প্রশাসিনিক স্তরে জরুরীভিত্তিতে গড়িয়া স্টেশন সম্পূর্ণ লকডাউনের আওতায়, আগামীকাল থেকে বাজার দোকান খোলা নিয়ে খুব কড়াকড়ি
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ১৮ই এপ্রিল ২০২০ : গড়িয়া স্টেশনে কিশান মজদুর বাজার এবং সান্ধ্য বাজার নিয়ে দফায় দফায় নরেন্দ্রপুর থানার আই সি সুখময় চক্রবর্তী এবং রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার সি আই সি নজরুল আলি মন্ডল মিটিং করেন এবং বারবার সতর্ক করা হয় এই দুটি বাজারের দোকান খোলার ব্যাপারে। প্রতিবার বলা হয় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্য। কিন্তু এই দুটো বাজারের পরিচালন কমিটির উদাসীনতায় সেই নির্দেশ সেভাবে মানা হয় নি। কিশান মজদুর বাজার ও সান্ধ্য বাজার চলেছে রোজকার মত।কখনই দেখে মনে হয় নি যে রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল ও সন্ধ্যাবেলা মানুষের ভিড় বুঝিয়ে দিয়েছে প্রশাসনের কথার কোন গুরুত্ব নেই। বিভিন্ন সময় নরেন্দ্রপুর থানার আই সি ও পুলিশ হানা দিয়েছে, মানুষ ও দোকানদারদের বহুবার কড়া ভাষায় সতর্ক করেছে কিন্তু যেই মাত্র পুলিশ চলে গেছে সেই মাত্র একই চিত্র দেখা গেছে। কোনভাবেই গুরুত্ব দিতে চায় নি বিক্রেতা থেকে ক্রেতারা।
কিন্তু মহকুমা শাসকের নির্দেশে এবার সব বন্ধ হতে চলেছে গড়িয়া স্টেশন। সকাল ১০টার পর কোন দোকান আর খোলা থাকবে না, প্রশাসনিক ভাবে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।শুধুমাত্র ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। কিশান মজদুর বাজার, সান্ধ্য বাজার ও গড়িয়া স্টেশনের মাছের কাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হল। আজ পৌরসভায় এক গড়িয়া স্টেশনের এই দুই বাজারের মাছের কাটা ব্যবসায়ী ও পৌর প্রিতিনিধিদের নিয়ে জরুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নরেন্দ্রপুর থানার আই সি সুখময় চক্রবর্তী, সি আই সি নজরুল আলি মন্ডল, সোনারপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর সরকার, পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার শুভাশিস বসু, পৌরমাতা পাপিয়া হালদার, পিন্টু দেবনাথ, জয়ন্ত সেনগুপ্ত, তপন দে, মিঠু দে, সুকান্ত মন্ডল সহ অনেকে। সেখানে নরেন্দ্রপুর থানার আই সি ঘোষণা করেন এলাকায় কয়েকটি ঘটনার জন্য গড়িয়া স্টেশন এলাকাকে সম্পূর্ণ লকডাউন করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ছড়ানোকে প্রতিরোধ করতে সোনারপুর উত্তর বিধানসভার ১, ৪, ৬, ২৮, ৩২, ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ নং ওয়ার্ড এবং খেয়াদহ ও বনহুগলীর ৪টি পঞ্চায়েত এলাকাতে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।বিশেষ করে কলকাতা কর্পোরেশন লাগোয়া সব ওয়ার্ডকে সীল করে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এই ওয়ার্ড থেকে যেমন কেউ বাইরে যেতে পারবে না তেমনই বাইরে থেকে ভিতরে অবাধে আসা যাওয়া করতে পারবে না।
একেবারে ১০৯ নং ওয়ার্ডের লাগোয়া রাজপুর সোনারপুরের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ড হওয়ার কারণে বেশি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে।যদিও ২ ও ৩ নং ওয়ার্ড তালিকায় নেই কিন্তু সতর্কতা ও সাবধানতার কারণে এই দুটো ওয়ার্ডও সীল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।সবজি ও মাছের বাজার ওয়ার্ডের মধ্যে ছোট ছোট জায়গা করে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বসানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। বাইপাস থেকে গড়াগাছার প্রবেশ পথ শীল করে দেওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র গড়িয়া স্টেশন রোড খোলা থাকবে।বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসবে পুলিশের নাকা চেকিং।কোন জরুরী ভিত্তিতে বাইরে যাওয়া যাবে তবে তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণ পত্র দেখাতে হবে। এব্যাপারে গড়িয়ে স্টেশনের এলাকা থেকে ভলেন্টিয়ারের আবেদন করেছেন নরেন্দ্রপুর থানার আই সি যারা পুলিশের সাথে নাকা চেকিং-এর সময় কাজ করবে। মানুষের অতিরিক্ত উদাসীনতার কারনেই আজ এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হল। থানার আই সি বহুবার মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে প্রতিটা ওয়ার্ডের পূর প্রতিনিধিদের দায়িত্বের সাথে মানুষকে পরিস্থিতি সম্বন্ধে সারাদিন সচেতন করতে হবে একই সাথে দুটো বাজার কমিটিকেও দায়িত্বপূর্বক গুরুত্ব বুঝিয়ে সারাদিন মাইকে প্রচার চালাতে হবে।তাঁর জন্য পুলিশের তরফে পরিচয় পত্র দেওয়া হবে।স্থানীয় সবজি ও মাছ বিক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে বৈঠকে বলা হয় বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভ্যানে করে সবজি ও মাছ বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে।ইতিমধ্যে কিশান মজদুর বাজারের একাংশ স্থানান্তরিত করা হয়েছে, এছাড়া বালিয়া বাজার একইরকম থাকবে।কিন্তু কোন মুদির দোকান, মুরগীর মাংসের দোকান বা মিষ্টির দোকান সকাল ১০টার পর খোলা রাখা যাবে না। এছাড়া বাকি যেসব সামগ্রীর দোকান আছে তা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার কথাও বলা হয়েছে নির্দেশিকায়।প্রথম অবস্থায় দঃ ২৪ পরগণা অরেঞ্জ জোনে ছিল কিন্তু বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য গড়িয়া স্টেশনকে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মহকুমা শাসক জানিয়েছেন তিনি নিজে সরজমিনে পরিদর্শনে আসবেন।নরেন্দ্রপুর থানার আই সি সুখময় চক্রবর্তী মহকুমা শাসকের নির্দেশিকা পাঠ করে শোনান। যদি কোন আইনভঙ্গ হয় তবে কড়া পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবে না প্রশাসন। নজরুল আলি মন্ডল বলেন কোন ভাবেই সামান্য উদাসীনতার জন্য আমরা মানুষকে এই মারণ রোগে আক্রান্ত হতে দিতে পারবো না। মানুষকে সুস্থ রাখার জন্য বাধ্য হয়েই প্রশাসনকে এই পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। যেভাবেই হোক আমাদের অরেঞ্জ জোন থেকে গ্রীন জোনে আসতেই হবে।