লকডাউনে আঁটকে থাকা ভিন জেলার শ্রমিকদের দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি ফেরালেন মানবিক অভিভাবক বিধায়ক ফিরদৌসী
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ২৯শে এপ্রিল ২০২০ : করোনায় সারা বিশ্বে আক্রান্ত ৩২,১৯, ৪৮৫ আর মৃত্যু হয়েছে ২,২৮,২০১ মানুষের।বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলো করোনা জীবানুর থাবায় নাজেহাল হয়ে গেছে, যাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভারতের থেকে অনেক উন্নত। সেই দেশগুলোও না আটকাতে পারছে করোনা থেকে আক্রান্ত, না আটকাতে পারছে মৃত্যু। ইতিমধ্যে আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০,৬৪, ১৯৪ আর মৃত্যু হয়েছে ৬১,৫৬৫, ইতালিতে মৃত্যু হয়েছে ২৭,৬৮২, ইউ কে-তে মৃত্যু হয়েছে ২৬, ০৯৭, স্পেনে মৃত্যু হয়েছে ২৪,২৭৫, ফ্রান্সে মৃত্যু হয়েছে ২৪, ০৮৭। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩, ০৬২ আর মৃত্যু হয়েছে ১০৭৯। তবে একটাই আশার আলো বর্তমানে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের ঘটনা সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৩০১ জন যা এতদিন ছিল প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার।
ভারতের করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মহারাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ৯৩১৮ যেখানে মৃত্যু হয়েছে ৪০০ মানুষের। এরপরেই রয়েছে ৩৭৭৪ জন আক্রান্ত, দিল্লিতে ৩৩১৪, মধ্যপ্রদেশ ২৫৬১, রাজস্থান ২৩৬৪, উত্তরপ্রদেশ ২১১৫, অন্ধ্রপ্রদেশ ১৩৩২, তেলেঙ্গানা ১০১২ এবং পশ্চিমবঙ্গ ৭৫০ জন আক্রান্ত।ভারত যে এই মুহুর্তে খুব একটা ভাল জায়গায় নেই তা জোর দিয়ে বলা যেতেই পারে। তবুও ভারত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এই করোনার থাবা থেকে বাঁচতে। ইতিমধ্যে কেরল ও গোয়া করোনা মুক্ত রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কেরল প্রথমদিকে আক্রান্তের তালিকায় শীর্ষে ছিল।
এদিকে গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে করোনার উৎপাতে সেই ২২শে মার্চ থেকে প্রথম লকডাউন শুরু হয়। লকডাউন শুরুর দিন থেকে সোনারপুর উত্তর বিধানসভার বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন যাতে তাঁর বিধানসভার মানুষের খাদ্যের অভাব যেন না হয়। প্রথমে তাঁর নিজের কার্যালয় থেকে প্রতিদিন ১০০০ মানুষকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। এছাড়া বিধানসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে মানুষকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণেও সাহায্য করেন। তারপর তিনি ২০শে এপ্রিল থেকে প্রতিদিন দুঃস্থ, প্রতিবন্ধি, প্রবীণ নাগরিক ও ভবঘুরেদের জন্য রান্না করা খাবার বিতরণ করে চলেছেন।প্রতিদিন তিনি ২০০০ থেকে ৩০০০ মানুষকে এই রান্না করা খাবার যার নাম দিয়েছেন “নগরলক্ষ্মী”। তাঁর সাথে একই সাথে লড়াই চালাচ্ছেন সোনারপুর উত্তর বিধানসভার প্রধান সংগঠক ও রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার সি আই সি নজরুল আলি মন্ডল। নজরুল মণ্ডল যেমন খাদ্য বিলি করেছেন তেমনই বিধানসভার সব বাজার জীবাণুমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এবার বিধায়ক ও নজরুল আলি মন্ডলের উদ্যোগে এবং সোনারপুর উৎসবের সহযোগিতায় সোনারপুর উত্তরে বসবাসকারী প্রায় ৩০০ জন ভিন জেলার শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।সাম্প্রতিক বাইপাসের ধারে পেপসি কারখানার সামনে থেকে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া জেলায় প্রায় ১২টা বাসে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে শ্রমিকদের তাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরতে দায়িত্ব নিয়ে সাহায্য করেন বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম ও নজরুল আলি মন্ডল।একেবারে একজন দায়িত্বশীল অভিভাবকের মত উদ্যোগ নিলেন বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম।তিনি বলেন বিভিন্ন জেলা থেকে বহু মানুষ এই বিধানসভায় কাজের জন্য আসে। কিন্তু লকডাউনের ফলে তাঁরা সকলে আটকা পড়ে যায়।লকডাউনের সময়সীমা বাড়ার কারণে তাদের একদিকে খাদ্যের অভাব অন্যদিকে অর্থের অভাব দেখা দেয়।যদিও তাদের খাবারের অভাব ছিল না কারণ আমরা প্রতিটা অঞ্চলে মানুষ চিহ্নিত করে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু অর্থের অভাব কোথায় যাবে? তাই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় সরকারি পদ্ধতিতে সকলের নাম ও নম্বর নথিভুক্ত করে নিরাপদে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। এদিন উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম, নজরুল আলি মন্ডল, সোনারপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর সরকার, সোনারপুর উত্তর বিধানসভার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি পাপাই দত্ত, নরেন্দ্রপুর থানার আই সি সুখময় চক্রবর্তী সহ অনেকে।