রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৩৫ নং ওয়ার্ডে এখন উন্নয়নের স্বস্তি, ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর বিদায়ী পৌরপিতা গৌরহরি ও দেবাশিস দাশ
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ১৪ই জুন ২০২০ : রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৩৫ নং ওয়ার্ড যা দীর্ঘদিন বামেদের হাতে ছিল আজ গতবারের নির্বাচনে প্রথমবার আসে তৃণমূলের দখলে।কিন্তু প্রথম পাঁচ বছর যদিও ওয়ার্ডের মানুষ উন্নয়নের আশা করেছিল কিন্তু উন্নয়ন না পাওয়ায় সে আশাও ছেড়ে দিয়েছিল। এই ওয়ার্ডের পৌরপিতা গৌরহরি দাস এই পাঁচ বছরে উন্নয়ন ছেড়ে লেগে পড়েছিলেন নিজের উন্নয়নে।নিজের একটা টিনের স্কুলকে সামনে রেখে একটা পাকা বাড়ির নির্মান করে তা ভাড়ায় দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসাবে পৌরসভাকে। এছাড়া শোনা যাচ্ছে এই ওয়ার্ডের বিদায়ী পৌরপিতা গৌরহরি দাস ও তাঁর অনুগামীদের নেতৃত্বে রানিয়া মৌজার একটি ছয় বিঘা ভেস্টেড জমি বিক্রি করা হচ্ছে, এবং প্রথম ক্ষেপের প্রায় ২০ লাখ টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন অনেকে। বিরোধী বলতে গেলে বিজেপি আগামী পৌরসভা নির্বাচনে এই ঘটনাকে প্রধান হাতিয়ার করবে বলে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া তো এলাকায় বাংলা ও চোলাই বিক্রির স্বর্গরাজ্য করে ফেলেছেন পৌরপিতা গৌরহরি দাস।ওয়ার্ডে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের বিপরীতে পৌরপিতার মদতে রমরমিয়ে চলছে এই বেআইনি মদের কারবার। আর বেনিয়মের রোজগারের তো আর হিসাব নেই।
তবে সাম্প্রতিক শোনা যায় তিনি নাকি অসুস্থ, বেনিয়েমের রোজগার প্রায় সব চলে গেছে তাঁর চিকিৎসার জন্য।কিন্তু তাঁর এই অসুস্থতার সুযোগে তাঁর কিছু অনুগামীরা ময়দানে নেমে পড়েন যখনই তাঁরা জানতে পারে তিনি আর হয়তো এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। ব্যাস এর থেকে বড় সুযোগ আর কি হতে পারে।পৌরপিতা ঘনিষ্ট কিছু মানুষ একের পর এক অসামাজিক কাজ হতে শুরু হয়ে যায় ওয়ার্ডে যাদের মানুষ কোনভাবেই মেনে নিতে পারে নি। মানুষ এবার আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। লোকসভা নির্বাচনে তাঁর একটা প্রভাব দেখা গেছে। এই ওয়ার্ডে বিজেপি বিপূল মার্জিনে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে দিয়েছিল। ওয়ার্ডে কিছু মানুষ তখনও ছিলেন যারা দলটাকে ভালবেসে মানুষের পাশে থাকতে চান। যারা মমতা ব্যানার্জিকে আদর্শ করে বাঁচতে চান। তাঁরা দলকে সামনে রেখে কামাতে আসেন নি বরং নিজের চাকরির অর্জিত টাকা খরচ করে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। সেইসব মানুষগুলো কিন্তু এই বেহাল অবস্থাতেও দলের উপর আস্থা রেখে মানুষের পাশে থেকেছেন। উপকার করেছেন, বিধায়ককে ধরে সবটা না হলেও কিছু হলেও উন্নয়ন করেছেন নিজের ও পার্শবর্তী কিছু এলাকায়।মানুষ তো এটাই দেখতে চায়। এসে গেল করোনা, হল লকডাউন। মানুষ গৃহবন্দি, সেই সময় মানুষের পাশে ছিলেন ওয়ার্ডের অনেকেই। ওয়ার্ডের এই মানুষগুলো সাধ্যমত খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন, এমনকি রান্না করা খাবার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন।
এবার তো রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেল। সরকারের নির্দেশে সেখানে পূর প্রধান সহ ৫ জন সি আই সি প্রশাসকমন্ডলীর সদস্য হলেন। কিন্তু এই পৌরসভার ৩৫টা ওয়ার্ড দেখা সম্ভব কি মাত্র ৬জনে? তাই এবার তৈরি হল ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর। অনেকে মুখিয়ে ছিলেন যদি একটা বার ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর পদটাও আসে। কিন্তু বিধায়ক বিদায়ী পৌর পরতিনিধিকে গুরুত্ব দিয়ে সাথে তাঁর মনোনীত প্রতিনিধি নিয়োগ করেছেন যাতে উন্নয়ন কোন অবস্থাতে থমকে না যায়। রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৩৫ নং ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর হিসাবে নিযুক্ত হলেন পৌরপিতা গৌরহরি দাস এবং সব সমালোচনা, সব বিতর্ককে উর্দ্ধে রেখে এই ওয়ার্ডের অনেকেরই পছন্দের দেবাশিস দাশ।গৌরহরি দাস কলকাতা কর্পোরেশনের ১১৩ নং ওয়ার্ডের পুরপিতা গোপাল রায় ঘনিষ্ট হওয়ার কারণে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সাহায্য নিয়ে নিজের টিকিট নিশ্চিত করলেও এবার সেই গোপাল রায় আর হয়তো করবেন না বলে সূত্রে খবর।এবার মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পেল, আবার মানুষের মনে নতুন করে আশা জাগালো হয়তো এবার সুন্দর হবে।আবার নিজেদের তৃণমূল ঘরটাকে নতুন করে বাঁধার স্বপ্ন দেখছে যা এক সময় বিজেপি ভেঙে দিয়েছিল। এই ওয়ার্ডের এক সময়ের তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি আজ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আর তিনি ওয়ার্ডের তৃণমূলের সাধের ঘরটাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলেন যা আজ হয়তো ফের একবার জোড়া লাগতে চলেছে।দেবাশিস দাশ সারা বছর ধরে রানিয়া সমন্বয় সমিতির ব্যানারে প্রচুর সমাজসেবামূলক কর্মসূচী করে থাকেন যেমন রক্তদান শিবির, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের সম্বর্ধনা, রাখি উৎসব, বৃক্ষরোপণ, ত্রাণ বিলি থেকে করোনা ও আমফানে দুর্গত মানুষদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ সহ আরও অনেক অনুষ্ঠান যা পৌরপিতার তরফে উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল কিন্তু তা হয় নি। মানুষ নিরাশ হলেও এবার ফের আশায় বাঁধবে ঘর।এই ওয়ার্ডের যুব সমাজ থেকে আপামর মানুষ দলমত নির্বিশেষে প্রায় সকলেই ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য এই দেবাশিস দাশকে চাইছেন বলেও জানা যায়। বিগত লোকসভা নির্বাচনে বিদায়ী পৌরপিতার অনুগামীরা সামনের সারিতে ছিলেন বলে এই ওয়ার্ডের মানুষ ক্ষোভে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন বলে স্হানীয় মানুষের ধারণা।স্থানীয় কয়েকজন এমনও জানালেন যে, বিদায়ী পৌরপিতা ও তাঁর অনুগামীদের নীতিহীন কামানোর রাজনীতির জন্যই এই ওয়ার্ডের যুব সমাজের বৃহৎ অংশ বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন।যদি এভাবেই চলতে থাকে তবে এই ওয়ার্ড বিজেপির হাতেই থাকবে বলে ধারণা ওয়ার্ডবাসীদের।