রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার পিছিয়ে পড়া ওয়ার্ড ৩৫ নং ওয়ার্ডে বিতরণ হল দুই শতাধিক পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী
নিজস্ব প্রতিনিধি, তকমা, সোনারপুর, ২৯শে জুলাই ২০২১ : আমফান থেকে কোভিড – বিভিন্ন সময়ে ও লকডাউনের দিনগুলোতে রানিয়ার মানুষ যাঁকে পান – চিরকাল সেই প্রচার বিমুখ মানুষ হলেন দেবাশিস দাশ। আজ তিন দিন ব্যাপী ভরা বর্ষায় জলমগ্ন রানিয়ার ৩০ ফুট রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের হাতে বহু খাদ্য সামগ্রী তুলে দিলেন দেবাশিস দাশ ও তাঁর সমাজসেবী সংগঠন রানিয়া ক্লাব সমন্বয় সমিতি । ক্লাব সমন্বয় সমিতির অন্যতম কর্ণধার পূর্ণেন্দু পাহাড়ি, শ্রী রাহুল সাহা ও সম্পাদক শশাঙ্ক মিশ্র উপস্থিত ছিলেন। প্রতি পরিবারকে দেওয়া হয় – ৫ কেজি মিনিকিট চাল, ১ কেজি চিড়ে, আড়াই কেজি আলু, ৫০০ গ্রাম মুসুর ডাল, ২৫০ গ্রাম সয়াবিন, ২৫০ গ্রাম ব্রিটানিয়া বিস্কুট, ৫০০ মিলি আমূল দুধ । এই ত্রাণ সামগ্রী পেয়ে রানিয়াবাসী অত্যন্ত খুশী । ত্রাণ গ্রহীতারা বলেন, এই ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য সামগ্রী এই প্রথম রানিয়া অঞ্চলের মানুষ পেলেন ।
লকডাউনের ফলে বহুমানুষের কাজকর্ম চলে যায়। খাদ্যসামগ্রী নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে এক ষাটোর্ধ বৃদ্ধ জানালেন – একসময়ে অভাব অনটনহীন তাঁদের পরিবারে কোনোদিন খাদ্যের সমস্যা ছিল না । তাঁর একমাত্র ছেলের কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায় গতবছর মে মাসে। সেই থেকে জমানো টাকায় তাঁদের সংসার চলছিল। এখন সংসারে তাঁর বড়ো অভাব চলছে। বৃদ্ধ চোখ মুছে জানালেন – এইভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে হবে কোনোদিন ভাবি নি । মা-মাটি-মানুষের সরকারের রেশনের চাল পাচ্ছেন কিনা , প্রশ্ন করা হলে বৃদ্ধ জানালেন – পুরনো রেশন কার্ড ছিল, কিন্তু ডিজিটাল হয় নি । পুরনো রেশনকার্ড টালিগঞ্জ রেশন অফিসে জমা দিয়ে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়ে সোনারপুরের রেশন অফিসে জমা করে বহু বার দৌড়েছেন । দুয়ারে সরকারের প্রথম কর্মসূচিতেও রানিয়াতে খাদ্যসাথীর জন্য আবেদন করেছেন ।
কিন্তু এখনও বৃদ্ধের পরিবারে রেশনকার্ড পৌঁছায় নি । এই ত্রাণ বিতরণে লাইনে দাঁড়ানো বহু মানুষ জানালেন যে, তাঁদের রেশনকার্ড ডিজিটাল রেশনকার্ড না হওয়ায় মমতা ব্যানার্জির খাদ্য সাথীর সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত। ত্রাণসামগ্রী বিতরণের মূল উদ্যোক্তা ও সভাপতি দেবাশিস দাশ, একজন রাজ্যের শাসকদলের ঐ অঞ্চলের একজন বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। তাঁকে ঐ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের এই দুর্দশার কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান – রানিয়া তে বহু মানুষের ডিজিটাল রেশনকার্ড নেই – এটা বাস্তব । কিন্তু গতবছর লকডাউনের সময় স্হানীয় বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম মহাশয়ার সহযোগিতায় রানিয়াতে যাদের রেশনকার্ড ছিল না , তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশী মানুষের রেশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বহু মানুষ রেশনকার্ড পেয়ে গেছেন বলে দেবাশিস বাবু জানালেন । এই ত্রাণ শিবিরে অশীতিপর বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের ত্রাণ নিতে দেখা গেল।