রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের নিয়ম ভেঙে বর্ষার জল নিকাশি নিয়ে ৪ ও ৫ নং-এর বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ২০শে আগস্ট ২০১৯ : সাম্প্রতিক ভারী বর্ষার ফলে গোটা সোনারপুর উত্তর বিধানসভার রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার প্রায় অধিকাংশ ওয়ার্ড জলে ডুবে যায়। এর ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হয়। কিন্তু তার মধ্যে হঠাৎ রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের পুরপিতা রঞ্জিত মন্ডল সদলবলে চলে আসেন গড়িয়া বয়ালিয়া উজ্জয়নী মোড়ে। সেখানে সেই সময় উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম। সেখানে পুরপিতা রঞ্জিত অনৈতিক আবদার করে বসে। তিনি আবদার করেন তাঁর ওয়ার্ডের জমা জল যাতে বোয়ালিয়া উজ্জয়নীর জলপোলের তলা দিয়ে পাইপ বসিয়ে নবগ্রামের ঝিলে ফেলার ব্যবস্থা করা যায়। এই আবদার শুনতেই উপস্থিত নবগ্রামের বাসিন্দারা প্রতিবাদ করেন কারণ সেইসময় নবগ্রামের ৪ নং ওয়ার্ড ও ৫ নং ওয়ার্ড জলমগ্ন অবস্থায়। প্রতিটা দোকানে জল ঢুকে আছে।মানুষ ও সাপ একসাথে প্রায় এখানে বাস করছে।
৪ নং ওয়ার্ডের পুরপিতা বিভাস মুখার্জি নিজের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় পাম্প বসিয়ে বর্ষার জমা জল টালি নালায় ফেলার ব্যবস্থা করেছেন।অনেক বাড়িতে মানুষ খাটের উপর থাকলে সাপ ঘরের নীচে জলে আছে।তার উপর যদি আবার অন্য ওয়ার্ডের জল বয়ে যায় ওই ওয়ার্ডের উপর দিয়ে তবে তো সাড়ে সর্বনাস। সুতরাং সেই সময়ের জন্য মানুষের রোষের মুখে ফিরে যেতে হয় পুরপিতা রঞ্জিত মণ্ডলকে। ফিরে যান বিধায়ক নিজেও। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেন নি রঞ্জিত মন্ডল, ফের রাতে তিনি প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে জেসিপি ও পাইপ দিয়ে কিছু দলীয় কর্মীদের পাঠিয়ে দেন উজ্জয়নীর মোড়ে যাতে সেই জলপোল কেটে পাইপ ঢুকিয়ে জল নিকাশি ব্যবস্থা করা যায়। তখন বাজে রাত ১২টা।পুরপিতা রঞ্জিত মন্ডল ভেবেছিলেন এলাকার মানুষ ঘুমিয়ে পড়বেন আর সেই ফাঁকে রাতের অন্ধকারে কাজ হাসিল করবেন। কিন্তু তাঁর আশায় সেগুড়ে বালি।তাঁর আগের বছরের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এই এলাকার মানুষ ভেবেই নিয়েছিল রাতে তিনি কাজ সারবেন আর তাই তারাও নজরে রেখেছিল পরিস্থিতি। যেই না জেসিপি আসে সাথে সাথে নবগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ রুখে দাঁড়ায়। সেই সময় উপস্থিত হন ৪ নং ওয়ার্ডের পুরপিতা তথা সি আই সি বিভাস মুখার্জি সহ হিমাংশু দে, মিন্টু কুন্ডু, অরিন্দম দত্ত সহ অনেকে।যদিও ৫ নং ওয়ার্ডের পুরপিতা তরুণ কান্তি মন্ডল সেই সময় উপস্থিত ছিলেন না।পুলিশের সামনেই চলে তর্ক বিতর্ক। জোর প্রতিবাদের ফলে আবার ফিরে যেতে হয় রঞ্জিত মন্ডলের রাতের বাহিনীকে। পুলিশ জানায় আমাদের খবর দেওয়া হয়েছে এখানে খুব অশান্তি হচ্ছে তাই আমরা তিন গাড়ি পুলিশ নিয়ে এসেছি কিন্তু এখানে তো ঘটনা সম্পূর্ণ অন্য। পরদিন সকাল থেকে খুব উত্তেজিত নবগ্রাম অঞ্চলের মানুষ। তাদের বক্তব্য পুরসভার কোন অর্ডার ছাড়া কিকরে একজন পুরপিতা এরকম একটা অনৈতিক কাজ করতে পারেন। এর ফলে যদি উত্তেজনার বসে একটা ঘটনা ঘটে যেত তার দায় কি পুরপিতা রঞ্জিত মন্ডল নিজের ঘাড়ে তুলে নিতেন কারণ তিনি সকালে যে সাম্প্রদায়িকতার উষ্কানিমূলক কথা বলেছিলেন তাতে তো একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতেই পারতো। গোপন সূত্রে খবর বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম এই অনৈতিক কাজের খবর জানেন না, এমনকি পুরপ্রধানও জানেন না বা অনুমতি দেন নি। সোনারপুর উত্তর বিধানসভার সাংগঠনিক প্রধান নজরুল আলি মন্ডল নিজেও জানেন না যে রঞ্জিত মন্ডল রাতের অন্ধকারে এমন একটা কাজ করবেন। এখন প্রশ্ন, যদি এটা পুরসভার সিধান্ত অনুযায়ী হবে তবে কোন অনুমতি পত্র নেই কেন? আর যদি অনুমতি থাকবে তবে রাতের অন্ধকারে কেন? সারাদিনে কি তবে পুরসভার কন্ট্রাক্টারদের সময় হয়নি যেখানে বিধায়ক নিজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রাস্তা মেরামত করতে ব্যস্ত ছিলেন সারাদিন। যেখানে নজরুল আলি মন্ডল ৪ নং ওয়ার্ডের নিজে এসে পরিদর্শন করে গেছেন পরিস্থিতি তবে কেন এই চালাকি? ৫ নং ওয়ার্ডের পুরপিতা তরুণ কান্তি মন্ডল অনেকদিন ধরেই জানিয়েছেন যে প্রতিবছর বর্ষার সময় আশেপাশের ওয়ার্ডের অতিরিক্ত জল এই জলপোল দিয়ে স্বাভাবিকভাবে প্রবেশ করে ঝিল উপচে যায়। অন্যদিকে জল নিকাশির কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় না। এমনকি নরেন্দ্রপুর দিয়ে প্রচুর পরিমানে ৭ নং ওয়ার্ডের জল নিষ্কাসিত হওয়ার ফলে ৪ নং ও ৫ নং ওয়ার্ডের জমা জল যেতে পারে না। অনেক দেরীতে সেই জমা জল নিষ্কাশিত হয়ে যায় নরেন্দ্রপুর খালে। যদিও গতবছর রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তরের তৎপরতায় নরেন্দ্রপুর খাল সংস্কার ও প্রশস্ত হয়। এখন নবগ্রাম, শ্রীখন্ডা, রবীন্দ্রনগর, সরদার পাড়া, অবন্তিপুর, নবশ্রীবাজার অঞ্চলের একটা বড় অংশের মানুষের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে পুরপিতা রঞ্জিত মন্ডলের এই অনৈতিক ও অনিয়মিত কাজের প্রতি।বিধায়ক বা পুরসভার কোন অনুমতি ছাড়া নিজের মর্জিতে অন্য ওয়ার্ডের মানুষকে বিপদের মুখে ফেলে দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে বিশাল প্রতিরোধ শক্তি। তারা জানান, এবার যা হবার হবে কিন্তু এভাবে প্রতিবার অনৈতিক ভাবে নিজের ওয়ার্ডের জল নবগ্রাম দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে নিষ্কাশিত করতে দেওয়া যাবে না।এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনে জনরোষ তৈরি হবে।আবার কেউ জানান পুরপিতা নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে এই রাতের অন্ধকারে কাজ সারতে চেয়েছিলেন কারণ তাঁর ওয়ার্ডের মানুষের কাছে উন্নয়নের উত্তর দিতে পারছেন না।