ব্রাজিল, আমেরিকার পরেই ভারত
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ১১ই জুন ২০২০ : করোনাকে নিয়ে যতই মোকাবিলা করা হোক কিন্তু তাতে কিছুই হচ্ছে না। যতই লকডাউন হোক আর আনলক হোক আক্রান্তের হার কোনভাবেই কমছে না।গোটা বিশ্বে আজ ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯২,২৬৫। গোটা বিশ্বে আজ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫,৩৯,৪১৬ যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪,২১,৩৯০ এবং সুস্থ হয়েছেন ৩৮,২২,৫৮২। যদিও সুস্থ্য হওয়ার হার অনেক বেশি কিন্তু সেটা একটা শ্রেনীর জন্য হচ্ছে। ভারতে সেরকম পরিকাঠামো নেই যে মানুষকে চিকিৎসা করে সুস্থ্য করবে। যেখানে সরকার নিজের ভান্ডার ভড়তে ব্যস্ত, যেখানে তাদের সময় নেই মানুষের নিরাপত্তা বা সুস্থ্যতা দেখার। তাঁরা এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক প্রচার ও সভা করতে ব্যস্ত।সাম্প্রতিক বিজেপি ভার্চুয়াল সভা করলেন বাংলার মানুষের সাথে। কিন্তু কেন? যেখানে মানুষ বাঁচার চিন্তা করছে, যেখানে মানুষ খেতে পাচ্ছে না, যেখানে মানুষের বাড়ির ছাদ ঝড়ে উড়ে গেছে, যেখানে মানুষের পকেটে পয়সা নেই। সেখানে কি এই সভার খুব প্রয়োজনীয়তা ছিল? এই রাজ্যে প্রধান বিরোধী বলতে গেলে বিজেপি, তাঁরা রাজ্য সরকারের সমালোচনায় মুখিয়ে থাকে কিন্তু তাঁরা কি আর আলাদা হলেন। এই সময় তাঁরা মানুষকে বোঝাচ্ছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলার মানুষের সাথে ভার্চুয়ালি রাজনৈতিক প্রচার করবেন।সামনে পৌর নির্বাচন আর তার পরই বিধানসভা নির্বাচন আছে। তাই অমিতজি চাইছেন একবার আপনাদের জাগিয়ে তুলতে। বেশ যদি তাই হয় তবে অমিত শাহ নিজে দায়িত্ব নিয়ে এই মানুষগুলোকে বলে দিন যে আচ্ছে দিন আসবে, সরকার আপনাদের স্বস্তি ও নিরাপত্তার জন্য অ্যাকাউন্টে টাকা দেবে প্রতি মাসে। সেটা না করে তাঁরা এই অসহায় অবস্থায় থাকা মানুষগুলোর সাথে রাজনীতি রাজনীতি খেলা শুরু করলেন।
আজ ১১ই জুন ভারত করোনা আক্রান্তের দিক থেকে আমেরিকার পিছনেই, তৃতীয় স্থানে ভারত। ব্রাজিল এক নম্বরে। গত ২৪ ঘন্টায় ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়েছে ১২৩০৫, আমেরিকা গত ২৪ ঘন্টায় ১১,০৭৫ আর ভারত ১০৯৫৪। যদিও মৃত্যুতে কিছুটা পিছিয়ে ভারত।গত ২৪ ঘন্টায় ব্রাজিলে মৃত্যু হয়েছে ৪৭৯, আমেরিকায় মৃত্যু হয়েছে ৪৪২ জনের সেখানে ভারতে মৃত্যু হয়েছে ৩৯৩।অনেক বিশেষজ্ঞ অনেক আগে থেকেই বলেছেন জুন ও জুলাই মাসটা ভারতের জন্য খুবই মারাত্মক। এই দুই মাসে আক্রান্তের হার প্রচন্ড বাড়বে যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে আর ঠিক সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকার আনলক ঘোষণা করলেন। এখানেই বোঝা যায় কেন্দ্রীয় সরকারের মানসিকতা কতটা মানবিক। বিদেশের সব দেশে দেখা গেছে প্রথমদিকে অনেক ক্ষেত্রেই শিথীলতা বজায় রেখেছিল কিন্তু যেমন পরিস্থিতি সিরিয়াস হয়েছে তত কঠিন হয়েছে শিথীলতা। শেষেরদিকে লকডাউনে খুবই কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে সেই দেশগুলো। আর ভারতে প্রথম অবস্থায় মানুষকে গৃহবন্দি করে দিল। মানুষের রোজগার বন্ধ করে দিল, জীবন বিপন্ন করে তুলল আর যখন সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে লাগলো তখনই ঘোষণা করে দিল আনলক ১। মানে এবার আপনি বাইরে গিয়ে মরুন। সরকার আপনার দায়িত্ব আর নিতে পারছে না। যখন লকডাউন ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী তখনই একইসাথে পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করতেই পারতেন যাতে তাঁরা নিজের রাজ্যে বাড়ি ফিরে আসতে পারতো।সেটা না করে তিনি হঠাৎ মাঝপথে ঘোষণা করলেন পরিযায়ী শ্রমিকদের তাদের রাজ্যে পাঠানো হবে। প্রথমে বাসে করে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলে পরবর্তীতে ট্রেনে করে ফেরানো হল। সেই সময়ে সকলকে টিকিটে কেটে ফিরতে হয়েছে নিজেদের বাড়িতে। একে কাজ নেই, তার উপর টাকা নেই, এবার মাথার ছাদটাও কেড়ে নিলেন প্রধানমন্ত্রী। কি নির্মম সিদ্ধান্ত! অনেকে টাকা বাঁচাতে গিয়ে পায়ে হেঁটে ফেরার সিদ্ধান্ত নিল কিন্তু তাতে লাভ কি হল রাস্তাতেই হাঁটতে হাঁটতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু, ক্লান্তিতে মৃত্যু, দুর্ঘটনায় মৃত্যু। এর কি কোন দায় নেবে কেন্দ্র সরকার? তাদের সেরকম কোন মনোভাবই নেই। তাদের প্রয়োজন শুধু রাজনৈতিক ফয়দা, ভোটের রাজনীতি। এটা কি দেশ না অন্যকিছু?