প্রথম পাতা

বাংলায় করোনা বা আমফানের থেকে বড় দুর্যোগ বিজেপি-র অপপ্রচার সাংবাদিক সম্মেলনে জানালেন বিধায়ক ফিরদৌসী

অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ৭ই জুন ২০২০ : রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পরিকল্পনা এবং সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশে সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আমফান ও করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের গঠনমূলক কার্যকলাপ এবং এই দুর্যোগের মোকাবিলায় সোনারপুর উত্তরের বেশ কিছু উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন সোনারপুর উত্তর বিধানসভার বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম। একই সাথে রাজ্যে যেখানে মুখ্যমন্ত্রী অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য যেখানে বিজেপির সাথে মুছে যাওয়া দল সিপিএম ও কংগ্রেস জোট করে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে সোনারপুর উত্তর বিধানসভার বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম আজ এই সাংবাদিক সম্মেলনে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন।

বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম বলেন, একদিকে যেমন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি করোনা মোকাবিলার জন্য নিজে রাস্তায় নেমে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন একইভাবে সোনারপুর উত্তর বিধানসভার ১৭টা পৌরসভার ওয়ার্ড ও ৫টা গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষের পাশে ১৫ দিন কমিউনিটি কিচেন “নগরলক্ষ্মী”-র মাধ্যমে রান্না করে প্রতিদিন প্রায় ২৫০০ মানুষকে খাবার দেওয়া হয়েছে।বিশেষ করে এই প্রকল্পের মাধ্যমে বৃদ্ধ মানুষ, ভবঘুরে, প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রতি নজর দিয়ে এই খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল।আমাদের “নগরলক্ষ্মী”-র সাথে সাথে বিভিন্ন ওয়ার্ডের পৌর প্রতিনিধিরা নিজেদের উদ্যোগে মানুষকে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিয়েছেন যেমন ১ নং ওয়ার্ড (১০দিন), ৩ নং ওয়ার্ড (৩৫দিন), ৩০ নং ওয়ার্ড, ৩২ নং ওয়ার্ড এবং তৃণমূল কর্মীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৩৫ নং ওয়ার্ড, কামরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। এছাড়া যেখানে করোনা সংক্রমণের খবর এসেছে সেখানে জীবাণুমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লকডাউন পরিস্থিতিতে প্রথম অবস্থায় বহু মানুষের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে।বহু ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মী ও স্থানীয় নেতৃত্ব নিজের উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। পঞ্চায়েত এলাকায় প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি বহু মানুষকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন।আমরা সোনারপুর উত্তরে আটকে থাকা ভিন জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের দায়িত্ব সহকারে তাদের জেলায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া মহিলাদের জন্য অঞ্জলি প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে সবজি বিতরণ করা হয়েছে, রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে, শিশুদের জন্য দুধ, ফল ও বিস্কুটে বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন জনবহুল বাজার জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করা শুধু হয়নি, সোনারপুর উত্তরে বহু বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বা প্রয়োজনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

এতো শুধু করোনা মোকাবিলার জন্য করা হয়েছে কিন্তু সদ্য হয়ে যাওয়া আমফান ঘুর্নি ঝড়ে বহু ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেখানেও আমরা ১৭টা ওয়ার্ডে দুর্গত মানুষদের ৩৫টা করে ত্রিপল বিতরণ করা হয়েছে এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ৩০০টার মত ত্রিপল বিতরণ করা হয়েছে। পরপর দুটো দুর্যোগকে তৃণমূল কর্মী ও স্থানীয় নেতৃত্ব যেভাবে সরাসরি রাস্তায় নেমে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা বিরোধীদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তাঁরা প্রতিটা পদে এই বিপদের সময় মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বেশি আতঙ্কিত, উত্তেজিত ও ধোঁয়াশার মধ্যে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মানুষ বুঝেছে যারা তাদের মন ঘরাতে চেয়েছেন তাঁরা বিপদে তাদের পাশে থাকে নি। কেন্দ্র সরকার বকেয়া টাকা না দিয়ে এই বিপদের মধ্যে ঋণযুক্ত আর্থিক সাহায্যের কথা শুনিয়ে মানুষকে দিশাহীন করে দিয়েছে। আজ বাংলা করোনা সংক্রমণে অন্যান্য রাজ্যের থেকে অনেক ভাল জায়গায় আছে। এই রাজ্যে আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর হার অনেক কম ছিল। কিন্তু কেন্দ্র সরকার চক্রান্ত করে এই রাজ্যে লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন ঢুকিয়ে আরও বাড়িয়ে দিল। এই পরিযায়ী শ্রমিকদের লকডাউনের শুরুতে পাঠালে সংক্রমণ এতটা বাড়তো না।এছাড়া লকডাউন তুলে দিয়ে কেন্দ্র সরকার ঘোষণা করল আনলক ১। এরফলে মানুষ এতদিন গৃহবন্দি হয়ে থাকার পর ছাড়া পেতেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে শুরু করেছে যার ফলে সংক্রমণ আরও বাড়ছে।কেন্দ্র সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামীদিনে (৮ই জুন) শপিং মল থেকে রেস্তোরাঁ সব খুলে দেওয়া হচ্ছে যার ফলে আরও বিপদ বাড়তে চলেছে।এর থেকে পরিষ্কার কেন্দ্র সরকার বাংলায় করোনাকে আরও মারাত্মক করে তুলতে বাধ্য করছে। বর্তমানে করোনা বা আমফান দুর্যোগের থেকে বড় দুর্যোগ বিজেপির সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মোকাবিলা। তাঁরা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার প্রশাসকমন্ডলীর সদস্য ও প্রাক্তন সি আই সি নজরুল আলি মন্ডল, সোনারপুর পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি প্রবীর সরকার, জেলা পরিষদের সদস্য রঞ্জন বৈদ্য, পৌরমাতা পাপিয়া হালদার, অশোকা মির্ধা, নমিতা দাস, নিতু দাস, তরুণ কান্তি মন্ডল, সঞ্জিত চ্যাটার্জি, সোনারপুর উত্তর বিধানসভার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি পাপাই দত্ত, সোনারপুর উত্তর বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদ সভাপতি সমরজিত ব্যানার্জি, সোনারপুর উত্তর বিধানসভার জয়হিন্দ বাহিনীর সভাপতি বিশ্বজিত দাস, নরেন্দ্রপুর টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি গোপাল দাস, বোড়াল টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কানাই কর্মকার, দেবাশিস দাশ, অরিন্দম দত্ত, অরুণ রায়, শেখ মুস্তাক সহ অনেকে। সাংবাদিক সম্মেলনে পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি প্রবীর সরকার বলেন, বিজেপি যেভাবে আমাদের অপপ্রচার করছে তাতে মানুষের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাঁরা বর্তমানে রাতের অন্ধকারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। সামনে পৌরসভা নির্বাচন এবং ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচন, এই দুটো নির্বাচনে বিরোধীদের বুঝিয়ে দিতে হবে এই রাজ্যে মমতা ব্যানার্জি শেষ কথা। সুতরাং সকলকে নিজের এলাকায় বিজেপির এই অপপ্রচারের উপর নজরদারি করতে হবে।

সাংবাদিক সম্মেলনের শেষে নজরুল আলি মন্ডল সোনারপুরের সাংবাদিকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের সাহসকে কুর্নিশ জানিয়ে প্রশংসা করেন এবং বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম সকল সাংবাদিকদের হাতে করোনা মোকাবিলার জন্য একটা করে পিপিই তুলে দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *