তথ্য রহস্যপ্রথম পাতা

৯৯ বছর বয়সেও দক্ষিন ২৪ পরগণায় বিপ্লবী আজও সমাজসেবায় ব্রতী

অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ : ব্রিটিশ আমলে হাতে বন্দুক থাকতো। ব্রিটিশদের প্রশাসনিক বৈঠকে বোমা মারা্র ছক কষেছিলেন তিনি। যেকারণে বহুবার জেলেও গিয়েছেন। আত্মগোপন করে পালিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছেন। আর স্বাধীনতার পর সেই হাত দিয়েই নতুন ভারত গড়ার কাজে নেমে গিয়েছিলেন তিনি। টিভি, মিডিয়া, রাজনীতি সকলের চক্ষুর অগোচরে গিয়ে নিঃশব্দে কাজ করে যাচ্ছেন ওই ৯৯ বছর বয়সেও। সুধাংশু বিশ্বাস। যিনি এক সময় অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন।তিনি নেতাজিকে দেখেছেন, তাঁর আদর্শে ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন।

বহুবার ইংরেজদের গুলির হাত থেকে বেঁচেছেন এমনকি মৃত্যুর মুখ থেকেও ফিরেছেন। ২০১৮ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান তুলে দেওয়া হয়। এক সময় তিনি নারায়ণগঞ্জে (বাংলাদেশ) খুব অল্পের জন্য তিনি বেঁচে যান, তারপর স্বাধীনতা সংগ্রামী বীণা দাস ও অমিয় মন্ডলের সাথে কলকাতায় চলে আসেন। ছোটবেলা থেকে তিনি রামকৃষ্ণদেব ও বিবেকানন্দের আদর্শে আদর্শিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিবেকানন্দের আদর্শে হিমালয় চলে যান নিজেকে আধ্যাত্মিক চেতনায় বিলীন হতে। কিন্তু তিনি বহুদিন বেনারসের ডোম ও চামার-দের সাথে কাটিয়েছেন এবং ১৪ বছর ধরে তিনি সেই কাজও করেছেন সেখানে। এখানে ডোমরা মৃতদেহকে পড়ানোর সময় বাঁশ দিয়ে মাথার খুলি ফাটাতেন।এরপর তিনি ফিরে আসেন কলকাতায়। এতবছরের রোজগার নিয়ে তিনি সমাজসেবা করার সিদ্ধান্ত নেন কিন্তু অবশেষে তিনি প্লাস্টিক কারখানা করেন। সেই সময় তিনি অল ইন্ডিয়া প্লাস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক হিসেবে সাংসদে আমরণ অনশন আন্দোলন করেন কিন্তু শেষে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির অনুরোধে সেই অনশন ভাঙেন। নিজের ব্যবসা করতে করতে তিনি পাশাপাশি আশ্রম ও স্কুল শুরু করেন যা আজও চালাচ্ছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি নিজের ব্যবসা বন্ধ করে তিনি কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ কিমি দূরে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিষ্ণুপুরের রামকৃষ্ণপুরে (বারুইপুরের দুটো স্টেশন পর দক্ষিণ দুর্গাপুর স্টেশন) রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এই স্কুলের শিলান্যাস করেন রামকৃষ্ণ মিশনের বেলুড় মঠের

সারদাপীঠের মহারাজ সেক্রেটারি মহানন্দজী মহারাজ। এবং এখানে তিনি অনাথ শিশু এবং পথশিশুদের শিক্ষা প্রদান করে থাকেন সাথে তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাও করেন। তিনি একই সাথে গৃহহারাদের এবং যে পরিবারের কোন রোজগার করার মত কেউ নেই তাদেরও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। চার দশকে তিনি ১৮টি আবাসিক স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই স্কুলে শুধু ছাত্রদের রাখা হয় কারণ এখনও ছাত্রীদের রাখার মত পরিকাঠামো নেই। এছাড়া বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সামান্য আর্থিক সহায়তায় রাখার ব্যবস্থা করেছেন। হাজার হাজার ছাত্র পড়াশুনো করছেন সুধাংশু বিশ্বাসের এই স্কুলগুলোতে। স্কুলগুলোতে পড়াশুনো ছাড়া ভোকেশনাল ট্রেনিং, ফ্রি মেডিকাল ক্যাম্প চালানো হয় এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও আছে।সবকটা স্কুল পরিবেশবান্ধব ও সোলার পরিচালিত। তিনি আজও শুধুমাত্র একটা সাধারণ গেঞ্জি, ধুতি ও টুপি মাথায় দিয়ে গণিত শিখিয়ে চলেছেন এই ৯৯ বছর বয়সে। কিন্তু স্কুল চলাকালীন কেউ তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে না।তখন তাঁর একটাই নজর শিক্ষা প্রদান করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *