রামমন্দির নিয়ে ঐতিহাসিক রায় জানালো সর্বোচ্চ আদালত, মুসলিমদের মসজিদও তৈরি হবে অযোধ্যায়
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ৯ই নভেম্বর ২০১৯ : রামমন্দির নিয়ে বহু বছর ধরে চলছিল একটা রাজনৈতিক টানাপড়েন যার অবাসন হল আজ। আজ ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট ১০৪৫ পাতার রায়দান করে। সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নিয়ে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছে উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়ার। রায় প্রকাশের আগে আদালত চত্তর ছিল আইনজীবিদের ভিড়ে ঠাসা। রাজস্থানের জয়পুরে সকাল ১০টা থেকে বন্ধ ছিল ইন্টারনেট পরিষেবা। সুপ্রিম কোর্টের বাইরে ছিল কড়া নিরাপত্তার বলয়। উত্তপ্রদেশে নিয়োজিত ছিল ১২০০০ নিরাপত্তা রক্ষী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিশ গড়কড়ি জানান, শীর্ষ আদালতের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। দেশের সকল নাগরিককে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় শান্তিপূর্ণ ভাবে মেনে নেওয়া উচিত। ভরতপুর, উত্তরপ্রদেশ নেপাল সীমান্ত এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। রামমন্দির নিয়ে রায় ঘোষণার পর শিবসেনা কেন্দ্র সরকার অর্থাৎ বিজেপির বিরুদ্ধে সংঘাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। উদ্ধব ঠাকরে দাবি করে বলেন, এই রায় বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্র সরকার কৃতিত্বের দাবি করতে পারে না। আমরা অনেক আগেই বলেছিলাম অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি করতে যা বিজেপি সরকার নির্মান করতে রাজি হয় নি। এখন সুপ্রিম কোর্টের এই রায় মন্দিরের দাবিদারদের পক্ষেই গিয়েছে। রায়ের ৯২৬ ও ৯২৭ নং পাতায় রায়ের মূল কথার উল্লেখ করা হয়েছে।
রামমন্দির নিয়ে বিতর্ক কয়েক’শ বছরের। আর রামমন্দির নির্মান নিয়ে মামলা চলছে কয়েক দশক ধরে। দুই পক্ষের মধ্যে সমতা বজায় রেখেই এই রায় ঘোষণা করেছে বলে মত প্রকাশ করছেন বিভিন্ন মহল। যদিও রামমন্দিরের পক্ষেই মান্যতা পেয়েছে আজকের রায়। অযোধ্যায় বিতর্কিত জমি পাবে রামমন্দির পক্ষ। অর্থাৎ যে জমিতে বাবরি মসজিত ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল সেখানেই হবে রামমন্দির। ২.৭৭ একরের এই বিতর্কিত রামজন্মভূমি। আর এই জমি হিন্দুদের দান করার কথা বলা হয়েছে রায়ে। রায়ে এমনও বলা হয়েছে বাবরি মসজিদ কোন ফাঁকা জমিতে তৈরি করা হয় নি। এর আগে ওই জমিতে কিছু নির্মান করা ছিল।তবে তা ঠিক কি ছিল তা আর্কিওলজিকাল সার্ভের দল জানাতে পারে নি বলে জানান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। অবে ইতিহাস থেকে জানা যায় মুঘল সম্রাট বাবরের আমলে অযোধ্যায় কোন মসজিদ ছিল না বলে সেখানে তাঁর সেনাদের নামাজ পড়ার জন্য এই বাবরি সমজিদ নির্মান করা হয়েছিল যা আজকের বিতর্কিত জমি।
আদালতের রায়ে এমনও বলা হয়েছে মসজিদও তৈরি হবে তবে তা বিতর্কিত জমিতে নয়। তবে সেই জমি ঠিক কোথায় তা পরিষ্কার করে বলা হয় নি। কিন্তু এটা বলা হয়েছে ৫ একর জমিতে তৈরি করতে দিতে হবে মসজিদ যা প্রায় বাবরি মসজিদের দ্বিগুণ।সুপ্রিম কোর্ট এমনও বলেছে কোন নির্মোহী আখড়া সেবায়েত নয়, ট্রাস্টের সদস্যদের নিয়ে তৈরি করতে হবে রামমন্দির। বাবরি মসজিদের বিরুদ্ধে মামলাকারীরা যে বলেছিল অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ হবে না, অযোধ্যার বাইরে করতে হবে বাবরি মসজিদ কিন্তু সেই আবেদন নাকচ করে আদালত বলেছে অযোধ্যাতেই হবে বাবরি মসজিদ কিন্তু বিতর্কিত জমিতে হবে না।
এই রায়ের পর সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবি জাফারিয়াব জিলানি বলেন, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। এতে অনেক ভুল তথ্য আছে। রিভিউ করা যাবে কিনা আমরা তা দেখবো। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। কিন্তু এই রায়কে সম্মান জানানোর পাশাপাশি শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
রায়ের পর সব রাজ্যকে সতর্ক করেছে কেন্দ্র। অযোধ্যা সহ গোটা উত্তরপ্রদেশ মুড়ে ফেলা হয়েছে কড়া নিরাপত্তায়। অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণার আগে থেকেই দুর্গের চেহারা নিয়েছিল মন্দিরনগরী। সব রাজ্যকে সতর্ক করে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র। উত্তরপ্রদেশে প্রায় ৪০০০ আধাসেনা ও ১২০০০ পুলিশ নামানো হয়েছে।
রায়দানের পর মুখ খুলেই বিস্ফোরণ ঘটালেন এআইএমআইএম সুপ্রিমা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। হায়দরাবাদের সাংসদের দাবি, “সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাস্তব সত্যির জয় হয়নি। জয় হয়েছে আস্থার।” ওয়াইসি বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় শিরোধার্য্য কিন্তু, অকাট্য নয়। একই সঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট মুসলিমদের যে খয়রাতির ৫ একর জমি দিতে চেয়েছে, তা তাঁদের চায় না। ওয়াইসির দাবি, এমনি মানুষের কাছে চাইলেই মুসলিমরা ৫ একর পেয়ে যাবে। সরকারের খয়রাতির প্রয়োজন নেই। হায়দরাবাদের সাংসদের বক্তব্য, “আমরা আমাদের আইনি অধিকারের জন্য লড়ছি। ভারতের মুসলমানদের এতটা খারাপ দিনও আসেনি যে খয়রাতির জমি নিতে হবে। আমরা যদি এভাবেই ভিক্ষা করতে থাকি তাহলে তাহলে এগোতে পারব না। মুসলিম বোর্ড কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তাঁদের সিদ্ধান্ত। আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত আমাদের এই ৫ একরের প্রস্তাব খারিজ করা উচিত।” এদিকে, অযোধ্যার রায়কে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেস। শনিবার রায়ের আগেই দিল্লিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই ঠিক হয় দলের পার্টি লাইন। রায় ঘোষণার পর কংগ্রেসের তরফে দলের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিং সূরজেওয়ালা বলেন, “কংগ্রেস দল সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানায়। কংগ্রেস পার্টি দ্রুত রাম মন্দির তৈরির পক্ষে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে একদিকে যেমন মন্দির তৈরির রাস্তা খুলে গেল, অন্যদিকে তেমনি বিজেপির জন্য এই ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল। আদালতের এই রায়ে যাতে কোনওভাবেই কোনও ব্যক্তি, কোনও সংগঠন, কোনও রাজনৈতিক দল বা কোনও সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক লাভ না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।” একই সঙ্গে দেশবাসীকে শান্তি এবং সৌহার্দ্য বজায় রাখার বার্তাও দিয়েছে দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল। রায় ঘোষণার পর প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও মুখ খুলেছেন। তিনি বলছেন, “সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে সম্মান জানিয়ে, আমাদের নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখতে হবে। এটা সব ভারতীয়র মধ্যে বন্ধুত্ব, প্রেম আর ভ্রাতৃত্বের সময়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রায়দানের পর নিজের দলীয় নেতৃত্ব ও কর্মীদের রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে অযথা কোন মন্তব্য করতে নিষেধ করেছেন।তিনি বলেন কোথাও কেউ কোন উস্কানিমূলক মন্তব্য যেন না করে।