রূপকথায় মাতহারা সুগার অ্যান্ড স্পাইসের ৩১তম বার্ষিকি অনুষ্ঠান
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ২৫শে জানুয়ারি ২০২০ : ৩১ বছর আগে কেকের দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন কাশিমবাজার রাজবাড়ির রাজনন্দিনী সুপ্রিয়া রায় হরিশ মুখার্জি রোডের ছোট্ট একটা শো-রুম থেকে। ইতিহাসের পাতায় কাশিমবাজার রাজবাড়ির অনেক কথাই আজও অজানা। ইংরেজ শাসকেরা তাদের সম্পত্তি নিয়ে নিয়েছিল, শুরু হয়েছিল টানাপড়েন। কিন্তু সুপ্রিয়া রায় যেদিন থেকে এই রাজবাড়িতে পা রেখেছিলেন সেদিন থেকে রাজবাড়ির অন্দরমহলটা একটু একটু করে বদলাতে শুরু করে। কাশিমবাজার রাজবাড়িতেও একসময় সুপ্রিয়া রায় “সুগার অ্যান্ড স্পাইসের” প্যাকেজিং ইউনিট শুরু করলেও রাজনৈতিক কারণে তা বন্ধ করতে বাধ্য হন। সুপ্রিয়া রায় প্রথম সাধারণ মধ্যবিত্ত্ব ও নিম্নমধ্যবিত্ত্ব পরিবারের মধ্যে কেক ও প্যাস্ট্রির স্বাদ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। এর আগে শুধু উচ্চ ও উচ্চ মধ্যবিত্ত্ব পরিবারকে হাতে গোনা দু-একটা কেকের দোকান থেকে কেক বা প্যাস্ট্রি কিনতে দেখা যেত। কিন্তু সুপ্রিয়া রায় সেই স্বাদ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলার সাধারণ পরিবারের মধ্যে।আজ থেকে ৩১ বছর আগে খুবই কম পয়সায় তিনি কেক ও প্যাস্ট্রি বাজারে এনেছিলেন।
একজন বাঙালি মহিলা হিসাবে তিনি প্রথম নিজেকে শিল্পপতি করে তুলতে লড়াই শুরু করেন।আমি নিজের চোখে সুপ্রিয়া রায়কে দেখছি প্রায় ২০ বছর হয়ে গেল। তিলতিল করে হরিশ মুখার্জি রোডের কারখানা থেকে একের পর এক ছোট ছোট গাড়ি ছুটতে শুরু করল প্রথমে কলকাতার আনাচে কানাচে তারপর বাংলার বিভিন্ন জেলাতে। ইতিমধ্যে তিনি মহিলা শিল্প উদ্যোগী হিসেবে বহু সম্মান ও পরস্কার লাভ করেছেন।সাম্প্রতিক সংস্থার ৩১ বছর পূর্তীতে সংস্থার সব কর্মচারী ও তাদের পরিবার এবং সুগার অ্যান্ড স্পাইসের সঙ্গে যুক্ত অগুন্তি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এক মিলন উৎসবের আয়োজন করা হয় মধ্য কলকাতার এক আভিযাত্যপূর্ণ কমিউনিটি হলে।
অনুষ্ঠানে সংস্থার কর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন বিভাগে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান জানানো হয়, নাচে গানে মেতে ওঠে বর্ষ পূর্তী মিলন উৎসব। সুপ্রিয়া রায় ব্যবসা ছাড়াও যে সমাজসেবার সাথে নিজেকে যুক্ত রাখতে চান তার নজির সৃষ্টি করেন এদিনের সন্ধ্যায়। “রূপকথা” নামে তাঁর একটা প্রয়াস উপহার দেন সকলের সামনে। সমাজের পিছিয়ে থাকা শিশুদের সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।এই সন্ধ্যায় সেইসব শিশুরা মঞ্চে নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এব্যাপারে সুপ্রিয়া রায় বলেন, সমাজের অনেক প্রতিভা অর্থের অভাবে হারিয়ে যায় তাই আমি এই “রূপকথা” সৃষ্টি করেছি যেখান থেকে অর্থের অভাবে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে উন্মোচন করা যাবে। তারাও তাদের সেই সুপ্ত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করতে পারবে।
সংস্থার ডিরেক্টর পল্লব রায় জানান, আমি এই রাজবাড়ির ১০ম পুরুষ। এই রাজবাড়ি ১৭৩০ সালে প্রতিষ্টিত হয় কিন্তু কালের সাথে এই রাজবাড়ি প্রায় পরিত্যাক্ত হয়েছিল পড়েছিল।এবার সেই রাজবাড়িকে বিভিন্ন ভাবে মেরামত করে সংরক্ষণ করা হয় এবং আজ তা মুর্শিদাবাদের একটা অন্যতম দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। “সুগার অ্যান্ড স্পাইস” আজ একটি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠার নেপথ্য রয়েছে বহু অজানা সংগ্রাম, বহু ত্যাগ ও প্রতিযোগিতার টানাপড়েন। আমাদের দুটি হোটেল রয়েছে, একটা কালিপঙ অন্যটি হোমস্টে কাশিমবাজার রাজবাড়ি। কলকাতা থেকে আমরা রয়্যাল বাসে মানুষকে মনোরম পরিবেশে কাশিমবাজার রাজবাড়ি পরিদর্শনের জন্য নিয়ে যাই, সেখানে তাদের থাকা ও আহারের ব্যবস্থা আছে এবং মুর্শিদাবাদ ও আজিমগঞ্জ পরিদর্শনের ব্যবস্থা আছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সুপ্রিয়া রায় বলেন, সুগার অ্যান্ড স্পাইস আজ একটা যৌথ পরিবার, সংগ্রামের পরিবার, হাসিখুশি পরিবার। আজ ৩১ বছর হয়েছে মানে এখানেই শেষ নয়, আমাদের আরও উন্নত পরিষেবা দিতে হবে, আরও মান উন্নত করতে হবে, আরও এগিয়ে যেতে হবে। সব শেষে সংস্থার ৩১ বছর পূর্তীতে স্বপরিবারে প্রায় ৪ কেজির একটা কেক কেটে বর্ষ পূর্তীকে আরও উৎসব মূখর করে তোলেন রায় পরিবারের সদস্য ও সদস্যারা। এই অনুষ্ঠানে সুপ্রিয়া রায় নাতি যুবরাজ সৌরভের বিবাহের দিন ঘোষণা করেন এবং সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য নিমন্ত্রণ করেন।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ির নতুন সদস্যা আরেক রাজনন্দিনী।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার ডিরেক্টর প্রশান্ত কুমার রায় ও সুদেষ্ণা রায়।