বিধানসভার আগে দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে দলকে বার্তা দিল
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ২৩শে জুলাই ২০২০ : ২০২১ সালের বিধানসভার আগে তৃণমূল হাইকমান্ড মমতা ব্যানার্জি দলের মধ্যে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দলকে কড়া বার্তা দিলেন। করোনা ও আমফান মোকাবিলা নিয়ে বিরোধীরা ক্রমাগত তৃণমূলকে আক্রমণ করে গেছে। যদিও বিরোধীরা হলফ করে এটাও বলতে পারছেন না যে তাঁদের দল একেবারে সাফ। কিন্তু এবার বিরোধীদের সমালোচনার মুখ বন্ধ করে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি।
আজ মমতা ব্যানার্জি গোটা রাজ্যের সব জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করলেন কিন্তু তাতে অনেক রদবদল করলেন যা গোটা রাজ্যকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। তিনি এভাবে হাওড়া, দঃ দিনাজপুর, বাঁকুড়া, ঝাড়্গ্রাম, কোচবিহারে, নদিয়া জেলা সভাপতি পরিবর্তন করেছেন। বিশেষ করে যে সব জেলাগুলোতে গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে পিছিয়ে পড়েছে দল, জেলায় নেতৃত্বের গাফিলতিতে গোষ্ঠী কোন্দল তৈরি হয়েছে অথবা জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে সেই জেলাগুলোতে সভাপতি পরিবর্তন করেছেন সুপ্রিমো। এবার কড়া হাতে বিজেপিকে মোকাবিলা করতে চাইছেন মমতা ব্যানার্জি। গত ২১শে জুলাই মমতা ব্যানার্জি কর্মীদের উদ্দেশ্যে জানিয়েছিলেন বিজেপিকে মোকাবিলা করতে হবে কড়া হাতে। ২০২১ সালে তৃণমূলই রাজ্যের ক্ষমতায় থাকবে যদিও বিজেপির পক্ষে রাজ্য সভাপতি বলেছেন, ২০২১ সালে মমতা ব্যানার্জি আর ২১শে জুলাই ভাষণ দিতে পারবে না কারণ ২০২১ সালে বিজেপি সভা করার অনুমতি দেবে। দীর্ঘদিন প্রশান্ত কুমারের দল বিভিন্ন জেলায় গোপন সার্ভের মাধ্যমে সব তথ্য তুলে আনে।তাঁদের দেওয়া রিপোর্টকেই ঢাল করে আজ সুপ্রিমোর সিদ্ধান্ত।
মমতা ব্যানার্জি যে বিষয়গুলোকে গুরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার মধ্যে বিভিন্ন জেলায় রাজ্যের বিশেষ নেতৃত্বদের পর্যবেক্ষক হিসাবে রাখা হয়েছিল যেমন ফিরাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, শুভেন্দু আধিকারি, কল্যান ব্যানার্জির মত অনেক হেভিওয়েট নেতারা। এই পর্যবেক্ষকের ভূমিকা নিয়ে জেলায় যে ক্ষোভ ছিল তা নিয়ে মমতা ব্যানার্জি বুঝিয়ে দিলেন জেলায় বাইরের কোন নেতার ক্ষমতার কত্রিত্ব আর থাকলো না।
অনেকের সাথে ছাত্র নেত্রী জয়া দত্ত, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় দুজনকে রাজ্য কমিটিতে সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । এছাড়া ঋতব্রতকে আলিপুরদুয়ারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।কোচবিহারে অর্পিতা দে-কে সরিয়ে পার্থ প্রতিম রায়কে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।একইভাবে হাওড়াতে মন্ত্রী অরূপ রায়-কে সরিয়ে লক্ষ্মী রতন শুক্লকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হাওড়ার রাজনীতি নিয়ে দীর্ঘদিন কোন্দল চলছিল তা এতদিনে সমাধান হল। লক্ষ্মী রতন শুক্ল গোষ্ঠী রাজনীতির একেবারে বাইরের মানুষ। রাজীব ব্যানার্জিকেও রাজ্য কমিটিতে আনা হয়েছে। বাঁকুড়ার ক্ষেত্রে শ্যামল সাঁতরাকে আনা হয়েছে, ঝাড়গ্রামে দুলাল মুর্মুকে আনা হয়েছে, ছত্রধর মাহাতোকে রাজ্য কমিটিতে আনা হয়েছে। জেলা কমিটিতে প্রকৃত ক্ষমতাশীল গোষ্ঠীদের পাশাপাশি বিরোধী গোষ্ঠীর অনেককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে সবটাই কিন্তু জেলা সভাপতির উপর ছেড়ে দেন নি নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। সব জেলাতেই ৩জন করে কোঅর্ডিনেটর রেখেছেন।এই কোঅর্ডিনেটরদের মনিটরিং-এর দায়িত্বে রয়েছে বেশ কয়েকটা বিধানসভা।
প্রতি জেলাতেই একজন করে জেলা চেয়ারম্যান, জেলা সভাপতি ও ৩ জন করে কোঅর্ডিনেটর রাখা হয়েছে। এই টিমওয়ার্ক কার্যত বিধানসভার আগে বেশ কার্যকরি হবে বলেই মনে করছে অনেকে। এই জেলা কমিটির সমন্বয় করে নেত্রী মমতা ব্যানার্জি জেলা ভিত্তিক গোষ্ঠীকোন্দলকে কার্যত ভেঙে দিলেন। তিনি এখন বিজেপিকে রুখতে তৃণমূলের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার বার্তাই দিলেন।উত্তর কলকাতায় যদিও এখনও কোন জেলা সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়নি তবে নয়না ব্যানার্জি, অতীন ঘোষ ও জীবন সাহাকে কোঅর্ডিনেটর করা হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতায় জেলা সভাপতি দেবাশিষ কুমার এবং কোঅর্ডিনেটর হিসাবে রত্না সূর, বৈশানর চ্যাটার্জিকে করা হয়েছে।
এদিকে দক্ষিণ ২৪ পরগণায় জেলা সভাপতির পদ ধরে রাখলেন শুভাশিস চক্রবর্তী, জেলা চেয়ারম্যান হিসাবে থাকছেন চৌধুরী মোহন জাটুয়া কিন্তু ৩জন কোঅর্ডিনেটরের দায়িত্বে থাকলেন মন্টুরাম পাখিরা (সাগর, কাকদ্বীপ, রাইদিঘি, মন্দিরবাজার, পাথরপ্রতিমা, কুলপি, মগরাহাট পশ্চিম, বাসন্তী, গোসাবা), দিলিপ মন্ডল (বিষ্ণুপুর, ফলতা, ডায়মন্ড হারবার, মহেশতলা, যাদবপুর, টালিগঞ্জ, সাতগাছিয়া, বজবজ, মেটিয়াব্রুজ) এবং পরেশ রাম দাস (ক্যানিং পূর্ব, ক্যানিং পশ্চিম, জয়নগর, কুলতলি, ভাঙড়, বারুইপুর পূর্ব, বারুইপুর পশ্চিম, মগরাহাট পূর্ব, সোনারপুর উত্তর, সোনারপুর দক্ষিণ)।