আজকের মিছিল দিয়ে শুরু হল শারদীয়া উৎসব : ফিরদৌসী, আজকের মিছিল বুঝিয়ে দিল আমরা এক পরিবার : নজরুল, জেলায় এতবড় মিছিল কখনও হয় নি : শওকত
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ১৪ই অক্টোবর ২০২০ : আজ বিকেল ৪টে থেকে সোনারপুর উত্তর বিধানসভার বিধায়ক ফিরদৌসী বেগমের উদ্যোগে গড়িয়া নাট্যমহল থেকে ঢালাই ব্রীজ পর্যন্ত কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এক ঐতিহাসিক মিছিলের আয়োজন করেন। এটা বলতেই হয় বিগতদিনে এরকম মিছিল সোনারপুরের মানুষ দেখেনি এমনকি কোন নির্বাচনেও নয়।
গোটা রাস্তায় মানুষের যে ঢল নেমেছিল আজ তা দেখে বিজেপি কর্মীরা সহ নেতাদের কপালে বেশ চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। আর সিপিএম-কংগ্রেস জোট তো আরও মিলিয়ে গেছে বলেই বলা যায়। সোনারপুর বিধানসভার মোট ১৭টা ওয়ার্ড ও ৫টা পঞ্চায়েতের মানুষ সম্পূর্ণ সমর্থন নিয়ে একেবারে ঝাপিয়ে পড়েছিল আজকের মিছিলে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম সহ দঃ ২৪ পরগণা জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি শওকত মোল্লা, রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য নজরুল আলি মন্ডল, সোনারপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর সরকার, প্রশাসকমন্ডলীর সদস্য বিভাস মুখার্জি, পৌরমাতা নমিতা দাস, পাপিয়া হালদার, দীপা ঘোষ এবং পৌরপিতা তরুণ কান্তি মন্ডল, রঞ্জিত মন্ডল ছাড়াও সোনারপুর উত্তর বিধানসভার তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি পাপাই দত্ত, সোনারপুর উত্তর বিধানসভার জয়হিন্দ বাহিনীর সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস (নন্দ), সোনারপুর উত্তর বিধানসভার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভাপতি সমরজিত ব্যানার্জি, নরেন্দ্রপুর টাউন তৃণমূলের সভাপতি গোপাল দাস, পিন্টু দেবনাথ, শ্রীমন্ত নস্কর, পঞ্চায়েত প্রধান গোঁরাচাঁদ নস্কর সহ অনেকে। সব নাম লিখতে গেলে শেষ করা সম্ভব নয়।তবে আজকে অনেক নতুন মুখ আগামী পৌর নির্বাচনে শুধুমাত্র টিকিটের আশায় মিছিলে হাঁটলেন। তাঁদের কোনদিনও তৃণমূল করতে বা তৃণমূলের কোন কার্মসূচীতে দেখা যায় নি। সামনে পৌর নির্বাচন, শরীর না দিলেও শুধুমাত্র নেতৃত্বকে খুশি করতে হেঁটেছেন যদি আগামী নির্বাচনে একটা টিকিট কপাল করে পেয়ে যায়। কিন্তু তাঁদের ভাবমুর্তি নিয়ে নিজেরাই ভাবে না তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা কতটা, মানুষ তাঁদের আদৌ চায় কিনা, নিজেরাই জাহির করে বলে এবার আমিই টিকিট পাচ্ছি আবার অনেকে বিধায়ক ফিরদৌসী বেগমের পাশে ছবি তুলে এমনও মন্তব্য করে বলে প্রশ্ন করেন গ্ল্যামারের দিকে কাকে বিধায়ক হিসাবে মানাচ্ছে? তাঁদের আজ এই মিছিলে টিকিটের আশায় কষ্টের হাসি দিয়ে হাঁটতে হল।
মিছিলের শেষে বাইপাসের ঢালাই ব্রীজে প্রতিবাদ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল, সেখানে বক্তব্য রাখেন জেলা যুব সভাপতি শওকত মোল্লা, তিনি বলেন এই জেলায় এত বড় মিছিল আগে কখনও দেখিনি।বিজেপিকে চরম আক্রমণ করে বলেন, এমন একটা প্রধানমন্ত্রী গোটা বিশ্ব আগে কখনও দেখে নি। এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অতিমারির সময় আগামী জুন মাস পর্যন্ত বিনা পয়সায় চাল সরবরাহ করছেন আর অন্য সময় সকলকে মাত্র ২টাকায় চাল, গম সরবরাহ করেছেন যা মানুষ দেখেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দেশের কোন রাজ্যে বিনা পয়সা কেন ২টাকা কেজি চাল, গম দিতে পারেন নি। রাজ্যের বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে চরম আক্রমণ করেন। তিনি এই মঞ্চ থেকে সাফ জানিয়ে দেন আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ফিরদৌসী বেগমকে বিপূল ভোটে জয়ী করবেন এই মিছিল তা বুঝিয়ে দিল। বিজেপি রাজ্যে হিন্দু ও মুসলমানদের মানসিকতা ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছেন। যখন ইমাম ভাতা চালু হল বলল এটা মুসলিম তোষণ হচ্ছে আবার যখন পুরোহিত ভাতা চালু হচ্ছে তখন বলছে এটা খয়রাতির টাকা। আমি বলবো এভাবে মমতা ব্যানার্জির ভাবমুর্তিকে আঘাত করা যাবে না। রাজ্যের মানুষ মমতা ব্যানার্জিকে বুঝে গেছে।
নজরুল আলি মন্ডল বলেন, দলের মধ্যে মন কষাকষি থাকতেই পারে যেমন একটা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে থাকে সেইভাবে আজকের মিছিল বুঝিয়ে দিল আমরা একটা পরিবার। আমাদের মধ্যে মতের ফারাক হতেই পারে কিন্তু যখন পরিবারের উপর আঁচ আসবে তখন আমরা একটা জোটবদ্ধ পরিবার।নজরুল আলি মন্ডল আরও বলেন যদি হিন্দু পুরোহিতদের ভাতা খয়রাতির টাকা হয় হোক, মানুষ উপকৃত হচ্ছে। বিজেপি সরকার কালো টাকা আনার নামে দেশের মানুষকে ধোঁকা দেয় নি।
ফিরদৌসী বেগম বলেন, আজকের মিছিল শারদীয় উৎসবের প্রাক্কালে একটা পরীক্ষা হয়ে গেল। আমরা এভাবেই পায়ে পায়ে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে হেঁটে হেঁটে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখতে যাবো। এই মিছিল থেকে শারদীয়া আরম্ভ হয়ে গেল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রতিটা পুজোকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলেছেন। যারা ভাবেছিল এবার পুজো করবে না তারাও আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।আর অন্যদিকে বিজেপি শাসিত রাজ্যে দূর্গা পুজোর উপর নানারকমের নিয়ম লাঘু করে বন্ধ করে দিচ্ছে, বাঙালির মনোবল ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছে।