প্রথম পাতা

নভেম্বরের শেষে গড়িয়া টাউনে আমূল সাংগঠনিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা

অম্বর ভট্টাচার্য, তকমা, সোনারপুর, ১২ই নভেম্বর ২০২১ : সামনেই পৌরসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যে ১৯শে ডিসেম্বর ২টো কর্পরেশনের নির্বাচন ঘোষণা করেছে যার মধ্যে রয়েছে কলকাতা কর্পোরেশন এবং হাওড়া কর্পোরেশন। আর তারপরই ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যের বাকি পৌরসভার নির্বাচন হতে পারে এমনটাই কথা আছে। কিন্তু তার আগে বিভিন্ন ব্লক ও টাউন কমিটির আমূল পরিবর্তন করতে চলেছে তৃনমূল দল।

এর পিছনে একটাই কারণ, গত বিধানসভা নির্বাচনে যেভাবে বিজেপি হাওয়া উঠেছিল তাতে প্রচুর সংখ্যক তৃনমূল নেতা বিজেপি শিবিরের দিকে পা এগিয়ে রেখেছিল। এমনও হয়েছে সব কথা পাকা করে তারা শুধুমাত্র ফলের অপেক্ষা করেছে। সেই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার এই আমূল পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে এসেছে দল। ইতিমধ্যে পি কে-র টিম আই প্যাক রাজ্যের বিভিন্ন ব্লক ও টাউন পরিক্রমা করে রিপোর্ট তৈরি করে দিয়ে দিয়েছে দলকে। এবার দলও সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরিবর্তন আনতে চলেছে এই মাসের শেষে। শুধু যে মূল তৃনমূলের পরিবর্তন হবে তা কিন্তু নয়, ব্লক ও টাউন যুব তৃনমূলেরও অনেকের পদ খোয়াতে হবে।

একই ভাবে গড়িয়া টাউন তৃনমূল, সোনারপুর উত্তর বিধানসভা যুব তৃনমূল ও গড়িয়া টাউন তৃনমূল যুব কংগ্রেসের পরিবর্তন হবে। অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে পরিবর্তন হতে পারে টাউন সভাপতি। বহুদিন ধরে বিভাস মুখার্জি (মনু) এই টাউন সভাপতির পদ দখলে রেখেছেন কিন্তু বিগত ৫ বছর ধরে অলিখিত বিধায়কের সাথে দুরত্ব তৈরি করে কোন দলীয় কর্মসূচী নেন নি। লোকসভা হোক আর বিধানসভা হোক কোন কেন্দ্রীয় কর্মসূচী ছিল না গড়িয়া টাউনের পক্ষ থেকে। এছাড়া গড়িয়া টাউন তৃনমূলের সম্পাদক সুব্রত মন্ডল যে ভাবে সভাপতিকে বাচন ভঙ্গিতে ক্রমাগত আক্রমণ করে তাতে সভাপতি হিসাবে কোন কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। এমনকি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জেলা সভাপতি বিভাস মুখার্জিকে কড়া হাতে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছেন কিন্তু কিছুই হয় নি। একসময়ের গড়িয়া যুব তৃনমূলের সভাপতি জয়ন্ত সেনগুপ্ত ক্রমাগত সভাপতিকে উক্তি করে যে মন্তব্য করেন বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে তাতেও সভাপতি নিজেকে নির্বিকার রেখেছেন। কি কারণে? তবে কি কোন দুর্বলতা আছে সভাপতির? এটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন। দল এই কারণ খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এরা এতদিন কেন একই পদে ছিলেন কারণ তখন দলের কাছে কোন অপশন ছিল না। এখন দলের কাছে অনেক মুখ বিকল্প হিসাবে উঠে আসছে তাই দল এবার অন্যভাবে চিন্তা যোগ্য ব্যক্তির খোঁজ করতে বাধ্য হচ্ছে।

এমনকি গড়িয়া টাউনের অনেক নেতার নামও দলের কাছে উঠে এসেছে যারা বিধানসভার আগে থেকে বিজেপি-র সাথে যোগাযোগ রেখেছিল যদি বিধানসভার ফল উলটে যায় ঝট করে নিজেরা দল পরিবর্তন করে নেবে। এই খবর জেলা সভাপতির কাছেও ইতিমধ্যে চলে গেছে। ইতিমধ্যে গড়িয়া টাউনের তিনজন নেতার নাম জেলা সভাপতির হাতে পৌঁছে গেছে যারা বিধানসভার আগে বারুইপুর বিজেপি জেলা আফিসে যোগাযোগ করেছিলেন। গড়িয়া টাউন যুব তৃনমূল সভাপতি হিসাবে বর্তমানে কেউ নেই। আগে টাউন যুব তৃনমূলের সভাপতি ছিলেন জয়ন্ত সেনগুপ্ত। তারও একই পরিস্থিতি ছিল, শুধুমাত্র তৈলমর্দন করেই পদ আগলে রেখেছেন। নিজের উদ্যোগে কোন কর্মসূচী নিয়ে দেখেন নি। এরপর তৎকালীন জেলা যুব সভাপতি ছিলেন শওকত মোল্লা। তিনি গড়িয়া টাউন সভাপতি পদ উঠিয়ে দিয়ে দুজনকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেন। সেইসময় যুগ্ম আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয় জয়ন্ত সেনগুপ্ত ও পার্থ দাস রায়কে। কিন্তু সেখানেও বিরোধিতা ও অসহযোগিতা করতে শুরু করেন জয়ন্ত সেনগুপ্ত। সেই সময় জয়ন্ত সেনগুপ্ত বহুবার দরবার কেরেছেন কখনও বিধায়কের কাছে কখনও প্রভাবশালী নেতাদের কাছে কিন্তু কোন লাভ হয় নি। আস্তে আস্তে তিনি নিজেকে শুধুমাত্র বিধায়কমুখী করে দলীয়ভাবে যুব কর্মসূচী থেকে সরে এসে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। বর্তমানে দুজনেই ৪০ উর্দ্ধ হওয়ার ফলে তাদের এবার আর সুযোগ নেই। সুতরাং গড়িয়া টাউন তৃনমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে নতুন মুখ উঠে আসবেই। সবটাই এখন দলীয় ঘোষণার পর জানা যাবে। চারিদিকে অনেক কানাকানি চর্চা শোনা যাবে কিন্তু তাতে কান পাতলে হবে না। যা বলবে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব অর্থাৎ মমতা ব্যানার্জি এবং প্রধানত অভিষেক ব্যানার্জি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *