কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য ছাড়াই সারা দেশে আলো নিভিয়ে দ্বীপ জ্বালানোর সাথে বাজি ফাটিয়ে প্রধানমন্ত্রী ফের একবার প্রমাণ করলেন “মুর্খ ভারতবাসী”, বাড়ল দূষণ
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ৫ই এপ্রিল ২০২০ : বিবেকানন্দ কখনও বলেছিলেন “মুর্খ ভারতবাসী, চন্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই, আমার রক্ত”। সেই কথাকেই ফের বারবার প্রধানমন্ত্রী মান্যতা দিয়ে প্রমাণ করে দিলেন যে আমরা আজও কতটা মুর্খ, কতটা অশিক্ষিত, কতটা কূসংস্করাচ্ছন্ন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশবাসীকে আবেদন করেছিলেন “মানব কার্ফু” করতে সাথে চিকিৎসক ও নার্সদের অবিরল পরিশ্রমের জন্য উৎসাহের জন্য হাততালি দিতে। এই আবেদনের একটা যুক্তি ছিল। কিন্তু থালা বাজানোর পিছনে কি যুক্তি ছিল তা হয়তো প্রধানমন্ত্রী নিজেও জানেন না। অনেকে বলেছেন এই থালা বাজানোর মাধ্যমে করোনা ভাইরাস পালিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই পদ্ধতিতে লড়াই করতে হবে। আবার আজ প্রধানমন্ত্রী আবেদন করেছেন রাত ৯টায় ৯ মিনিটের জন্য সকলে নিদের ঘরের আলো নিভিয়ে মোমবাতি, প্রদীপ, মোবাইলের ফ্ল্যাস লাইট, টর্চ ঘরের বাইরে জ্বালিয়ে রাখতে। এর পিছনে তিনি যুক্তি দেন, সারা ভারত ঐক্যবদ্ধ হয়ে করোনার বিরুদ্ধে শক্তি সঞ্চয় করতে। যে দেশে মানুষ এই পরিস্থিততে লকডাউন অবস্থায় খেতে পারছে না, যেখানে অসংখ্য মানুষের রোজগার বন্ধ সেখানে তিনি বলছেন হাতে মোমবাতি, প্রদীপ ধরতে। তবে কি তিনি ইঙ্গিত দিতে চাইছেন যে আগামীদিনে ভারতীয়দের হাতে হারিকেন ধরতে হবে।
এছাড়া সারা দেশে এই ৯ মিনিট ধরে অসংখ্য বাজি ফাটল। কেন ফাটল? কোন উত্তর নেই কেন্দ্র প্রশাসনের কাছে। কারা ফাটালো? এরও কোন উত্তর নেই কেন্দ্রের কাছে। সারা দেশ যখন লকডাউন সেখানে এত বাজি এল কোথা থেকে? কারা কিনলো এই বাজি আর কোথা থেকে? তারও কোন সদুত্তর নেই কেন্দ্রের কাছে। লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে দেশের দূষণের মাত্রা অনেক কমে গিয়েছিল যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য অনেকটা বদলেছিল। কিন্তু এই বাজি ফাটানোর মধ্যে দিয়ে পরিবেশে ফের দূষণ বাড়ল।এর দায়ভার কি প্রধানমন্ত্রী নিজের উপর নেবেন? এই বাজি ফাটানর মধ্যে দিয়ে করোনার শক্তি বৃদ্ধি পেলে তার দায়ভার কি প্রধানমন্ত্রীর? প্রশ্ন অনেকের। বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে কয়েক লক্ষ হাজার ডলার পেলেন প্রধানমন্ত্রী, এছাড়া দেশের বহু সংস্থা করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য মুক্ত হস্তে আর্থিক দান করেছেন, অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি, অভিনয় জগতের মানুষ, ক্রীড়া জগতের মানুষ, সংস্কৃতি জগতের মানুষ আর্থিক দান করেছেন যা দিয়ে করোনা মোকাবিলার জন্য পরীক্ষার কিট প্রদান করা সম্ভব হত। তাতে সংক্রামিত মানুষকে নির্নয় করা সম্ভব হত, চিকিৎসা হত। কালোবাজারি টাকা তো আজও পর্যন্ত উদ্ধার করে মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রতিশ্রুতি দিয়েও দিতে পারেন নি প্রধানমন্ত্রী।এই পরিস্থতিতে সারা দেশে মোমবাতি বা প্রদীপ না জ্বালিয়ে তিনি তো সকলের ব্যাঙ্কে কিছু টাকা দিতে পারতেন।তাতে তো যে সব মানুষরা খাদ্যহীন অবস্থায় বাড়িতে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন, খেয়ে বাঁচতো।
এবার যদি একবার রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় তবে মোমবাতি বা প্রদীপ কারা জ্বালায়?
সাধারণত হিন্দুরা। আর সেই জায়গাটাতে প্রধানমন্ত্রী সুড়সুড়ি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন এটা হিন্দু রাষ্ট্র। এই পরিস্থিতিতেও তিনি হিন্দু মুসলিম বিভেদকে উষ্কে দিলেন একবার।তিনি জাহির করতে চাইলেন ভারতের কত শতাংশ মানুষ তাঁর পক্ষে এখনও এই পরিস্থিতিতে সাথে আছেন। এই রাজনীতি কবে বন্ধ হবে? মহামারীতেও রাজনীতি পিছু ছাড়ছে না।ফিরে আসতে হয় সেই বিবেকানন্দের কথায় ” মুর্খ ভারতবাসী, চন্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই, আমার রক্ত” তাই বলি সকলে মিলে করোনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হাতে মোমবাতি ধরো, প্রদীপ জ্বালো, ঘরের আলো নিভিয়ে দাও। মানে সামনে ভারতের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে চলেছে তাই মোমবাতি জ্বেলেই আমাদের হয়তো বাঁচতে হতে পারে।এর আগে ইতালিতে করোনার জন্য থালা বাজিয়েছিল আর তার পরিনাম হয়েছে আজ করোনায় সব থেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে, ১৫৩৬২ এবং আক্রান্ত ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৩২। হায়রে ভারতবাসী কোথায় আমরা আজ বাস করছি?