অধিকারী শিরির বিভ্রান্তিতে, মমতা কিছু না বুঝেই কি নন্দীগ্রামে প্রার্থী হয়েছেন? শুভেন্দুর হার নিশ্চিত জেনেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে চাইছেন, আজকের ৩০টা আসনের মধ্যে তৃনমূল এগিয়ে ২০টা আসনে
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ১লা এপ্রিল ২০২১ : মমতা ব্যানার্জি বাংলার রাজনীতিতে সাথে সবেমাত্র এসেছেন তা কিন্তু নয়। মমতার কাছে শুভেন্দু অধিকারী সেই রাজনীতিতে একেবারে সদ্যজাত। মমতা এর আগে বহুবার এরকম পরিস্থিতির সাথে পরীক্ষিত যেখানে শুভেন্দু অধিকারীর থেকেও হাইভ্যালু প্রার্থীদের সাথে মোকাবিলা করে জয়ী হয়েছেন যার মধ্যে রয়েছেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ১৯৮৪ সাল থেকে বাম জামানার বিরুদ্ধে লড়াই করে আজ এখানে পৌঁছেছেন। নিন্দুকেরা বলছেন মমতা ব্যানার্জি কংগ্রেসের সাথে গাদ্দারি করে নিজে দল তৈরি করেছেন, তারপর এনডিএ সরকারের সাথেও সম্পর্ক চুকিয়ে আবার ইউপিএ সরকারের সাথে গাঁট বেঁধেছেন। কিন্তু ভাবতে হবে কেন বারবার দলত্যাগ করেছেন মমতা ব্যানার্জি। প্রথমে কংগ্রেস ছাড়ার মূল কারণ ছিল সেই সময়ের কংগ্রেস রাজনীতির তিন পিলার সেই সোমেন, সুব্রত ও প্রিয় যাদের সেই সময় বহুবার তিনি বলেছিলেন এরা তরমুজ কারণ তারা বামেদের সাথে আঁতাত করে পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিতে বেঁচে ছিল। সেই প্রতিবাদে তিনি দলত্যাগ করে তৃনমূল দল তৈরি করে মানুষকে বুঝিয়েছিলেন বামেদের বিরুদ্ধে এই তরমুজদের সাথে নিয়ে লড়াই করা অসম্ভব। পরবর্তীতে প্রিয়রঞ্জন ছাড়া বাকি দুজন মানে সুব্রত ও সোমেন মমতা ব্যানার্জির কাছে আত্মসমর্পন করেছিলেন। এবার যদি এনডিএ সরকারের সাথে সম্পর্ক ছেদের কথা বলি তাহলে সেই “তাহেলকা” কান্ডের প্রতিবাদের কথা উঠে আসে। মমতা ব্যানার্জি সবসময় প্রদিবাদ করতে গিয়ে সম্পর্ক ছেদ করেছেন। নন্দীগ্রাম নিয়ে সব দলই বলছেন তারা বিপূল ভোটে জয়ী হবে শুধুমাত্র মমতা ব্যানার্জি পরাজিত হবে। আসল অথ্যটা আমরা তুলে ধরছি এবার, কে জয়ী হবে।
আজকের বিরোধীরা বলছেন মমতা ব্যানার্জি-র নন্দীগ্রামে হার নিশ্চিত তাই তিনি অন্য কেন্দ্রের খোঁজ করছেন। বিরোধীরা বলতে “বিজেপি” ভাবছেন মমতা ব্যানার্জি হয়তো রাজনৈতিক বোকা তাই তিনি নন্দীগ্রামের এই পরিস্থিতি না জেনেই সেখানে প্রার্থীপদের কথা জানিয়েছেন? তিনি শুভেন্দুর মতো রাজনৈতিক মুর্খ নন যে এরকম সিদ্ধান্ত নেবেন। শুধু শুভেন্দু নিজে নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন তা নয়, গোটা অধিকারী পরিবার এখন নিজেদের অস্থিত্বের সঙ্কটে ভুগছে। তাই এই বৈতরণী পার হতে নিজের বাবা, ভাই সবাইকে বিজেপিতে যোগ করিয়েছেন। কিন্তু তাতেও সেই স্বপ্ন পূরণ যে হবে না তা তিনি আজ বুঝে গেছেন। তাই শেষমুহুর্ত পর্যন্ত তাঁর প্রতিপক্ষ প্রার্থী মমতা ব্যানার্জিকে আক্রমণ করতে ছাড়েন নি। ক্রমাগত বলে গেছেন মমতা বুঝে গেছেন তাঁর হার নিশ্চিত। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে মমতা ব্যানার্জি নন্দীগ্রাম ছাড়া অন্যত্র কোথাও প্রার্থী হচ্ছেন না। এবার সমালোচকেরা বলছেন কেন মমতা ব্যানার্জি একজন প্রার্থী হিসাবে বয়ালের একটা বুথে অধিকাংশ সময় নিজেকে আটকে রাখলেন? যারা সমালোচনা করছেন তারা নন্দীগ্রামের ১৭টা বুথ সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই বলেই বলছেন। নন্দীগ্রাম ২ ব্লকে আছে বয়াল ১, আমদাবাদ ১, বয়াল ২, খদামবাড়ি ১, খদামবাড়ি ২, বিরুলিয়া ও আমদাবাদ ২ এবং নন্দীগ্রাম ১ ব্লকে আছে মহম্মদপুর, সামসাবাদ, নন্দীগ্রাম, ভেকুটিয়া, গোকুলনগর, সোনাচুরিয়া, দৌদপুর ও হরিপুর। এরমধ্যে বয়াল ১, আমদাবাদ ১ও ২, খদামবাড়ি ১ ও ২, বিরুলিয়া, মহম্মদপুর, সামসাবাদ, নন্দীগ্রাম, ভেকুটিয়া, গোকুলনগর, সোনাচুরিয়া, দৌদপুর এবং হরিপুর অঞ্চল থেকে মমতা ব্যানার্জির পক্ষে অধিকাংশ রায় দেবে মানুষ আর বয়াল ২ অঞ্চল আগাগোড়াই একটু স্পর্শকাতর এলাকা। তাই এই এলাকাতে মমতা ব্যানার্জির নজর বেশি ছিল।
এটা আমার নন্দীগ্রাম সফরের সারমর্ম কারণ আমি সেখানে মাটির মানুষের সাথে কথা বলেছি। অধিকাংশ মানুষ তাদের মতামত জানাতে সংকোচ বোধ করেছেন। সকলের মখেই একটাই কথা ছিল “সকলে যাকে ভোট দেবে আমরাও তাঁকে দেবো” কিন্তু এর পাশাপাশি এটাও বলতে পিছুপা ছিলেন না যে মমতা ব্যানার্জি উন্নয়ন করেছেন, শুভেন্দু শুধুমাত্র সেই উন্নয়নের মাধ্যম হিসাবে কাজ করেছেন।অনেকে সরাসরি বলেছেন “আমরা গর্ববোধ করছি যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন। আমরা একটা সুযোগ পেয়েছি মুখ্যমন্ত্রীকে ভোট দেওয়ার জন্য। অধিকাংশ মানুষের মুখে শুভেন্দু নামটাতে লুকিয়ে ছিল তিক্ততা, বেয়মানি-র গন্ধ। তারা কেউ শুভেন্দুর দলত্যাগের ঘটনাকে মেনে নিতে পারেন নি। ঠিক একইভাবে মেনে নিতে পারে নি অধিকাংশ “দাদার অনুগামী” সদস্যরা। তাদের মুখে একটা কথা ছিল পরিস্কার আমাদের ভুল বোঝান হয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম “দাদা” স্বতন্ত্র একটা দল তৈরি করবেন কিন্তু পরবর্তীতে যখন দেখলাম বিজেপিতে যোগ দিলেন তখন আমাদের আর তৃনমূলে ফিরে যাওয়ার রাস্তা ছিল না।আমরা বর্তমানে না “ঘর কা, না ঘাট কা”। বিজেপিতেও থাকতে পারছি না কারণ সেখানে আমাদের কোন গুরুত্ব নেই আবার তৃনমূলেও ফিরতে পারছি না, ওরা বলছে গাদ্দার। কোথায় যে যাব বুঝে উঠতে পারছি না। নন্দীগ্রামে ৩০% মুসলিম ভোট, আর সেই ভোটটা তৃণমূলের দিকেই। বাকি হিন্দুদের ৬০% ভোটের মধ্যে ভাগ বসাবে বিজেপি, তৃনমূল ও সংশ্লিষ্ট মোর্চা। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয় ৬০% হিন্দু ভোট সমান ভাগে ভাগ হয় তবে তিনটে দল ২০% ভোট পাবে আর তৃনমূল মুসলিম ৩০% ভোটের ২৫% ভোট পায় তবে তৃণমূলের ঝুলিতে ৪৫% ভোট আসছেই। কিন্তু নন্দীগ্রামে বামেরা বেশি ভোট পাবে, হিন্দুদের ২২% ভোট পেলেও বিজেপি ভাগে থাকলো ১৮% তাতেও মমতা ব্যানার্জিকে পরাজয় করা যাচ্ছে না।
অনেকেই জানেন না অভিষেক ব্যানার্জি এই পরিস্থিতি অনেক আগে থাকা আঁচ করতে পেরে কলকাতা থেকে নির্ভরশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে দায়িত্ব দিয়ে নন্দীগ্রামের ১৭টা বুথে পাঠিয়েছিল যারা ২০দিন ধরে রাতদিন মানুষের সাথে কথা বলেছেন, মানুষের মানসিকতা বুঝেছেন, মানুষের অভাব অভিযোগ শুনেছেন ও সমাধান করেছেন। এই ১৭জনের প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন শক্তি প্রতাপ সিং (বয়াল ১), শান্তনু কোনার (আমদাবাদ ১), সম্রাট তপাদার (বয়াল ২), সুপ্রিয় চন্দ (খদামবাড়ি ১), সৌম্য বক্সি (খদামবাড়ি ২), অরূপ চক্রবর্তী (বিরুলিয়া), জয়া দত্ত (আমদাবাদ ২), পাপিয়া হালদার (মহম্মদপুর), রাজীব ঘোষাল (সামসাবাদ), কোহিনুর মজুমদার (নন্দীগ্রাম), শুভ্রকান্তি ব্যানার্জি (ভেকুটিয়া), আবীর নিয়োগী (গোকুলনগর), অর্পন সাহা (সোনাচুরিয়া), পারমিতা সেন (দৌদপুর) ও বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জি (হরিপুর)। এছাড়াও ছিলেন দোলা দেন, কুনাল ঘোষ সহ অনেকে। এই দলের মধ্যে সেই বয়াল ২ অঞ্চলে দায়িত্বে থাকা সম্রাট তপাদার বিজেপি কর্মীদের হাতে গুরুতর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই বয়াল ২ অঞ্চল অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশে পাপিয়া হালদারকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই প্রতিনিধিদের ২০দিন থেকে মানুষের সাথে জনসংযোগের একটা বাড়তি প্রভাব পড়বে অবশ্যই যা বিজেপির কাছে কোন খবর ছিল না। এবার আশা করি পাঠক ও সমালোচকেরা নিজেরাই বুঝেছেন যে মমতা ব্যানার্জির কতটা দূরদর্ষিতা আছে যে সব জেনে নন্দীগ্রামকে নিজের কেন্দ্র হিসাবে বেছেছেন এবং আজ সারাদিন তাঁর অস্থায়ী বাড়ি থেকে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর নজর রেখেছেন।