রজত জয়ন্তী বর্ষে আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবে ফোকাস দেশ জার্মানি, ৭৬ টি দেশের ২১৪টি ছবি, সরকারের বিশেষ উদ্যোগ থাকছে শিশুদের ছবি, ৫টি না শোনা ভাষার ছবি
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ১লা নভেম্বর ২০১৯ : ২০১৯ সাল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবের ২৫ তম বর্ষ। এই বছর উৎসবের ফোকাস দেশ “জার্মানি”। চলচিত্র উৎসব শুরু হবে ৮ই নভেম্বর চলবে ১৫ই নভেম্বর পর্যন্ত। এবছর রাজ্য সরকার বিশেষ কতগুলো উদ্যোগ নিয়েছে যেমন সিনেমা প্রেমীদের জন্য একই ভাবে শিশুদের জন্য। ১৪ই নভেম্বর শিশু দিবসে রবীন্দ্র সদন চত্বরে জায়েন্ট স্ক্রিন লাগিয়ে জার্মানি বেশ কিছু ছবি দেখানো হবে, এছাড়া শিশির মঞ্চে থাকবে শিশুদের জন্য ৪টি ছবি। এবছর ৭৬টি দেশ থেকে মোট ২৪৯২টি ছবি মনোনয়নের জন্য জমা পড়ে যার মধ্যে ২১৪টি ছবি দেখানো হবে। এছাড়া ৯৭টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি থাকবে এবং ৫৫টি তথ্যচিত্র থাকবে। আজ শিশির মঞ্চে ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, রাজ্যের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, অভিনেতা পরমব্রত চ্যাটার্জি, অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক, নির্দেশক রাজ চক্রবর্তী, বিবেক কুমার, নৈরঞ্জনা ভট্টাচার্য এবং ম্যাক্স মুলার ভবনের ফ্রিস্কো ম্যাকার। অনুষ্ঠানে অরূপ বিশ্বাস রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নাম করে বলেন, আজ মমতা ব্যানার্জির উদ্যোগেই এই উৎসব বিশ্বে একটা জায়গা করে নিয়েছে।
তাঁর অনুপ্ররণায় এত দেশের অংশগ্রহণ এবং বাংলার সৃষ্টি ও কৃষ্টি সারা বিশ্বের কাছে আমরা পৌঁছে দিতে পারছি। মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উদ্যোগে শিশু দিবসকে সামনে রেখে শিশুদের অন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিখ্যাত চিত্র পরিচালক বাসু চ্যাটার্জিকে বিশেষ সম্মান জানিয়ে এবছর তাঁর ৪টি ছবি প্রদর্শিত হবে। এছাড়া বিশেষ সম্মান প্রদান করে বারনার্ডো বেরতোলুসি-র ৬টি ছবি, মৃণাল সেন, গিরিশ কারনাদ, মহঃ জাহুর খাইয়াম, স্বরূপ দত্ত, চিন্ময় রায়, বিদ্যা সিনহা ও রুমা গুহ ঠাকুরতার ছবিও দেখানো হবে। শতবর্ষ সম্মান দেখানো হবে গিলো পন্টেকার্ভো (ইতালি), মান্না দে, জহর রায়, অরবিন্দ মুখার্জি ও করুণা ব্যানার্জি-র উদ্দেশ্যে। রেট্রোস্পেক্টিভ দেখানো হবে অ্যালেক্সজেন্ডার ক্লুজ (জার্মানি) ও ডুসান হানাক (স্লোভাকিয়া)। এবছর প্রথমবার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ২টি ৩ডি সিনেমা প্রদর্শনে এবং ১০টি ৩৫ মিমি প্রজেকশনের মাধ্যমে ১০টি ছবি দেখানোর জন্য যার মধ্যে থাকছে ২টি জার্মানি, ৬টি ইতালি ও ২টি ভারতীয় ছবি, দেখানো হবে শিশির মঞ্চে ও চলচিত্র শতবার্ষিকী ভবনে। মোট ১৭টি প্রক্ষাগৃহে এই ছবি দেখানো হবে যার মধ্যে এবছর নতুন সংযোজন হয়েছে বিজলি, মিনার, রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন, অজন্তা সিনেমা ও চলচিত্র শতবার্ষিকী ভবন।
বিবেক কুমার বলেন, সত্যিই এই চলচিত্র উৎসব প্রতি বছর নিজেকে আরও উন্নত করে সাজাচ্ছে এবং পূর্ববর্তী বক্তা মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন ও রাজ চক্রবর্তী ইতিমধ্যেই বলেছেন সম্ভবত এই চলচিত্র উৎসব গোটা বিশ্বে সেরা ছবি ও সেরা নির্দেশককে যে অঙ্কের আর্থিক পুরস্কার দিয়ে থাকে তা আর কোথাও দেওয়া হয় না। এবছর সেরা ছবি পাচ্ছে রয়্যাল বেঙ্গল গোল্ডেন টাইগার ট্রফি ও ৫১ লাখ টাকা এবং সেরা নির্দেশক পাচ্ছেন রয়্যাল বেঙ্গল গোল্ডেন টাইগার ট্রফি ও ২১ লাখ টাকা পুরস্কার। এখানেই শেষ নয়, সেরা স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি পাচ্ছে গতবারের ১লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৫ লাখ টাকা এবং সেরা তথ্যচিত্র গতবারের ১লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৩ লাখ টাকা পাচ্ছে। এছাড়া ভারতীয় ভাষায় তৈরি সেরা ছবি পাচ্ছে ৭ লাখ টাকা ও সেরা নির্দেশক ৫ লাখ টাকা সাথে হীরালাল সেন মেমোরিয়াল ট্রফি। ফ্রিস্কো ম্যাকার বলেন, এবছর জার্মানি থেকে ৫০টি ছবি অংশগ্রহণ করছে। এবছর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভারতের না শোনা ভাষার বেশ কিছু ছবি দেখানো হবে যার মধ্যে থাকছে পোরো, বাঞ্জার, তুলু সহ ৫টি ভাষা।সব শেষে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবের থীম সং, রজত জয়ন্তী বর্ষের লোগো এবং বিজ্ঞাপনী প্রচার প্রকাশিত হয়। একইসাথে বিশেষ পুরস্কার “রয়্যাল বেঙ্গল গোল্ডেন টাইগার ট্রফি” উন্মচিত হয়।
সব শেষে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানান, এই চলচিত্র উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার নন্দন প্রেক্ষাগৃহকে নতুন করে সাজিয়ে তুলেছে যা দেখার মত।