সম্পাদক একজন রেলকর্মী সুব্রত মন্ডলের হাতে। তাঁর জুলুমবাজিতে ওয়ার্ডের সমস্ত মানুষ তিতেবিরক্ত। জুলুমবাজি এমন পর্যায়ে গেছে মানুষ আর ভুলেও তৃণমূলকে চাইছে না। যদিও মানুষ বলছে সুব্রত মন্ডলের পরিবারের কেউ প্রার্থী হলে সকলে একজোটে মুখ ফিরিয়ে নেবে তৃনমূলের দিক থেকে। এরফলে ওয়ার্ডের সক্রিয় তৃনমূল কর্মীরা বিপাকে পড়েছে আর শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বিজেপি। বিজেপি ওয়ার্ডে বিভিন্ন জায়গায় সভা করে মানুষকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এই সুব্রত মন্ডলের বিভিন্ন জুলুমবাজির তথ্য। যদিও এতকিছু লিখছি বটে, এরজন্য আমায় হয়তো আবার সুব্রত মন্ডলের ফোন শুনতে হবে “আমার মা সোনাগাছিতে কত রেট নিত?” আগেও শুনতে হয়েছে এই মন্তব্য।কি সুস্থ সংস্কৃতি ও মানসিকতা সুব্রত মন্ডলের? যে সমাজের মায়েদের সম্মান জানাতে পারে না সে আবার গঙ্গাসাগরে তীর্থ করতে গিয়ে নারায়ণ সেবা করাতে যায় পাপ মোচন করতে!! ওয়ার্ডের মানুষ হাসছে। করোনা পরিস্থিতিতে তাঁর স্ত্রী শুক্লা মণ্ডলকে এগিয়ে দিয়ে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মানুষ তাতেও ভোলেন নি ফেলে আসা অত্যাচারের কথা।যেদিন এই ওয়ার্ডে মদের দোকানের সূচনা নিয়ে পথসভায় প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায় বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম ও নজরুল আলি মন্ডল এবং বিভাস মুখার্জিকে মানুষ সমর্থন করেছে কিন্তু সেই প্রতিবাদ মঞ্চের কাছে যখন এই সুব্রত মণ্ডলকে দেখা যায় মানুষ পেটে হাত দিয়ে হেঁসেছে। সুব্রত মন্ডল শোনা যায় ওয়ার্ডের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মানুষকে প্রচার চালিয়েছেন এবার তাঁর স্ত্রী শুক্লা মন্ডল পৌরমাতা হচ্ছেন। কে বলল তাঁকে তা কারও জানা নেই। খোদ মমতা ব্যানার্জি নিজেও জানেন না তাঁর অজান্তে এই ওয়ার্ডের পৌরমাতার দায়িত্ব দেওয়া হয়ে গেছে। মানুষ এই মন্ডল পরিবারকে নিয়ে আনাচেকানাচে যা বলেন তা নিজের কানে শুনলে লজ্জাবোধ থাকলে হয়তো সমাজে মুখ দেখাতো না।কিন্তু সেটার খুব খামতি আছে। শুনলেও বুক ফুলিয়ে জুলুম চালিয়ে যাবেন। যার রেশ আজ আঁচরে পড়ল গড়িয়া পৌরসভা অফিসে।
আজ দুপুর ১২টায় এই ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণ সরনির বাসিন্দারা পৌরসভা অফিসে এসে রাস্তা ও নিকাশি ব্যবস্থা করার দাবি নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পৌরসভার গেটের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ চলে প্রায় চার ঘন্টা। এরপর পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার শুভাশিস বসু-র কাছে তারা দাবি জানাতে গেলে তর্ক বাড়তে থাকে। রাজপুর সোনারপুর পুর প্রধান ডাঃ পল্লব দাসকে যোগাযোগ করা হলে তিনি আশ্বাস দেন ২৩ লাখ টাকার কাজের মধ্যে অবিলম্বে তিনি ১২লাখ টাকা অনুমোদন করে আগামী শুক্রবার থেকে কাজ শুরু করে দেবেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা কোন কথা মানতে রাজি হন নি। তারা দাবি জানায় পুর প্রধানকে লিখিত দিতে হবে, কোন মৌখিক আশ্বাস তারা মানবেন না। তারা এমনও জানায় লিখিত না দিতে পারলে পুর প্রধানকে নিজে উপস্থিত হয়ে বলতে হবে, নাহলে ইঞ্জিনিয়ার শুভাশিস বসুকে লিখিত দিতে হবে। এরপর বিক্ষোভকারীরা শুভাশিস বসু-র ঘরে ভাঙচুর চলে, পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌছায় শুভাশিস বসু-র উপর শারীরিক আক্রমণ হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়। পৌরকর্মীদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর নরেন্দ্রপুর থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের চলে যেতে বলে। শুভাশিস বসু জানান, আমায় বিক্ষোভ দেখাতে এলে আমি ডাঃ পল্লব দাসকে ফোনে কথা বলি। তিনি আগামী শুক্রবার থেকে কাজ শুরু হওয়ার আশ্বাস দিলে তারা মানতে রাজি হয় নি। এরপর আমায় লিখিত দেওয়ার দাবি জানায়। কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমি লিখিত দিতে পারি না। সবটার একটা পদ্ধতি থাকে। তারা কিছুই মানতে নারাজ, চলে আমার উপর অকথ্য গালিগালাজ, সব শেষে টেবিলে থাকা প্রয়োজনীয় কাগজ ফেলে দেওয়া হয় এবং ঘরের চেয়ার ফেলে দেওয়া হয়। আমি কখনই বলবো না তাদের দাবি যুক্তিহীন নয়।অবশ্যই তাদের দাবির প্রয়োজনীয়তা আছে কিন্তু তা একটা সুস্থ পদ্ধতির মারফৎ করলে ভাল হত। এই প্রতিবেদনের পর হয়তো আমার প্রাণনাশের চেষ্টা চালাবেন সুব্রত মন্ডল তাঁর বাহিনীর মারফৎ কিন্তু আসল চিত্রটা তুলে ধরা উচিত। দলীয়স্তরে জানা উচিত মানুষের ভোটের জন্য হার নয়, নেতাদের অকথ্য ব্যবহার, অত্যাচার ও জুলুমবাজি তৃনমূল দলের হারের কারণ।গড়িয়ায় এমন একটা ওয়ার্ড নেই যেখানে মানুষ উন্নয়ন নিয়ে এতটা ক্ষিপ্ত বা অসন্তুষ্ট যার প্রভাব পড়বে আগামী বিধানসভায় এমনকি আগামী পৌরসভা নির্বাচনে এই ওয়ার্ড তৃনমূলের হাতছাড়া হবে যদি এই মন্ডল পরিবারের কোন সদস্য প্রার্থী হয়। এই ওয়ার্ডে ৯টা বুথের মধ্যে ৪টে বুথে তৃনমূলের জয় আসা খুবই মুশকিল।মানুষের বক্তব্য অন্য কোন “মন্ডল” প্রার্থী হোক কিন্তু ওই পরিবারের কেউ না হয়।এরপর হয়তো তৃনমূল দল ভাববে পরিস্থিতি নিয়ে ও তৃনমূল দলের জয় নিয়ে।বিধানসভার আগে এই ওয়ার্ড নিয়ে উচ্চ নেতৃত্বের চিন্তা করার সময় এসেছে।