রাজপুর পৌরসভার অনুমোদিত বহুতল বাড়ির প্ল্যানকে চ্যালেঞ্জ করে মুখ থুবড়ে পড়ল ৫ নং ওয়ার্ডের পৌরমাতা বানী ও পাপাই
অম্বর ভট্টাচার্য, তকমা, সোনারপুর উত্তর, ২৫শে জুন ২০২২ : আমরা এর আগে এক প্রতিবেদনে পাঠকদের শুনিয়েছিলাম রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের বর্তমানের পৌরমাতা বানী দত্ত-র স্বামী যিনি অলিখিত ওয়ার্ডের দেখভাল করছেন সেই পাপাই দত্ত-র আমাদের সাথে কথোপকথনের রেকর্ডিং যেখানে তাকে এক ৬ ফুট রাস্তায় তিনতলা বাড়ি নির্মানের ব্যাপারে আমরা নজরে এনেছিলাম। কিন্তু তিনি সেই পৌরসভার হিসাবে বেআইনি নির্মানের পক্ষে সহমর্মিতা দেখিয়ে বলেছিলেন যে ওই নির্মান বেআইনি বটে কিন্তু একজন গরীব অধ্যাপক তিনতলা নির্মান করে ফেলেছেন যখন কি করে তা ভেঙে দেওয়া যায়। প্রথম প্রশ্ন? একজন অধ্যাপক গরীব হন কিভাবে এটা জানা নেই। দ্বিতীয় প্রশ্ন? তখন ওই বাড়ির তিনতলার নির্মান কাজ চলছে, তখনও ঢালাই হয় নি, তবে সেই নির্মান কাজ কেন বন্ধ করার আবেদন রাখলেন না পাপাই দত্ত বা পৌরমাতা বানী দত্ত? তৃতীয় প্রশ্ন? ওই একই রেকর্ডিং-এ পাপাই দত্ত একই ওয়ার্ডে এক প্রমোটারের পৌরসভার অনুমোদিত প্ল্যান অনুযায়ী বহুতল বাড়িকে বেআইনি বলে উদাহরণ রেখেছেন। কিভাবে এক প্রমোটার পৌরসভা অনুমোদিত প্ল্যানকে উপেক্ষা করে নিজের মত করে নির্মান কাজ করতে পারে তাই নিয়ে গোটা ওয়ার্ডে চর্চা হয়েছে। তার কারণ একজন প্রমোটার কি করে পৌরসভার অনুমোদিত প্ল্যানের বাইরে গিয়ে নির্মান করতে পারেন যেখানে তাকে নির্মান শেষে সিসি (Completion Certificate) নিয়ে ক্রেতাদের রেজিস্ট্রি করে দিতে হয় তাদের কেনা ফ্ল্যাটের অংশ। যাই হোক আমাদের এই রেকর্ডিং প্রকাশ হতে পৌরমাতা বানী দত্ত ও তার স্বামী পাপাই দত্ত উঠেপড়ে লাগেন ওই ফ্ল্যাটকে বেআইনি প্রমাণ করে ভাঙবেন। সেই অনুযায়ী পৌরসভার বাস্তুকারকে নিয়ে প্রমোটার মিঠু দে-র নির্মিত ফ্ল্যাটের জমি ও পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী ছাড়ের অংশ বুঝে নেওয়ার আবেদন করেন কারণ এই বহুতল ৫ নং ওয়ার্ডের মধ্যে।
তার আগেই আমরা পৌর প্রধানের সাথে কথা বলেছিলাম, তিনি জানিয়েছিলেন এই অভিযোগ তার কাছেও করেছে কিন্তু তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মিঠু দে-র ফ্ল্যাট কখনই বেআইনি হয় নি। আমাদেরও একই কথা তিনি জানান। কিন্তু আমাদের রেকর্ডিং-এ বলাকে তো মান্যতা দিতে হবে কারণ তিনি সেখানে বলেছেন বোর্ড মিটিং-এ তোলা হবে এবং তার জন্য পৌরসভায় অভিযোগ জমা করা হয়েছে। শোনা গেছে এই বিষয়ে গণস্বাক্ষর করেও অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। ভাল কথা, সেই হিসাবে গত ২১শে জুন দুপুর ৩.৩০টের সময় মিঠু দে-র এই বহুতলের সামনে ৫ নং ওয়ার্ডের একদল তৃনমূল কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে উপস্থিত হন পৌরমাতা বানী দত্ত এবং সেদিন উপস্থিত ছিলেন বাস্তুকার শুভাশিস বসু, আমিন এবং একজন আইনজীবী। অন্যদিকে মিঠু দে তার পক্ষে মাত্র কয়েকজনকে রেখেছিলেন যাতে কোথাও কোন সমস্যা না হয়। মিঠু দে এলাকায় যথেষ্ট পরিচিত ও জনপ্রিয় প্রমোটার কারণ তিনি সেই বাম আমল থেকে এই ব্যবসা করে আসছেন, যদিও তিনি শুরু থেকেই তৃনমূল দলটা করে এসেছেন কিন্তু আজকে এসে তিনি তার দল সামনে রেখে কোন প্রভাব খাটানো বা সুবিধা নেন নি এটা সকলেই এক কথায় স্বীকার করবে। বাম আমলে কেউ তার দিকে আঙুল তুলতে পারে নি, আর আজ সেখানে তিনি নিজের নাম খারাপ করতে রাজি নন বলে আমাদের জানিয়েছেন। এবার একটু পিছনের কথায় আসা যাক, এই ফ্ল্যাট যেদিন থেকে শুরু হয় সেদিন থেকে ৪ নং ওয়ার্ডের পৌরপিতা বিভাস মুখার্জি প্রচার করে এসেছেন মিঠু দে নাকি বেআইনিভাবে ফ্ল্যাট করছেন। আর সেই উস্কানিতে আজ এই সিদ্ধান্ত। এদিনও অনেকে জানায় মাপের সময় আগে বা পিছু ওই এলাকায় বিভাস মুখার্জিকে দেখা গেছে।
এবার বাস্তুকার তো নিজে উপস্থিত থেকে আমিন দিয়ে জমি মাপলেন, কি পেলেন পৌরমাতা? এই জমির একটা বড় অংশ রাস্তা হিসাবে দান করে দেওয়া হয়েছে পৌরসভাকে যা বর্তমান রাস্তার প্রায় অর্ধেক। সেই চুক্তি সবার সামনে দেখান বাস্তুকার। এবার প্রশ্ন আসে যেখানে সবার ক্ষেত্রে বাড়ি নির্মান করতে গেলে ৪ ফুট ছাড় দিতে হয় সেখানে এই নির্মানের ক্ষেত্রে ৩ ফুট কেন? এর উত্তরে পৌরসভাগত বলা হয় কেউ যদি রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য জমি দান করে সেখানে পৌরসভাও তার দিকে বিবেচনা করে ৩ ফুট করতে পারে। আর তো এর বাইরে কোন অভিযোগ নেই। বাধ্য হয়ে পৌরমাতা তার সাথে নিয়ে আসা অনুগামীদের নিয়ে চলে যাওয়ার সময় বিরোধ বাঁধে ছবি তোলা নিয়ে। কিন্তু এটা তো তারাই শিখিয়েছেন, ফেসবুক সম্রাট। এই সমস্যাটায় যদি তাদের জয় হত তবে তো ফেসবুকে দিয়ে একেবারে জয়জয়কার করে ফেলতেন, আর যেহেতু নিজেরা আজ ব্যাকফুটে তাই এত আপত্তি? শেষমেশ আসল অভিযোগ থেকে সবটাই ঘুরে যায় ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে। যাই হোক এর বাইরে আমরাও আর বেশি কিছু বলতে চাই না যাতে আবার বিতর্ক না বাড়ে। এবার কি তবে পৌরমাতা বানী দত্ত ও তার স্বামী পাপাই দত্ত যে তিনতলা নির্মান একজন গরীব অধ্যাপক করেছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কারণ তিনি তো নিজেই রাস্তাটা দেখিয়ে দিলেন যে ওয়ার্ডে কোন বেআইনি নির্মান করা যাবে না। পৌরসভার অনুমোদিত নকসা অনুযায়ী বাড়ি নির্মান করতে হবে। সবটাই এবার সময় বলবে।