প্রথম পাতা

ভবানীপুর বিধানসভায় তৃতীয়বার নিজের রেকর্ড ভেঙে সর্বজয়া মমতা শুভেন্দু, মোদী, দিলীপ, অর্জুনের মুখে কালি লেপে দিল

অম্বর ভট্টাচার্য, তকমা, কলকাতা, ৩রা অক্টোবর ২০২১ : সারা দেশকে মনে রাখতে হবে এই খাটো হাইটের মহিলার নাম “মমতা ব্যানার্জি”। সেই গোরার কথা যদি ধরা যায় তাহলে দেখা যাবে তিনি যা মনে করেন তাই করে দেখান। কংগ্রেস থেকে নিজে দলত্যাগ করে সেদিন শপথ নিয়েছিলেন কংগ্রেসকে বুঝিয়ে দেবেন তাঁর প্রতিবাদ সঠিক ছিল। এরপর বানতলা কান্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তৎকালীন বাম সরকারের ধাক্কা খেয়েছিলেন রাইটার্স বিল্ডিং থেকে, সেদিনও শপথ নিয়েছিলেন এই বাম সরকারকে উৎখাত করেই ছাড়বেন, সেদিনই রাইটার্সে প্রবেশ করবেন।

করলেনও তাই, বাম সরকারকে উৎখাত করে নিজে না ঢুকলেও তাঁর মন্ত্রীসভার অনেক মন্ত্রীর কার্যালয় ছিল এই রাইটার্স বিল্ডিং-এ। এবারও তিনি তাঁর প্রতিবাদ থেকে এক পা পিছু হটেন নি। ২০২১ সালের নির্বাচনে শপথ নিয়েছিলেন রাজ্যে কোনমতেই বিজেপি নামক দলটাকে ঢুকতে দেবেন না। তাই হল, মোদী কত “দিদি, ও দিদি” করে করুণ কন্ঠে চিৎকার করল, অমিত শাহ কত হুংকার ছাড়ল- এই বার দোসো পার। শুভেন্দু অধিকারী কত কটুক্তি করল- মমতা বেগম। দিলীপ ঘোষ তো পায়ে প্লাস্টার দেখে উক্তি করে বসলেন- শাড়ি ছেড়ে বারামুডা পড়তে।

সব হজম করেছে বাংলার মানুষ, ভবানীপুরের মানুষ। নন্দীগ্রামে কেন মমতা ব্যানার্জি প্রার্থী হয়েছিলেন জানেন? মমতা ব্যানার্জি নন্দীগ্রামে প্রার্থী হলে শুভেন্দু নিজের গড় ছেড়ে আর কোথাও যেতে পারবে না। আতঙ্কে থাকবে গোটা অধিকারী পরিবার। তাও জয় ও অস্তিত্ব বজায় রাখতে গোটা অধিকারী পরিবারকে চালাকির চাল চালতে হল। তাও শুভেন্দুকে সন্তান সম দেখতেন বলে মা হয়ে সংঘাতে যান নি মমতা ব্যানার্জি। পরাজয় সহ্য করে ফিরে এসেছেন ভবানীপুরে।

কিন্তু উপনির্বাচনেও মোদী, অমিত শাহ ডেইলি প্যাসেঞ্জারি না করলেও অর্জুন সিং, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ এবং সদ্য নিযুক্ত বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা তেব্রিওয়ালের পক্ষে মানুষের কাজে ভোট ভিক্ষা করেছেন। মমতা ব্যানার্জি না করেছেন রোড শো, না করেছেন বাড়ি বাড়ি প্রচার। শুধুমাত্র কয়েকটা পকেট সভা করেছেন, তাতেই হিমশিম খেয়ে গেছেন বাংলার বিজেপি ব্রিগেড। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীকে সবশেষে একপ্রকার কারচুপি করে ১৭৩৬ ভোট জয়ী হতে হয়। এবার ভবানীপুর কেন্দ্রে মমতা ব্যানার্জি তৃতীয়বার প্রার্থী হয়ে জয়ী হলেন। ২০১১ সালে এই কেন্দ্রে উপনির্বাচনে মমতা ব্যানার্জি ৫৪২১৩ ভটে জয়ী হয়েছিলেন, ২০১৬ সালে মমতা ব্যানার্জি আবার প্রার্থী হয়ে ২৫৩০১ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। ২০২১ সালে এই কেন্দ্রে ২৮৭১৯ এবং উপনির্বাচনে সব বিতর্ক, সব উত্তেজনাকে উর্দ্ধে রেখে এক কেন্দ্রের সব ওয়ার্ডে এই প্রথমবার জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বেয়া শেষে তৃণমূল কংগ্রেস মোট ৫৮৮৩৫ ভোটে জয়ী হন। এই ওয়ার্ডে মোট অবাঙ্গালি বসবাসকারীর হার ৪৬% হলেও প্রতিটা ওয়ার্ডের কর্মী ও নেতৃত্বদের ধন্যবাদ জানিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেন এবারের নির্বাচনটা এই কেন্দ্রের সকলের কাছে ছিল একটা চ্যালেঞ্জ। গোটা রাজ্য এই কেন্দ্রের ফলের দিকে তাকিয়ে ছিল। মমতা ব্যানার্জি এবারের উপনির্বাচনে ভোট পেয়েছেন ৮৫২৬৩ (৭১.৯০%) আর বিজেপি প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ২৬৪২৮ (২২.২৯%) এবং সিপিএম পেয়েছেন ৪২২৬ (৩.৫৬%) কিন্তু নোটাতে ভোট পড়েছে ১৪৫৩।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *