প্রথম পাতা

মিঠুন ব্রিগেডে নিজের জাত চেনালেন যে তিনি কত বড় বিষধর কোবরা সাপ

অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ৮ই মার্চ ২০২১ : গতকাল ব্রিগেডে বিজেপির সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। তাঁকে নিয়ে বেশ উত্তেজনা ছিল কারণ তিনি তৃনমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করছেন। কিন্তু একটু আগের ইতিহাসটা যদি একটু দেখা যায় তবে দেখা যাবে মিঠুন চক্রবর্তীকে তাঁর পৈতৃক ভিটেতে প্রবেশাধিকার ছিল না কারণটা মিঠুন নিজেই বলতে পারবেন, যদি এখন মনে থাকে। আজ প্রমানিত হল সেদিন মিঠুনের বাবা বুঝেছিলেন এই সন্তান অনেক বড় কেউটে সাপ।

মিঠুন শুরুতে শোনা যায় নকশাল রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন, এরপর তিনি সিনেমায় আসেন। সিনেমায় জনপ্রিয়তা লাভের পর তিনি সিপিএমের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। সুভাষ চক্রবর্তীর হাত ধরে বাম রাজনীতিতে মাথা লাগান। কলকাতায় হোপ ৮৬ করেন।বাম জামানার মাঝাখানে কংগ্রেসের তৎকালীন মন্ত্রী ভারতের চানক্য বলে পরিচিত প্রণব মুখার্জির সাথে হাত মেলান। কিন্তু কোথাও সেভাবে জায়গা করতে পারেন নি। সুযোগের অপেক্ষায় থাকলেন। এল তৃনমূল, ব্যাস সুযোগ এল, তৃনমূলে যোগদান করলেন, টাকার লোভ করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়লেন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে। তাঁর উপর যে টাকার আরোপ লাগান হয়েছিল সেই টাকা পরিষোদ করে ছাড়লেন তৃনমূল। আবার অপেক্ষার দিনগোনা শুরু। আবার সুযোগ এল, লাফিয়ে চলে এলেন বিজেপিতে। বললেন বিশ্বের সব থেকে বড় রাজনৈতিক দল। বাকি রইলো শুধু কংগ্রেস, পিডিএস, আব্বাস সিদ্দিকি, এআইডিএমকে, মায়াবতীর দলে যোগদান।

আসল কথাটা একবার ভেবে দেখুন। মিঠুন চক্রবর্তী ব্রিগেডে কি কি নিজে মুখে বলেছেন, ১) আমি গর্বিত, আমি একজন বাঙালি। ঠিকই বলেছেন এমন সুযোগ সন্ধানী বাঙালি ছাড়া আর কেউ হতে পারবে না, তিনিই তাঁর উদাহরণ। মৃগয়া থেকে ডিস্কো ডান্সার একমাত্র মিঠুন চক্রবর্তীই হতে পারবেন। কিন্তু অমিতাভ, রাজেশ খান্না বা রাজ কাপুর হতে পারবেন না। ২) আমি কোবরা, এক ছোবলে ছবি। এটাও ঠিক, তিনি যে কতটা বিষাক্ত ছোবল মারতে পারেন তা একসময় জ্যোতি বসু বুঝেছিলেন আর বুঝেছেন মমতা ব্যানার্জি। হয়তো ক’দিন পর বুঝবেন বিজেপি ব্রিগেড। কে বুঝবেন তা জানা নেই। ৩) মারবো এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে। এটাও ঠিকই বলেছেন। এখন থেকেই মিঠুন চক্রবর্তী বুঝিয়ে দিচ্ছেন রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাকে শ্মশানে পরিনত করে দেবেন। মেরে সব লাশ শ্মশানে ফেলে একসাথে কোভিডে মৃতদের মত জ্বালিয়ে দেবে। আচ্ছা ভারতের দুটো মানুষের কথা মনে পড়ছে যারা বাঙালি হয়েও বাঙালির জন্য কিছু করেন নি, যার মধ্যে প্রথম প্রণব মুখার্জি আর পরেরজন মিঠুন চক্রবর্তী। মহানায়কের প্রয়াণের পর বাংলা সিনেমার হ্রাস ধরেছিলেন প্রসেঞ্জিৎ চ্যাটার্জি, তখন তো মিঠুন পুরোদমে বলিউডে সিনেমা করছেন। একবারের জন্য তো ফ্লপ ছবি জেনে বাংলা সিনেমার জন্য আজ করেন নি, বাংলা সিনামকে বাঁচানোর জন্য সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে আসেন নি। তখন এই টলিউডের পুনর্জীবনের জন্য প্রাণপাত করেছেন বুম্বা অর্থাৎ সেই প্রসেঞ্জিৎ। তিনি এসেছেন মহাগুরু হয়ে। কিন্তু একবারও তো এসে টলিউডে কলা কুশলীদের নিয়ে বসে আলোচনা করেন নি কিভাবে এই শিল্পকে বিশ্বের দরবারে আরও বড় প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়া যায়। অমিতাভ বচ্চন এসেছেন চলচ্চিত্র উৎসবে, শাহরুখ খান এসেছেন কিন্তু একজন তৃনমূলের সাংসদ হিসাবে তো একবারের জন্য এসে উৎসাহ প্রদান করেন নি। আজ বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি কি লাভের অঙ্ক দেখাবেন বাংলার মানুষকে।তিনি তো বলেই দিয়েছেন যে তিনি কোবরা, এক ছোবলেই ছবি আর মারবেন এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে। ইঙ্গিতটা বাংলার মানুষ ভালই বুঝবেন কারণ বাংলার মানুষ এমনিতেই জ্বলন্ত শ্মশানে বসে আছে যেভাবে গ্যাস আর ডিজেল-পেট্রলের দাম বেড়েছে। ছবি : অসীম পাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *