সারা বছরের রোজগার থেকে ৪০% সমাজসেবার জন্য খরচ করতেই পারি, ১৬ বছর ধরে তাই করছি : অভিষেক
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকম, কলকাতা, ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ : মহালয় মানেই পিতৃপক্ষের শেষ আর মাতৃপক্ষের শুরু। এইদিনটাকে হিন্দু মতে শুভ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সন্তোষপুর এলাকায় দেবযানী কন্সট্রাকশানের উদ্যোগে প্রায় ৩০০০ দুঃস্থ মানুষকে বস্ত্র বিতরণের আয়োজন করেছিলেন অভিষেক দাস। এটাই প্রথম বছর নয়, নয় নয় করে ১৬ বছর ধরে একই সেবা করে চলেছেন অভিষেক। শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালে মাত্র ৭ জন দিয়ে আজ যা দাঁড়িয়েছে ৩০০০ আগামীদিন আরও বাড়তে পারে। এব্যাপারে অভিষেক জানান, ২০০৬ সালে আমি মুকুন্দপুর অঞ্চলের কিছু গরীব পরিবারের জন্য পুজোয় জামা কাপড় কেনার কথা ভাবি। আমার এই ভাবনার সাথে আমার স্ত্রী রেশমি দাস সাধ দেয়। আমরা চিন্তা করেছিলাম নিজের সন্তানরা নতুন জামা পড়বে আর এই গরীব পরিবারের সদস্যরা পড়বে না। তাই মোট ৭ জন গরীব সন্তানকে বস্ত্র কিনে দিই। এরপর প্রতি বছর তা বাড়তে থাকে। আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন ততদিন তাঁর হাত দিয়েই
এই বস্ত্র বিতরণ করেছি। মহালয় দিনটাকে কেন বেছে নিয়েছি কারণ এইদিন বাবার আত্মার শান্তির জন্য তর্পন করে এই সেবামূলক কাজ করে থাকি। এতে একটা আলাদা সন্তুষ্টি লাভ করি। বর্তমানে আমার মা দেবযানী দাস এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন।একটা সময় আমরা অনেক কষ্ট করেছি তাই এই কষ্টের মর্মটা বুঝি। না পাওয়ার যন্ত্রণাটা উপভোগ করতে পারি। আমি জানি না এই সংখ্যটা কোথায় গিয়ে থামবে তবে এটা বলতে পারি যতদিন আমি বাঁচবো ততদিন এই সমাজসেবা করে যাবো। আমার সাথে আমার গোটা পরিবার আছে আর আছে আমার এলাকার প্রায় ২৫০ নতুন প্রজন্ম। একটা সময় এটা শুধুমাত্র সন্তোষপুর বা যাদবপুর কেন্দ্রিক ছিল আজ আর তা নেই, গোটা জেলা এমনকি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এই বস্ত্র নিতে চলে আসে। আমি মনে করি সারা বছর যা রোজগার করি তার থেকে ৪০% যদি গরীব মানুষদের জন্য খরচ করি তাতে আমার কিছু কমবে না বরং তাদের আশির্বাদে আমার জীবন ধন্য হয়ে উঠবে। এই সমাজসেবার কাজ প্রতিবছর জুন জুলাই মাসে শুরু হয়। তখন থেকে আমরা নাম নিতে শুরু করি কারণ আমরা বয়স ও রুচি অনুযায়ী বস্ত্র কিনে আনি। নাম লেখানোর সময় দেখে নিই কি ধরনের বস্ত্র লাগবে। এখানে শাড়ি যেমন দেওয়া হয়, তেমন জামা, প্যান্ট, ফ্রক, ধুতি, লুঙ্গি সব
ধরনের বস্ত্র প্রয়োজন মত তুলে দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র পারিষদের সদস্য দেবাশিস কুমার, ১০৩ নং ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলার নন্দিতা রায়, ১০২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার রিঙ্কু নস্কর, বোরো ১১ চেয়ারম্যান তারকেশ্বর চক্রবর্তী, অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকার, আইনজীবী তমাল কান্তি মুখার্জি, দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা জয়হিন্দ বাহিনী সভাপতি পল্লব কান্তি ঘোষ, ডাঃ পি কে পাল, আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চ্যাটার্জি, আই পি এস ডি এস রুদ্র, সত্যব্রত উপাধ্যায় (এ আর এস, গড়িয়া থানা), বিশ্বক মুখার্জি (ওসি সার্ভে পার্ক), তপন নাথ (অতিরিক্ত ওসি, গরফা থানা),ডাঃ বিশাল ভকত, ডাঃ সুজয় বালা, ডাঃ দেবযানী বসু, ডাঃ এন কে নাথ, ডাঃ রাজেন্দ্র গাহেরি সহ অনেকে। পুরো তালিকা দিতে গেলে কোথায় থামবো নিজেই জানি না। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ নিজ উৎসাহে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন বলা যেতে পারে। অভিষেক দাসের মা দেবযানী দাস বলেন, আমার তিনটে সন্তান কিন্তু তাদের হাত ধরে আজ আমি অগুন্তি সন্তানকে কাছে পেয়েছি, এটা আমার সৌভাগ্য।আমার তিন সন্তানের মধ্যে দুই সন্তান উপস্থিত থেকে (কাজের সূত্রে আরেক সন্তান বাইরে) এই অসহায় মানুষগুলোর মুখে হাঁসি ফোঁটাতে পেরেছে দেখে আমি গর্ব বোধ করি। আমি মা হিসেবে তিন পুত্র সন্তান প্রসব করে আজ ধন্য। দেবাশিস কুমার বলেন, কোন রাজনৈতিক রং ছাড়া এরকম একটা উৎসবের আকার ধারন করা সত্যিই প্রশংসার। রাজনৈতিক দল এধরনের অনুষ্ঠান করে থাকে কিন্তু মাত্র এক ব্যক্তির উদ্যোগে এত বড় একটা অনুষ্ঠান ভাবনার বাইরে। অভিষেক যা করে দেখালো এটা সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এভাবে সকলে নিজ নিজ এলাকায় করতে পারলে সমাজের অনেক উপকার হবে। আমি চেষ্টা করবো এই অনুষ্ঠানে প্রতিবছর নিজে সামিল থাকতে।