অ্যাপোলো হাসপাতালে প্রেসিডেন্ট ডাঃ হরি প্রসাদের লেখা “আই এম পসিবল” রোটারির শতবার্ষিকীতে তুলে দেওয়া হল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ মন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের হাতে
নিজস্ব প্রতিনিধি, এবিপিতকমা, কলকাতা, ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ : ‘আই’ম পসিবল’ সেই ছেলেটির গল্প যে নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠেছিল। তবু ভাগ্যের ফেরে তাকে জীবনের সংকীর্ণ অলি গলি চিনে নিতে হয়েছিল। কিন্তু সব সত্তেও সে উঠে দাঁড়িয়েছিল, অমলিন। অ্যাপোলো হাসপাতাল গোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট ডাঃ হরি প্রসাদের লেখা এই বইতে মুখবন্ধ লিখেছেন অ্যাপোলো হাসপাতাল গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ডাঃ প্রতাপ সি রেড্ডি। বইয়ের লেখক পরিচিতি লিখেছেন ব্যাডমিন্টনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পি ভি সিন্ধু।
ডাঃ হরি প্রসাদ একজন খুবই জনপ্রিয় মানুষ। দেশের অন্যতম বৃহৎ স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসাবেই তিনি শুধু পরিচিত নয়। বরং একদা ক্রিকেট তারকা হিসাবেও তাঁর বেশ খ্যাতি ছিল। রঞ্জি ট্রফিতে তাঁর ডেবু হয়েছিল মহম্মদ আজহারউদ্দিনের সঙ্গে। তা ছাড়া তিনি যাঁদের সঙ্গে খেলেছেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রবাদপ্রতীম বহু ক্রিকেটার—এমভি নরসিংহ রাও, এল শিবরামকৃষ্ণণ, ডব্লিউ ভি রমন, সাদ বিন জঙ প্রমুখ।
‘আই’ম পসিবল’-এ চালচিত্রে ধরা রয়েছে ডাঃ হরি প্রসাদের অবিশ্বাস্য অনবদ্য জীবন কাহিনি। যে কাহিনী কিছুটা রূপকথার মতোই। স্কুলের গড়পরতা এক ছাত্র থেকে ক্রিকেট তারকা হয়ে ওঠা, মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য আইনি লড়াই থেকে দুম করে হঠাৎই ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়া, অতি অল্প বয়সে এক তরুণীর প্রেমে পড়ে যাওয়া ও তাঁর সঙ্গে সাতপাক ঘুরে গাঁটছড়া বাঁধা,আবার চিকিৎসক হিসাবে নামডাক হওয়ার পর হঠাৎই একদিন প্র্যাকটিস ছেড়ে দেওয়া। এই রূপকথার বহু স্তর। এক জন ফিট স্পোর্টসম্যান হওয়া সত্ত্বেও তামাকে আসক্ত হয়ে পড়ার মতো বৈপরীত্য যেমন রয়েছে এই জীবন-গল্পে, তেমনই রয়েছে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ফিরে আসার কাহিনিও, যা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বহু মানুষকে।
বইয়ের লেখক পরিচিতিতে পি ভি সিন্ধু লিখেছেন, ডাঃ হরি প্রসাদের জীবনে সমস্ত অপ্রত্যাশিত ঘটনাই যেন খুব স্বাভাবিক ভাবে এসেছে। কিন্তু যত কঠিন ও জটিল পরিস্থিতিই হোক না কেন, তিনি খুবই শান্ত মাথায় প্রত্যয়ের সঙ্গে তা মোকাবিলা করেছেন। জীবনে যা কিছু তিনি করেছেন, তা করেছেন খুবই আবেগতাড়িত ভাবে, তা সে ক্রিকেট খেলা হোক, পড়শুনা হোক, কিংবা কাজ বা পরিবারের ব্যাপারে যত্নশীল থাকা। প্রতিটি বিষয়ে তাঁর দায়বদ্ধতা ও নিষ্ঠা ছিল প্রশ্নাতীত। তাঁর জীবনের দর্শনই হল ষোল আনা বাঁচা আর নতুনের সন্ধান করা। তাঁর সময়ে খুবই সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। মহম্মদ আজহারউদ্দিন, আরসাদ আয়ুব, নরসিংহ রাওদের মতো কিম্বদন্তী ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলেছেন তিনি। আবার তাঁর ক্রিকেটীয় কেরিয়ার যখন মধ্যগগণে তখন পড়াশুনার জন্য রাতারাতি খেলা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার একজন প্র্যাকটিসিং অ্যানাস্থিসিস্ট হিসাবে যখন তার বেশ নাম ডাক, তখন হঠাৎই তা ছেড়ে বসে পড়েছেন। একটা সময়ে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁর জীবনে প্রায় অন্ধকার নেমে এসেছিল। এমনটা যেন তাঁর গোটা জীবন জুড়েই হয়েছে। যখনই কোনও বিষয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন, একটু স্থিতধি হয়েছেন, হঠাৎই পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। পরিবর্তন তাঁর জীবনে যেন সতত বাস্তব। অথচ সেই পরিবর্তনের মোকাবিলায় যে মানসিক দৃঢ়তা ও উদ্যম দেখিয়েছেন তা সকলেরই জন্যই শিক্ষার বস্তু, তা তিনি যে বয়সের বা যে পেশার সঙ্গে যুক্ত হন না কেন।
ডাঃ প্রতাপ সি রেড্ডি বলেছেন, এখানে যাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে সবাই এক বাক্যে হরির সুখ্যাতি করেছেন। ওঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় ২৩ বছর আগে। উনি এমন একটা ইমার্জেন্সি তথা জরুরি পরিষেবা ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন যা গোটা বিশ্বে তার আগে হয়নি। ভারতে স্বাস্থ্য পরিষেবায় সেই ইমার্জেন্সি ব্যবস্থা একটা মডেল। তবে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম ওর উদ্যম ও ক্ষমতা দেখে—এমন কিছু করে দেখানোর ক্ষমতা যা স্বাস্থ্য পরিষেবায় বড় ধরনের মাইলফলক তৈরি করে দিতে পারে। ওঁকে আরও অনেক কিছু করে দেখাতে হবে, একটি ভাল প্রতিষ্ঠানকে রূপান্তরিত করতে হবে একটা মহান প্রতিষ্ঠানে।
ডাঃ হরি প্রসাদ বলেন, সবার মতোই আমার জীবনেও চড়াই উতরাই ছিল। প্রবাদ রয়েছে, ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা নেয়। আমিও ভুল থেকেই শিক্ষা নিয়েছি। এই বই আমার সমস্ত রকমের ভুল ও সেগুলির থেকে নেওয়া সব শিক্ষারই একটা সংকলন। আমার জীবন কখনওই সরলরেখায় চলেনি, তা হেঁটেছে আঁকাবাঁকা পথে। খুব সততার সঙ্গেই সমস্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছি এই বইয়ে। এই বইয়ের মূল লক্ষ্যই হল পাঠকদের সেই শিক্ষা দেওয়া যে তাঁরা কী কী এড়িয়ে চলবেন। এই বইয়েও সেই সব সম্পর্কের উদযাপনও রয়েছে, যাঁদের সাহয্য ছাড়া এই উচ্চতায় পৌঁছনো সম্ভব ছিল না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও খেলাধুলার প্রসারের জন্য আমি একটা দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। এই বইয়ের বিক্রি থেকে যা পাওয়া যাবে তা ওই সব উদ্দেশেই ব্যবহৃত হবে।
দিল্লির প্রকাশক অনন্যা শর্মা বলেন, বইটি প্রকাশের আগে থেকেই সাড়া পড়ে গিয়েছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে যেদিন বইটির প্রকাশ হয়েছে সেদিনই তৃতীয় সংস্করণের মুদ্রণের জন্য পাঠানো হয়েছিল। অ্যামাজন ও সমস্ত বড় বইয়ের দোকানে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।
অনন্যা আরও বলেন, বইটি প্রকাশ করা নিয়ে কম চ্যালেঞ্জ ছিল না। ডাঃ হরি প্রসাদকে যাঁরা খুব কাছ থেকে চেনেন তাঁরা জানেন, উনি খুবই কম কথা বলেন। তাই ওই টুকু কথা থেকে গোটা উপাখ্যান রচনা ছিল বড় কঠিন ব্যাপার। কোনও প্রশ্ন করলে উনি অতি সংক্ষেপে জবাব দিতেন। ফলে আমাদের টিম তাঁর সঙ্গে অনবরত কথা চালিয়ে গিয়েছিল। তার পর সেই সংলাপ থেকেই তুলে আনা হয়েছে অনন্য অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ এই জীবন কাহিনি। খুব সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে এমন একটা মানুষের কথা যিনি আপাত দর্শনে কঠিন ও আত্মমুখী, কিন্তু তাঁর চরিত্রে আবেগ একটা বড় সম্পদ। যিনি বরাবর নিজের সাফল্যকে ছোট করে দেখিয়েছেন অথচ পর্দার আড়ালে থেকে এমন কিছু করেছেন যা সমাজে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। আমি তাই গর্বের সঙ্গেই বলতে পারি,– এই বইটি হল একটি মাস্টারপিস। সারাজীবন ধরে কত বই যে প্রকাশ করেছি তার ইয়ত্তা নেই, কিন্তু এই বইটি যেন আমার ডিএনএ-কেই বদলে দিয়েছে। বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায় যাদু রয়েছে। এমন যাদু যা পাঠককে বেঁধে রাখবে, মুগ্ধ করবে, অনুপ্রাণিত করবে। এই বই তাঁদের কাছে পাঠ্যপুস্তক হওয়া উচিত যাঁদের উচ্চাকাঙ্খা ও জেদ রয়েছে, যাঁরা জীবনে অসাধারণ কিছু করে দেখাতে চান। প্রচারে অ্যাড ফ্যাক্টর।