প্রথম পাতা

নতুন চাকরির সুযোগ করে দিতে মহিলাদের ড্রাইভিং শিক্ষায় দেশব্যাপী প্রচারাভিযান

অম্বর ভট্টাচার্য, তকমা, কলকাতা২০শে নভেম্বর ২০২১ :  ব্রিটেনে অবস্থিত দাতব্য সংস্থা শেল ফাউন্ডেশন এবং ব্রিটিশ সরকার মুভিং উইমেন সোশ্যাল ইনিশিয়েটিভস ফাউন্ডেশন (MOWO)-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ‘মুভিং বাউন্ডারিজ’ নামে একটি প্রচারাভিযানের সূচনা করল। এর মাধ্যমে মহিলাদের উজ্জীবিত করা হবে যাতে তাঁরা ড্রাইভিং শিখে পরিবহণ ব্যবসায় ট্যাক্সিচালকই-রিক্সাচালক হিসেবে অথবা কোনও ই-কমার্স সংস্থায় ডেলিভারি এজেন্ট হিসেবে কাজের সুযোগ পান। এই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে মহিলার প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করা হবে এই উদ্যোগের মাধ্যমে।

MOWO-র প্রতিষ্ঠাতা জয় ভারতী গত ১১ অক্টোবর থেকে তাঁর মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। প্রচারাভিযানের অঙ্গ হিসেবে ৪০ দিনেরও বেশি সময় ধরে তিনি দেশের ২০টি শহরে ঘুরবেন আর মহিলাদের ড্রাইভিং শিখতে উদ্বুদ্ধ করবেন। ড্রাইভিং শিখলে যে উপার্জনের সম্ভাবনাও বাড়বেসেই বিষয়েও মহিলাদের মধ্যে সচেতনতার প্রচার চালাবেন তিনি। সফরের এই পর্যায়ে তিনি আজ কলকাতা পৌঁছেছেন। হায়দরাবাদ থেকে যাত্রা শুরু করে তিনি এর মধ্যে বেঙ্গালুরু.চেন্নাইকোচিগোয়াপুণেমুম্বইসুরাটআমেদাবাদ উদয়পুরঅমৃতসরশ্রীনগরচণ্ডীগড়নয়াদিল্লিলখনউপাটনাগুয়াহাটি পেরিয়ে এসেছেন। এর পর তিনি রওনা হবে রাঁচিসেখান থেখে ভুবনেশ্বর সহ আরও নানা জায়গা।

ড্রাইভিং শেখা এবং নিরাপদে পথ চলাএই দুই বিষয়ে মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এই প্রচারাভিযানের উদ্দেশ্য। যাতে জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে তাদের সামনে নতুন দিগন্ত খুলে যায়। এখানে শুধু মহিলাদের ড্রাইভিং শিক্ষার উপরেই জোর হচ্ছে না। বিদ্যুৎচালিত বাহন কিনে তারা যাতে উপার্জন করতে পারেন এবং একইসঙ্গে পরিবহণ ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারেন সেই বিষয়েও তাঁদের ওয়াকিবহাল করা হচ্ছে।

ইভেন কার্গো’-সামাজকল্যাণ মূলক এই সংস্থা মহিলা গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণকর্মসংস্থান এবং বিদ্যুৎচালিত বাহন প্রদান করে। সংস্থাটিও এই প্রচারাভিযানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই প্রচারিভাযানের অঙ্গ হিসেবে একটি হোয়াটস্‌অ্যাপ চ্যাটবটও তৈরি করা হয়েছে। যে সব মহিলা টু-হুইলার বা থ্রি-হুইলার চালানো শিখে ট্যাক্সিচালকঅটোচালক কিংবা ডেলিভারি রাইডার হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুকতারা এটির থেকে সাহায্য পাবেন। যে কোনও ইচ্ছুক ব্যক্তি +91 8885916606 হোয়াটস্‌অ্যাপ নম্বরে “Hi” লিখে পাঠাতে পারেন। ইভেন কার্গোর মতো তার নিকটবর্তী যে সংস্থা প্রশিক্ষণ এবং কাজের সুযোগ তৈরি করে দেয়চ্যাটবটটি তেমন কোনও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার যোগাযোগ করিয়ে দেবে। বিভিন্ন ভাষায় এই চ্যাট সাপোর্ট পাওয়া যাবে।

মুভিং বাউন্ডারিজ’ প্রসঙ্গে MOWO-র প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমতি জয় ভারতী বলেন, “সারা বিশ্বে মহিলা এবং গতিময়তার মাঝে একটা অন্তরায় রয়েছে। কারও ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর বাড়ির মাঝে অনেকটা দূরত্বকেউ চাকরি পান এমন জায়গায় যেখান যাওয়া বড়ই দুষ্কর। এতটা পথ পেরনো এদের অনেকের ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় নাফলে ভালো লেখাপড়া বা চাকরির সুযোগগুলো কমে আসে। মোটরবাইকে ৪০ দিনের এই সফর নিয়ে আমি ভীষণ উত্তেজিত কারণ আমি সমাজের সমস্ত স্তরের মহিলার সঙ্গে দেখা করতে পারবকর্মশালায় তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারব এবং ড্রাইভিং শিখলে যে কত রকম কাজের সুযোগ তৈরি হয়সেই বিষয়ে তাদের উজ্জীবিত করতে পারব। আমার লক্ষ্য এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা যেখানে মহিলাদের কাছে নির্ভরযোগ্য পরিবহণের সুযোগ থাকবেযেখানে তারা নিজেরাই গাড়ি চালাতে পারবেন এবং এর থেকে উপার্জনও করতে পারবেন। সব মিলিয়ে পরিবহণের মতো পুরুষ কেন্দ্রীক শিল্পক্ষেত্রে মহিলাদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া।”

এই গাঁটছড়া প্রসঙ্গে শেল ফাউন্ডেশনের শ্রীমতি শিপ্রা নায়ার বলেন, “মহিলাদের জন্য নিরাপদসাশ্রয়ী এবং সাফ সুতরো পরিবহণ ব্যবস্থার প্রচার করতে আমরা ‘মুভিং বাউন্ডারিজ’ চালু করেছিযাতে তারা সহজে স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং চাকরির মতো মৌলিক ক্ষেত্রগুলোতে সুযোগ পান। আমাদের লক্ষ্য এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা যেখানে মহিলারাও ড্রাইভিং শিখে গাড়ি কিনতে পারেন এবং ই-রিক্সা থেকে ডেলিভারি এজেন্টপরিবহণের সঙ্গে যুক্ত যেসব ক্ষেত্রগুলো রয়েছেসেখানেও তারা কাজের সুযোগ পান। আমরা স্বপ্ন দেখি যে মহিলাদের জীবনে গতিময়তায় কোনও বাধা থাকবে নাতারা কারও উপর নির্ভরশীল হবে না এবং তারাও পুরুষদের মতো কাজের সমান সুযোগ পাবেন। আমাদের আশা আগামী ৫ বছরে আমরা এই ধরনের আরও সংস্থাকে সাহায্য করতে পারব এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারবযারা নিম্ন আয়ের পরিবারের মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেয় ও কর্মসংস্থান করে। আমরা আশাবাদী যে আগামী দিনে ভারতের ১০০-র বেশি শহর এবং গ্রামে ইলেকট্রিক গাড়ির মালিক ও চালক হিসেবে মহিলাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে এবং সামগ্রিকভাবে নিরাপদে মহিলাদের যাতায়াতের উপায়ও আরও প্রশস্ত হবে।”

মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থান এবং উদ্যোগ স্থাপনের সুযোগ করে দেওযা শেল ফাউন্ডেশনের অন্যতম লক্ষ্য। ২০১৭-তে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে শেল ফাউন্ডেশন পাওয়ারড চালু করে (প্রোমোশন অব উইমেন ইন এনার্জি রিলেটেড এন্টারপ্রাইজ ফর ডেভেলপমেন্ট)।মহিলাদের জন্যেই এই উদ্যোগ, যাতে ভারতে পরিবেশবান্ধব শক্তি এবং মোবিলিটি ভ্যালু চেন-এ তাদের অংশগ্রহণ বাড়ে। পাওয়ারড কর্মসূচি সেই সব সংস্থাকে সাহায্য করে যারা পরিবহণ এবং লজিস্টিক্স ক্ষেত্রে মহিলাদের কাজের সুযোগ তৈরি করে এবং তাদের বিদ্যুৎচালিত বাহন কেনায় সাহায্য করে উপার্জনের পথ খুলে দেয়।

শেল ফাউন্ডেশন সম্পর্কে কিছু কথা

শেল ফাউন্ডেশন ব্রিটেনে নথিভুক্ত একটি স্বাধীন দাতব্য সংস্থা (রেজিস্টার্ড চ্যারিটি নং: ১০৮০৯৯৯)যার উদ্দেশ্য নিম্ন আয়ের মানুষদের দারিদ্র দূরীকরণে সাহায্য করে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব করা। এই লক্ষ্যে আমরা এমন কিছু ব্যবসায়িক পরিকাঠামো তৈরি করি অথবা পরিকাঠামোকে উন্নত করিযাতে শক্তি এবং সাশ্রয়ী পরিবহণ হাতের নাগালে থাকে।

ভারতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব

ব্রিটেন এবং ভারত যৌথভাবে কাজ করছে যাতে ব্যবসা ও বিনিয়োগ তরান্বিত হয়দুই দেশে সমৃদ্ধি ও কাজের সুযোগ বাড়েদারিদ্র ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ইস্যুতে শক্তিশালী পদক্ষেপ করা যায় এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তি আরও বেশি মানুষের নাগালে আসে।

মুভিং উইমেন (MOWO) সম্পর্কে কিছু কথা

হায়দরাবাদে অবস্থিত MOWO একটি বৈপ্লবিক উদ্যোগ। এই সংস্থা মহিলাদের টু-হুইলার এবং থ্রি হুইলার চালানোর প্রশিক্ষণ দেয় যাতে আগামীদিনে তাদের সামনে রোজগারের দরজা খুলে যায় এবং তারা আত্মনির্ভর হয়ে ওঠেন। হায়দরাবাদ থেকেই সংস্থাটি কাজ করে। এখনও পর্যন্ত MOWO ১০ হাজারের বেশি মহিলার কাছে পৌঁছে গিয়েছে এবং ১৫০০-এর বেশি মহিলাকে টু-হুইলার চালানো শিখিয়েছেতাদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছে এবং কিছুজনকে লজিস্টিক ডেলিভারির চাকরিও করে দিয়েছে।

ইভেন কার্গো সম্পর্ক কিছু কথা 

ইভেন কার্গো সম্পূর্ণ ভাবে মহিলাদের নিয়ে তৈরি ভারতের প্রথম লজিস্টিক ডেলিভারি কোম্পানি। এই সংস্থা মহিলাদের গাড়ি চালানো ও লজিস্টিকের প্রশিক্ষণ দেয়ে এবং তাদের ডেলিভারি এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করে। এখানে ট্রেনিং মডিউলসামাজিক এবং আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা মহিলাদের কথা ভেবেই গড়ে তোলা হয়েছে। ইভেন কার্গো সুনিশ্চিত করে যে মহিলারা যেন সম্মানের সঙ্গে কাজ করেন এবং তাদের জন্য উপার্জনের একটি সুস্থায়ী বন্দোবস্ত করা যায়। এই সংস্থা মহিলাদের ইলেকট্রিক বাইক কিনতে সাহায্য করে যাতে তারা অগ্রণী ই-কমার্স সংস্থা এবং আরও নানা জায়গায় ডেলিভারি অ্যাসোশিয়েট হিসেবে কাজ করতে পারেন। ২০১৬ থেকে ইভেন কার্গো দেশের ৭টি অঞ্চলে ৫০০ মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং ২৫০জনকে ডেলিভারি অ্যাসোশিয়েটের চাকরি করে দিয়েছে। প্রচারে মিডিয়া শাইন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *