রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল পৌরপিতা শিক্ষক অমরেশ করোনা আক্রান্তের ভয়ে অসহায় মানুষের পাশে থাকতে অস্বীকার করলেন
অম্বর ভট্টাচার্য, এবপিতকমা, সোনারপুর, ১২ই এপ্রিল ২০২০ : করোনার থাবায় সারা বিশ্বে কান্নার রোল পড়ে গেছে। আক্রান্তের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। অনেক পিছন থেকে আমেরিকা আজ মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যায় সবার উপরে। সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৮, ৩৭, ৩৯১ আর মৃত্যু হয়েছে ১, ১৩,২৭৪ জনের। এই করোনার থাবায় কত মানুষ বেঘর হল, কত পরিবার অসহায় হল, কত শিশু অনাথ হল তাঁর কোন হিসাব নেই। এই মুহুর্ত পর্যন্ত আমেরিকায় আক্রান্ত ৫,৫০,৬৫৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২১,৬৬৭ জনের। ইতালিতে আক্রান্ত ১,৫৬,৩৬৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৯,৮৯৯ জনের। স্পেনে আক্রান্ত ১,৬৬,০১৯ আর মৃত্যু ১৬,৯৭২। ফ্রান্সে আক্রান্ত ১,৩২, ৫৯১ আর মৃত্যু ১৪,৩৯৩ জন। ইংল্যান্ডে আক্রান্ত ৮৪, ২৭৯ এবং মৃত্যু হয়েছে ১০,৬১২ জনের। এছাড়া আরও প্রচুর দেশ তালিকায় আছে, আমরা শুধু প্রথম ৫টা দেশের পরিসংখ্যান দিলাম মাত্র। এদিকে ভারতেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত আর মৃত্যুর হার। ইতিমধ্যে ভারতে করোনায় আক্রান্ত ৭৪০৯ এবং মৃত্যু হয়েছে ২৭৩ জনের। দেশে আক্রান্তের নিরিখে সবার উপরে রয়েছে মহারাষ্ট্র ১৭৬১, দিল্লি ১০৬৯, তামিলনাডু ৯৬৯, রাজস্থান ৭০০, তেলেঙ্গানা ৫০৪, মধ্যপ্রদেশ ৫৩২, গুজরাত ৪৩২, অন্ধ্রপ্রদেশ ৩৮১, কেরালা ৩৬৪, কর্নাটক ২১৪, জম্মু কাশ্মীর ২০৭, পশ্চিমবঙ্গ ১৩৪।
এরকম অবস্থায় মানুষ যখন ঘর থেকে বাইরে আসতে পারছে না, মানুষের মধ্যে খাদ্যাভাবের আশঙ্কা, মানুষ করোনা জ্বরে আতঙ্কিত, মানুষের রোজগার নেই এমন সময় রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের পৌরপিতা শিক্ষক অমরেশ সরদার এই করোনায় আতঙ্কিত ও দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে অস্বীকার করলেন।সারা ওয়ার্ডে বিভিন্ন ক্লাব সংগঠন নিজস্ব এলাকার দুঃস্থ মানুষের পাশে যখন দাঁড়িয়ে খাদ্য সামগ্রী তুলে দিতে আগ্রহী তখন এই ওয়ার্ডের তৃণমূলের পৌরপিতাকে আমন্ত্রণ জানানোতে তিনি সাফ জানান তাঁর বয়স ৬০-এর বেশি তাই তিনি এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না। একইসাথে তিনি নাকি এমনও জানান করোনা ৬০ বয়সের বেশি মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হওয়ার প্রবণতা আছে তাই তিনি এই রোগে সংক্রামিত হতে রাজি নন। তিনি বাড়ি থেকে কোথাও যাবেন না। এতে ওয়ার্ডের কিছু মানুষ যেমন তাচ্ছিল্লের হাঁসি হাঁসছেন আবার একশ্রনীর মানুষ বেজায় চটে আছেন।
এই অবস্থায় নবপল্লী উন্নয়ন সমিতির পক্ষ থেকে দুবার এলাকার দুঃস্থ মানুষদের খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছে এবং সেখানে সোনারপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর সরকার উদ্যোগ নিয়ে এই ক্লাবের পাশে এসে দাঁড়িয়ে মানুষকে সাহায্য করেছেন। প্রথম পর্বে সমিতিত পক্ষ থেকে প্রায় ১০০ জনকে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে ফের প্রায় ২৫০ জনকে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। আবার সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয় অক্ষয়তৃতীয়ার দিন আরও প্রায় ১৫০ জনকে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু পৌরপিতা করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে গেলেন। এই নাকি একজন জনপ্রতিনিধির মানসিকতা যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বয়সের অনেক বেশি একজন মহিলা রাস্তায়, হাসপাতালে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন মানুষকে নিরাপদে ও সুস্থ রাখার জন্য। ইনি ফের দ্বিতীয়বারের জন্য তৃণমূলের প্রার্থী হবেন বলে নিজের স্ত্রীর নাম নিজেরই পৌরপিতার প্যাডে সুপারিশ করেছেন বলে খবর। সেই সুপারিশে ওয়ার্ডের মাত্র ছয়জন ব্যক্তির স্বাক্ষর রয়েছে। এমন আচরণের পরও এই ওয়ার্ড মহিলা হওয়ার কারণে তাঁর নিজের স্ত্রীর নাম সুপারিশ করার ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারলেন? প্রশ্ন অনেকের। সোনারপুর উত্তর বিধানসভার মহিলা বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম নিজের জীবনকে বাজি রেখে গোটা বিধানসভায় অসহায় মানুষদের অবিরাম পাশে থাকছেন সেখানে একজন সমাজ গড়ার কারিগর বলছেন করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন তাই যাবেন না! সোনারপুর উত্তর বিধানসভার ১৫টা ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধিরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন মানুষের পাশে সহায় হতে। তবে কি তাদের জীবনের কোন ভয় নেই?