গুমনামীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সত্য রহস্যের সন্ধানে এবার আসছে “সন্ন্যাসী দেশনায়ক”
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ৩১শে অক্টোবর ২০১৯ : ২০১৯ সালটা নেতাজিকে নিয়ে যেন অতিরিক্ত মেতে উঠেছে বাংলা সিনেমার নির্দেশকেরা। সাম্প্রতিক “গুমনামী” নামে এক অদ্ভুত বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে যেখানে নেতাজির জীবন নিয়ে টি আর পি বাড়াতে কাল্পনিক ভাবনা দেওয়া হয়েছে, যার সাথে নেতাজির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার অনেক ক্ষেত্রেই মিল নেই। যাই হোক প্রযোজক টাকা দিয়েছেন আর সৃজিত মুখার্জি ছবি বানিয়েছেন আর দর্শকেরা তা হলে বসে মজা নিয়েছেন। এর পিছনে একটাই কারণ, নেতাজিকে নিয়ে বাজারে আজও কিছু এলে বাঙালি অনেকটা আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে। এবার সেই বাংলা ছবিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মুক্তির জন্য তৈরি হচ্ছে মা লক্ষ্মী প্রসাদ ফিল্মস প্রযোজিত এবং অম্লান কুসুম ঘোষ নির্দেশিত “সন্ন্যাসী দেশনায়ক”। ছবিতে মুখ্য ভুমিকায় রয়েছেন প্রবীণ শিল্পী ভিক্টর ব্যানার্জি। এছাড়া ছবিতে অভিনয় করেছেন লকেট চ্যাটার্জি (লীলা রায়), স্বাস্বত চ্যাটার্জি (মেহের আলি), অজয় সিং, নরেন্দ্র পাঞ্জওয়ানি, উদয় বীর সিং, অরিজিৎ চৌধুরী, রুমা ভদ্র ও অঙ্কুর রায় (নেতাজি গবেষক) সহ অনেকে।গল্পের সাথে নেতাজির চরিত্রে ভিক্টর ব্যানার্জিকে অদ্ভুতভাবে মানিয়েছে।
এই ছবিতে দেখানো হয়েছে স্বাধীনতার পর ভারতে নেতাজি কোথায় কোথায় থেকেছেন। নিজেকে গাঁ ঢাকা দেওয়ার জন্য কোথাও নেতাজি ২-৩ মাসের বেশি থাকতেন না। এলাহাবাদে নেতাজির বিভিন্ন আস্থানার কথাও দেখানো হয়েছে। সেই সময় কে কে নেতাজির সাথে দেখা করতে যেতেন তাও দেখানো হয়েছে।যে গুমনামী নিয়ে এত রহস্য আসলে সেই গুমনামীর কি আদৌ মৃত্যু হয়েছে। না, সেই গুমনামীর মৃত্যু হয় নি। যেই মৃতদেহ গুমনামী বলে শ্মশানে দাহ করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা আসলে গুমনামী ছিলেন না। গুমনামীর মত দেখতে এমন একজনকে সেদিন দাহ করা হয়েছিল, সেটাও এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে।গুমনামী থেকে সকলকে চোখে ধুলো দিয়ে সর্ব শেষ অযোধ্যা পাহাড়ে নেতাজি কি অবস্থায় ছিলেন তাও দেখানো হয়েছে।
এই গোটা কান্ডটা ঘটানো সম্ভব হয়েছে কলেজের একদল ছাত্রের জন্য।এই ছাত্রের দলের মধ্যে রুমা ও অঙ্কুর সেই ভুমিকায় অভিনয় করেছেন।তারা তাদের কলেজের একটা শর্ট ফিল্ম তৈরির প্রোজেক্টের জন্য তথ্য জোগাড়ে বেড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেই শর্ট ফিল্মের নাম করে পূর্ণ দৈর্ঘ্যের একটা ছবি বেশ সাহসিকতার সাথে তৈরি করেছে অম্লান কুসুম ঘোষ।দীর্ঘ ১২ বছরের গবেষণায় সব তথ্য সম্বলিত করে ছবিটা তৈরি করেছে অম্লান।ছবির শুটিং শুরু হয় ২০১৬ সালে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল ভারতের এই রাজনৈতিক হুমকির সামনে কতটা নিজেকে পোক্ত ভাবে রুখে দাঁড়াতে পারবে। ভারত সরকার কি এমন একটা তথ্য বাজারে আসতে দেবে দর্শকদের সামনে? এই ছবি মুক্তির পর কংগ্রেসের পর্দাটা আরও উন্মোচন হয়ে যাবে না? আমি একজন নেতাজি বিশেষজ্ঞ হিসাবে একটা কথা হলফ করে বলতে পারি “গুমনামী”কে চ্যালেঞ্জ করার মত যথেষ্ট রসদ আছে এই ছবিতে। একইসাথে নির্দেশকের সাহসকে তারিফ করতে হয়।স্বাধীনতার পর নেতাজিকে নিয়ে এরকম একটা সাহসী পদক্ষেপ বোধহয় একজন বাঙালির পক্ষেই নেওয়া সম্ভব, যা শ্যাম বেনেগল থেকে সৃজিত কেউই তা করতে পারেন নি।তবে এই ছবি দেখার পর অনেকের মনের আনাচে কানাচে যে সব প্রশ্ন দানা বেঁধে ছিল তা অনেকটাই পরিষ্কার হবে।