দিল্লিতে বিজেপি নেতৃত্ব বাংলাকে ন্যায্য বকেয়া অর্থ থেকে বঞ্চিত করছে, অন্যদিকে বঙ্গ বিজেপি মহিলাদের সম্মানে আঘাত করছে: তীব্র আক্রমণ তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা নেতৃত্বের
অম্বর ভট্টাচার্য, তকমা নিউজ, কলকাতা, ১০ই জুন ২০২৫ : রবিবার সন্দেশখালির সভায় গিয়ে মহিলাদের সিঁদুর ও শাঁখার ওপর দাম বেঁধে দেওয়ার মতো কুৎসিত মন্তব্য করায় শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন ড. কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও ড. শশী পাঁজা।
বাংলার নারীদের প্রতি বিজেপির বারবার অপমান ও অপপ্রচারের জবাবে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী ড. কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও ড. শশী পাঁজা রাজ্যের অগণিত নারীর সম্মানে আঘাতকারী মন্তব্যের জন্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করেছেন।
ড. শশী পাঁজা বলেন, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এক ঐতিহাসিক প্রকল্প, যা বাংলার ২.২১ কোটিরও বেশি মহিলার ক্ষমতায়ন করেছে। অথচ কাল শুভেন্দু অধিকারী লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে কথা বলার সময় বলেন, মহিলারা যেন ৫০০-১০০০ টাকার জন্য সিঁদুর-শাঁখা বিক্রি না করেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার একটি সার্বজনীন প্রকল্প — বাংলার প্রতিটি নারীর জন্য, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে চলা বাছাই করা প্রকল্পগুলোর মতো নয়। ২০২৪ লোকসভা ভোটের সময় বিজেপি নেতারা বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেবে। এবার তারা মহিলাদের সিঁদুর ও শাঁখার দাম ঠিক করছে। আমরা দাম ঠিক করিনি, কারণ আমরা মা-বোনেদের অপমান করতে পারি না, যেমনটা ওরা করে।”
বিজেপির নারীবিদ্বেষী ও বাংলা-বিরোধী মানসিকতার কড়া সমালোচনা করে ড. কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, “উনি (শুভেন্দু) এই জেলায় শুধু মহিলাদের অপমান করতে, কুৎসা করতে আসেন। শুধু উনি নন, দেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এখানে এসেছিলেন। কালও শুভেন্দুবাবু বারবার মহিলাদের অপমান করেছেন এবং তাদের ওপর দাম বসিয়েছেন! এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। বিজেপির এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে একসঙ্গে প্রতিবাদ করছেন বাংলার সমস্ত নারী।”
বিজেপির দ্বিচারিতা তুলে ধরে ড. শশী পাঁজা প্রশ্ন তোলেন, কেন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে এরকম প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না? তিনি বলেন, “বর্তমানে ওরা বহু রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী কেন সেই সব রাজ্যে এই প্রকল্প চালুর দাবি করছেন না? কেন ওখানে প্রতিটি মহিলাকে ৩,০০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে না?” তিনি আরও বলেন, “মহারাষ্ট্রে জেতার পরদিনই আমলারা প্রকল্পের কাঠামো নতুন করে ভাবতে শুরু করে দেয়, কীভাবে এই প্রকল্প চালু থাকবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়।”
বিজেপির এই বাছাই মডেলের পর্দাফাঁস করে ড. শশী পাঁজা বলেন, “দিল্লিতে এই প্রকল্পের জন্য আয় সংক্রান্ত যোগ্যতার শর্ত বসানো হয়েছে এবং প্রতি পরিবার পিছু একজন মহিলাকে তালিকায় রাখা হয়েছে। বাংলায় প্রতিটি পরিবারে থাকা ২১ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারী লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধা পান। কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে তা হয় না।”
সন্দেশখালির ঘটনাকে বিজেপির পরিকল্পিত প্রতারণা আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “ওরা সন্দেশখালির মহিলাদের ভুল বুঝিয়ে, ঠকিয়ে, তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে পরে তাঁদের নাম করে ভুয়ো অভিযোগ দায়ের করেছে। একটি স্টিং ভিডিওয় দেখা গেছে, বিজেপি অঞ্চল সভাপতি নিজেই বলছে, মহিলাদের প্রতারিত করেছে বিজেপি।” তিনি আরও বলেন, “সেই সন্দেশখালিতেই আবার গতকাল মহিলাদের অপমান করা হয়েছে। বিজেপিকে ক্ষমা চাইতেই হবে।”
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীরা কেন্দ্রীয় তহবিল আটকে রাখার বিষয়টিও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাড়ি, রাস্তা ও পানীয় জলের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল বাংলার অধিকার। কিন্তু সেই টাকা আটকে রেখে বিজেপি আমাদের অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরি করে দেবে। যে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ওরা এখন ক্ষমতায় আছে, সেখানে কোথায় ৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে গরিবদের? বাংলার গরিব মানুষদের বঞ্চনা করা হয়েছে।”
বহুদিন ধরে কেন্দ্রীয় তহবিল আটকে রাখার প্রসঙ্গ তুলে ড. কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, “আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি ও কলকাতায় অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন, কারণ কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার গরিব মানুষের প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে। বাংলার প্রায় ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রেখেছে কেন্দ্র। ওরা জিএসটি মারফত টাকা নিচ্ছে, কিন্তু আমাদের প্রাপ্য অংশ দিচ্ছে না।”
তিনি আরও বলেন, “শুভেন্দু অধিকারীকে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসিত মন্তব্য করার জন্য না কেউ ক্ষমা চেয়েছে, না বিজেপির তরফে নিন্দা করা হয়েছে। বরং শীর্ষ নেতাদের বাহবা পেয়েছে সেই মন্তব্য। ওরা কীভাবে ‘সম্মান যাত্রা’ করতে পারে মহিলাদের জন্য? এতে ওদের বাংলা-বিরোধী ও নারী-বিরোধী মানসিকতা পরিষ্কার।”
অন্যান্য বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে ড. কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, “সুকান্ত মজুমদার এখন একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তাও আবার শিক্ষা মন্ত্রকের। তিনি বললেন, মানুষ রাতে স্ত্রীর দিকে তাকালে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ দেখতে পাচ্ছে! শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী একজন ভদ্র মানুষ বলেই চুপ থাকেন, তাই বলে এরকম অশ্লীল মন্তব্য করে যাবেন? এই নোংরা রাজনীতি বন্ধ করুন। বাংলার নারী সমাজ এটা আর সহ্য করবে না।”
তিনি আরও বলেন, “গত নির্বাচনের সময় তাদের এক প্রার্থী, যিনি একসময় বিচারপতি ছিলেন, বলেছিলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর দাম কত?’ প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রীকে বারমুডা পরে হাঁটতে বলেছিলেন, আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বলেছিলেন, ‘জশন মনা রাহি হ্যায়, ঠুমকে লাগা রাহি হ্যায়’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এইসব মন্তব্যই বিজেপির নারীবিদ্বেষী মনোভাবই প্রকাশ করে।”
জেলা মহিলা সভানেত্রী স্বপ্না বোস বলেন, “বাংলার নারীদের নিয়ে বিজেপি নেতাদের এই ধারাবাহিক কুৎসিত মন্তব্যের যোগ্য জবাব তারা পাবে ২০২৬ সালের নির্বাচনে।”