দেশের একমাত্র নোডাল কেন্দ্র জেআইএস গোষ্ঠীর জি আই এন টি পশ্চিম এশিয়ায় আন্তর্জাতিক কোডিং অলিম্পিয়াড–এর প্রতিযোগিতার আয়োজন করল
নিজস্ব প্রতিনিধি, এবিপিতকমা, কলকাতা, ১৮ই জানুয়ারি ২০২০ : দুনিয়ার বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একঝাঁক পড়ুয়া আইসিপিসি (ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট) নামের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মানের এই প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আইসিপিসি–কে অনুমোদন দিয়েছে আইসিপিসি ফাউন্ডেশন। যার সদর দপ্তর বেলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে।ভারতে এই প্রথম আন্তর্জাতিক স্তরের এই প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল। সেই সূত্রেই কলকাতার গুরু নানক ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (জিএনআইটি) এক অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছে। জেআইএস গোষ্ঠীর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশের একমাত্র নোডাল কেন্দ্র হিসেবে প্রতিযোগিতা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছে। এটি পৃথিবীর সবথেকে পুরনো এবং বড় হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা হিসেবে স্বীকৃত। ১৪ এবং ১৫ জানুয়ারি— দু’দিন প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল জিএনআইটি–এর সোদপুর ক্যাম্পাসে। ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসরও।
দেখে নেওয়া যাক সেরা দশটি দল কোনগুলি হল। প্রথম এবং দ্বিতীয় হয়েছে কানপুর আইআইটি, বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি। এরপর আইআইটি বেনারস এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি দিল্লির দু’টি দল, আইআইটি রুড়কি, হায়দ্রাবাদের ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি, বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বোম্বে আইআইটি।
জিএনআইটি–এর অধ্যক্ষ ড. শান্তনু সেন বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতায় দু’টি স্তর রয়েছে। একটি আঞ্চলিক এবং পরের ধাপটি হল আন্তর্জাতিক। ৬টি মহাদেশের পড়ুয়ারা এখানে অংশ নেয়। এশিয়ায় ক্ষেত্রে বেশ কয়েক অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার ফাইনালের জন্য ভারতে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তেহরানকে নোডাল কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল ভারতীয় সময়ে সকাল সাড়ে ১১টায়। এবং শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৪টেয়। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের প্রতিযোগিরা যোগ দেন। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা ১৬০। এখানে সি, জাভা, পাইথনের মতো প্রোগ্রামিং ব্যবহার করা হয়েছে।। ১৬টি আইআইটি–র পড়ুয়া যোগ দিয়েছিলেন। গত তিন বছরের মধ্যে আমাদের প্রতিষ্ঠানের একটি দল জাতীয় স্তরের ফাইনালে পৌঁছতে পেরেছিল। এবারও আমরা সফল হয়েছি। জিএনআইটি–এর একটি দল জাতীয় স্তরে সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁরা কেরালা গিয়েছিলেন। এশীয় স্তরের ফাইনাল প্রতিযোগিতায় আইআইটিগুলি সুযোগ পেয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এশিয়া প্যাসিফিক ডিরেক্টর, ২ আরসিডি, ৪ আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি এবং জেআইএস গোষ্ঠীর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ এবং অধিকর্তারা। বিজয়ীরা যাবেন বিশ্ব ফাইনালে। এবার ওই প্রতিযোগিতার আসর বসছে রাশিয়ার মস্কোয়।’
জেআইএস গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সর্দার তরণজিৎ সিং বলেন, ‘এমন প্রতিযোগিতা পড়ুয়াদের জন্য নতুন দিক খুলে দেয়। হাতে–কলমে শেখার পর তার প্রয়োগ এবং নিজেদের দক্ষতা দেখানোর জন্য যে কোনও পড়ুয়ার পক্ষে হ্যাকাথনের থেকে ভাল আর কোনও মঞ্চ হতে পারে না। পড়ুয়াদের দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা, প্রয়োগ করার ক্ষমতার পরীক্ষা হয়ে যায়। আমি মনে করি এই প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা এখান থেকে অনেক কিছু শিখে নিতে পারবেন। আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় তাঁদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে।’
বাংলাদেশের ঢাকা থেকে এসেছিলেন মহম্মদ শাহদাত হোসেন সাহির নামে এক প্রতিযোগী। তিনি বলেন, ‘এমন প্রতিযোগিতা যেমন লেখাপড়ার সাহায্য করে, তেমনই নিজেদের দক্ষতা বাড়াতেও কাজ দেয়।’
এশিয়া প্যাসিফিকের অধিকর্তা, কলকাতার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চের পি এইচডি–র অধিকর্তা অধ্যাপক ফাল্গুনি গুপ্তা জানাচ্ছেন, মোট আট হাজার দল অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে থেকে সেরারা এগিয়ে গিয়েছে।
আঞ্চলিক সমন্বয় অধিকর্তা ড. সন্দেশ গুপ্তার কথায়, ‘এটা এক ধরনের বিশ্লেষণমূলক পরীক্ষা। একইসঙ্গে দেখে নেওয়া যায় কত তাড়াতাড়ি প্রতিযোগীরা সমস্যার সমাধান করতে পারেন। ঘটনা হল বিভিন্ন উদাহরণের সাহায্যে কম্পিউটারের সমস্যার সমাধান করা হয়। দেখা যায়, অন্য হ্যাকাথনে পড়ুয়ারা সমস্যার ব্যাপারে আগে থেকে বেশ ভাল ভাবেই জানে। আর যখন তাঁদের সেগুলি সমাধানের জন্য দেওয়া হয়, তার পর থেকে তাঁরা সমাধান শুরু করেন। এখানে একটি কলেজের এক–একটি দলে তিনজন করে পড়ুয়া রয়েছেন। সঙ্গে তাঁদের কোচ। সমস্যা সমাধানের জন্য তাঁদের পাঁচ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল।’ প্রচার গ্রে ম্যাটার্স।