পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪ আসনেই লড়বে লোক জনশক্তি পার্টি
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২১। : লোকজনশক্তি পার্টি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪টি বিধানসভাতে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। লোকজনশক্তি পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি মীরা চক্রবর্তী শুক্রবার প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন “পশ্চিমবঙ্গে ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈশ্যর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৭%, O.B.C, S.T, S.C-র সংখ্যা প্রায় ৫৩% আর মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ আছেন প্রায় ৩০%। কিন্তু বিধায়ক সংখ্যার বিচারে এই বিপুল সংখ্যক দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করার সংখ্যাটা খুবই নিতান্ত। আমাদের স্বর্গীয় রামবিলাস পাসোয়ানজি চেয়েছিলেন দলিত উত্থান সমগ্র ভারতবর্ষে। পশ্চিমবঙ্গে যা আজ অবধি হয়ে উঠতে পারেনি।”
মীরা চক্রবর্তী ছাড়াও এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পার্টির সভাপতি পরিমল চন্দ্র বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক রিক যাদব, সেলিম মোল্লা, যুবসভাপতি জয় রায়, মহিলা সভানেত্রী কল্পনা সেন, মাইনরিটি প্রেসিডেন্ট ইকবাল মোল্লা, পার্টির সোহো সভাপতি চন্দন রানা, সাধারণ সম্পাদক ভীম পাত্র এবং প্রদীপ দাস। কোষাধ্যক্ষ অসিত ঝা, বিনীত চক্রবর্তী ইত্যাদি, জেলা সভাপতিগণ। এই কনফারেন্সে রামবিলাস পাসোয়ানজিরও লোক লোক জনশক্তি পার্টির মত ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিভিন্ন দল ও সমাজসেবী সংগঠন বিভিন্ন জেলা হতে প্রায় শতাধিক নেতা ও কর্মীবৃন্দ যোগদান করেছে।
“আমরা লোক জনশক্তি পার্টি চেয়েছিলাম পশ্চিমবঙ্গে দলিত নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ যাতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল হয়েছে। তাতে ৫,২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। যেখানে চাকরি হয়েছে মাত্র ৮০০ জনের। তারমানে ১৩ কোটি টাকার বিনিময়ে একটা মানুষের চাকরি হয়। কিন্তু আমরা যদি বলি স্মলস্কেল ইন্ডাস্ট্রি বা মিডিয়ামস্কেল ইন্ডাস্ট্রি করা হয় তাহলে এক কোটি টাকার বিনিময়ে ৩ জনের চাকরি হয়। পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার এক কোটি ৮৭লক্ষ মানুষ বেকার।” জানালেন মীরা চক্রবর্তী।
তিনি আরও জানান “দুঃখের সঙ্গে আমাদের বলতে হচ্ছে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বলেছেন আগের বছর ৭০০ কোটি টাকার মত আবগারি শুল্ক পাওয়া গিয়েছিলো। এবছর জানুয়ারিতে রাজ্যে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার আবগারি শুল্ক পাওয়া গেছে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে রাজ্যে মদ্যপের সংখ্যা কতটা বেড়েছে। রাজনৈতিকভাবে এরা অরাজনৈতিক দস্যুবৃত্তির কাজ করছে। তার প্রমাণস্বরূপ বলা যায় সেখানে ভারত সরকার প্রাধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য যে টাকা বরাদ্দ করা হয় সেখানে পঞ্চায়েত দস্যুদের দৌলতে কাটমানি দেওয়ার পরে
হাতে আর কিছু থাকে না। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে দুয়ারে সরকার। রাজ্যের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। এর প্রত্যেকে যদি স্বাস্থসাথী কার্ডের দু’লক্ষ টাকা করেও সুবিধা পায় তাহলেও ২ হাজার কোটি টাকা লাগবে। কিন্তু সার্বিক যায় অনেক কম সরকারের। এটা সম্পূর্ণরূপে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বোকা বানানো। আরও একটি ব্যাপার হল গত বামফ্রন্ট সরকার ২ লক্ষ কোটি টাকা দেনা করে গেছে ৩৪ বছরে। কিন্তু বর্তমান সরকার ১০ বছরে ৩ লক্ষ কোটি টাকা দেনা করেছে। ৫ লক্ষ কোটি টাকার দেনা-গ্রস্ত বর্তমান রাজ্য সরকার আবার কৃষিনীতির কথা বলে। ভারত সরকার খাদ্যশষ্যে এম.এস.পি রেট করেছে প্রতি কুইন্টাল ১৮৬৮ টাকা। পশ্চিমবঙ্গে ৯০% কৃষক প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র। কৃষকজন প্রতি জমির পরিমাণ মাত্র সাত কাটা। সেক্ষেত্রে হরিয়ানা, পাঞ্জাবের কৃষকদের জমির পরিমাণ গড়প্রতি ২ থেকে ৩ একর জমি। পশ্চিমবঙ্গের চাষিদের স্বল্প জমিতে সামান্য যা চাষ হয় তারা খড়ের দর্মায় কুইন্টাল প্রতি ৪০০ টাকা কমে বিক্রি করে কারণ তাদের বড় বড় বাজারে গিয়ে বিক্রি করার ক্ষমতা নেই। নতুন কৃষি নীতি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার গভঃ সেন্ট্রাল পার্চেসিং ক্যাম্প খুলেছে তাতে চাষিরা এম.এস.পি-র উপরে আরও ২০টাকা বেশি দাম পাচ্ছে। ভারতবর্ষের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে ২৬টি রাজ্য এই নতুন কৃষি আইন নিয়ে আন্দোলনে যায়নি। গিয়েছে শুধুমাত্র পাঞ্জাব আর হরিয়ানা। কিন্তু আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষকদের প্রতি তাঁর নৈতিক সমর্থন রয়েছে। এটাকি পশ্চিমবঙ্গের চাষিদের প্রতি বঞ্চনা নয়? আমরা লোকজনশক্তি পার্টি ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। কার নাম রাম বা রহিম এটার আমাদের কাছে কোনও গুরুত্ত্ব নেই। আমরা চাই মানুষের মধ্যে সততা, চাই সুস্বাস্থ্য এবং সমস্ত মানুষের যোগ্যতা অনুযায়ী সুউপার্জনের ব্যবস্থা। তাই বর্তমান রাজ্য সরকারের আমরা বদল চাই কারণ রাজ্যের স্বার্থে চালু হোক গণ স্বার্থরক্ষা। পরিবারতন্ত্র মজবুত করার আমরা ঘোর বিরোধী।” জানালেন মীরা চক্রবতী।