বিজেপির জনস্বার্থ নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে কৃষি বিল নিয়ে ১৪ই অক্টোবর ফিরদৌসীর উদ্যোগে বিশাল মিছিল
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ১লা অক্টোবর ২০২০ : আগামী ১৪ই অক্টোবর গঙ্গাজোয়ারা ব্রিজ থেকে গড়িয়া স্টেশন পর্যন্ত এক বিশাল মিছিলের উদ্যোগ নিয়েছেন সোনারপুর উত্তর বিধানসভার বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম। এই মিছিলের মূল উদ্দেশ্য হল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে জনস্বার্থ নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে কৃষি বিল পাস করেছে তাতে কৃষকদের মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে গোটা বিরোধী শিবির মনে করছে।কৃষকরা দেশের সম্পদ। তাঁদের উপর নির্ভরশীল আমরা। তাঁদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। সেখানে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সেই কৃষকদের ঠেলে দিচ্ছে চরম বিপদে। কি বলা হয়েছে এই কেন্দ্রের মোদী সরকারের তিন অধ্যাদেশ কৃষি বিলে দেখে নিন এক নজরে।
লোকসভা ও রাজ্যসভায় এই তিনটি বিল পাস হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি সই দিলেই আইন হতে চলেছে এই কৃষি বিল।
১) অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে সংশোধন
• চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, গম, ভোজ্যতেল তৈলবীজ যত ইচ্ছে মজুত করার ছাড়পত্র
• প্রয়োজনে কেন্দ্র বিধিনিষেধ জারি করতে পারে, রাজ্যের অধিকার থাকবে না বলে অভিযোগ
২) কৃষিপণ্য ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নে অধ্যাদেশ
• কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ী, রফতানিকারী ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলি চুক্তির ভিত্তিতে চাষ করিয়ে নিয়ে সরাসরি চাষিদের থেকে ফসল কিনে নিতে পারবে। কৃষিপণ্য বাজার কমিটির নিয়ন্ত্রণে থাকা মান্ডিতে ফসল বেচার কোনও বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ‘এক দেশ, এক কৃষি বাজার’ এর লক্ষ্য।
৩) কৃষকদের চুক্তি চাষে সুরক্ষা ও ফসলের মূল্য নিশ্চিতকরণ অধ্যাদেশ
• বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চাষিদের চুক্তির মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়া, যাতে চাষিরা ফসলের ঠিকমতো দাম পান, তাঁদের ঠকতে না হয়।
সরকারের এই অধ্যাদেশে —
“কর্পোরেট লুটেরাদের পৌষমাস, আর কৃষকদের সর্বনাশ”
🔴দেশের ৮৬ শতাংশ চাষির জমির পরিমাণ ২ হেক্টরের কম। তাঁরা তাদের অল্প ফসল বা আনাজ গ্রামের কাছে মান্ডিতে না বেচে বাইরে কোথাও বেচতে যাবেন না। তাই এই অধ্যাদেশ মোটেও কৃষক স্বার্থে নয়, কর্পোরেট লুটেরাদের স্বার্থে !
🔴ফসলের এমএসপি বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য তুলে দেওয়ার চক্রান্ত পরিস্কার।
🔴 ফলে চাষিরা এমএসপি-র থেকে কম দামে ফসল বেচতে বাধ্য হবেন।
🔴কেন্দ্র সরকার এফসিআই বা নাফেড-এর মাধ্যমে ফসল কেনা বন্ধ করে দেবে ।
🔴খাদ্যশস্য মজুতের দায় নিজের কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলবে কেন্দ্র সরকার।
🔴 “মান্ডির বাইরে” বলতে ওরা বলতে চায় মান্ডির বাইরে বসে কোন রকম মার্কেট ফি বা সেস বা লেভি না দিয়ে কোম্পানির লোকেরা ফসল কেনার অধিকার পাবে। অর্থাৎ সরকার ওদের উপঢৌকন দিলো। এছাড়া ছোট চাষিরা কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে লেনদেন করতে গিয়ে ঠকবেন, এমনকি তাঁরা কর্পোরেট সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইও লড়তে পারবেন না ।
🔴বেসরকারি সংস্থাগুলিকে যত ইচ্ছে খাদ্যশস্য মজুত করতে দেওয়ার ফলে কালোবাজারি, লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ও কৃত্রিম খাদ্যাভাব তৈরি হবে দেশে।
🔴 সরকার খাদ্য শস্য মজুত করা বন্ধ করলে রেশনের মাধ্যমে খাদ্যবণ্টনও বন্ধ হয়ে যাবে ।
🤔 কেন এই আশঙ্কা ?
২০১৫-য় মোদী সরকার নিযুক্ত শান্তা কুমার কমিটি সুপারিশ করেছিল, মাত্র ৬ শতাংশ চাষি এমএসপি-র সুবিধা পান। কাজেই তা তুলে দেওয়া হোক। এফসিআই ও নাফেড-এর মাধ্যমে ফসল কেনা বন্ধ হোক। রেশনে খাদ্যবণ্টন বন্ধ হোক। তিন অধ্যাদেশে শান্তা কুমার কমিটির সুপারিশই রূপায়ণ করছে মোদী সরকার।
✊ সারা দেশের চাষীরা আজ যে কারনে বিরোধিতায় পথে নেমেছেন
1⃣ মান্ডি বা গ্রামীণ হাটে ফসল বিক্রি করলে চাষীদের দাম নিয়ে সম্মিলিত দরকষাকষির একটা ক্ষমতা ছিলো। এখন সেটাকে বিলোপ করে কর্পোরেটদের লুটের সুবিধা করে দেওয়া হবে।
2⃣ যদি মান্ডি বা বাজারগুলিকেই ধাপে ধাপে অকার্যকরী করে দেওয়া হয় তবে চাষীরা আর ফসলের সহায়ক মূল্য পাবে না।
3⃣ এর জন্যই এমএসপি কে কঠোর ভাবে লাগু করার লক্ষ্যে আইন প্রনয়ণে সংস্কার করছে না কেন্দ্র।
4⃣ চাষীদের কর্পোরেটদের প্রজায় পরিনত করে এক নয়া কর্পোরেট জমিদারী ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে। কৃষকদের পরিণত করা হবে পুঁজিপতিদের গোলামে।
5⃣ ডব্লুটিও র অধীনে আমাদের দেশে কৃষি ব্যবস্থায় মুক্ত বানিজ্যকেই ঘুর পথে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
6⃣ আমাদের দেশের কৃষি ও কৃষকদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
সারা দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার যখন প্রায় -২৪%, তখনও কৃষিতে বৃদ্ধির হার +৩% -এর বেশী। মোদি সরকার রেল,ব্যাঙ্ক, বীমা, খনি, বন্দর সব বিক্রী করার প্রক্রিয়া শুরু করে এবার নজর দিয়েছে তাই কৃষির উপর। দেশটাকে ফ্যাসিস্টরা ধ্বংসের শেষ কিনারায় নিয়ে যাচ্ছে। আর তার প্রতিবাদে আগামী ১৪ তারিখে বিধায়ক ফিরদৌসী বেগমের নেতৃত্বে গোটা সোনারপুর জুড়ে হতে চলেছে বিশাল প্রতিবাদী মিছিল। আর তার প্রাক্কালে বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম প্রতিটা ওয়ার্ডের বিদায়ী পৌর প্রতিনিধি ও কর্মীদের নিয়ে করলেন প্রস্তুতি সভা। সাম্প্রতিক রাজপুর সোনারপুরের ৫ নং ওয়ার্ডে এক প্রস্তুতি কর্মীসভায় উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী পৌরপিতা ও বর্তমানে ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর তরুণ কান্তি মন্ডল, এই ওয়ার্ডের বিধায়ক প্রতিনিধি ও সোনারপুর উত্তর বিধানসভার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি পাপাই দত্ত, সোনারপুর উত্তর তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভাপতি সমরজিত ব্যানার্জি, ৫ নং ওয়ার্ড সম্পাদক অমিতাভ কুন্ডু (মিন্টু), গড়িয়া টাউন জয়হিন্দ বাহিনীর সভাপতি অরিন্দম দত্ত সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও অসংখ্য মহিলা ও পুরুষ কর্মী। এই মিছিল দিয়ে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হুশিয়ারি বার্তা পৌঁছে দিতে চান বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম।