গড়িয়া স্টেশনে সান্ধ্য বাজার চালু নিয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না সোনারপুর উত্তরের বিধায়ক
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ১২ই জুন ২০২০ : করোনা সংক্রমণ যবে থেকে কলকাতায় শুরু হয়েছে তার প্রথম প্রভাব পড়ে পঞ্চসায়ার চত্বরের অম্বুজা কমপ্লেক্সে। যেহেতু সোনারপুর বিধানসভা অন্তর্গত রাজপুর সোনারপুর পৌরসভা লাগোয়া কলকাতা কর্পোরেশনের ১০৯ নং ওয়ার্ড হওয়ার ফলে রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ১, ২ ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডকে অরেঞ্জ জোন ঘোষিত হয়। সেদিন থেকে সোনারপুর উত্তর বিধানসভার বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম ও রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার সি আই সি নজরুল আলি মন্ডল উদ্যোগ নিয়ে সোনারপুরের বিভিন্ন বাজার জীবাণুমুক্ত করতে শুরু করেন। গড়িয়া স্টেশন চত্ত্বরে বালিয়া বাজার, কিশান মজদুর বাজার, গড়িয়া স্টেশনে মাছের কাটা সহ সান্ধ্য বাজার, নবগ্রাম বাজার, নবশ্রী বাজার, সবুজ সংঘ বাজার জীবাণুমুক্ত করা হয়।এরপর লকডাউন ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে যেভাবে মানুষ কিশান মজদুর বাজারে ভিড় করতে শুরু করে বাধ্য হয়ে বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম ও সি আই সি নজরুল আলি মন্ডল গড়িয়া স্টেশনের কিশান মজদুর বাজার বন্ধ করে দেন। এভাবেই চলছিল, কিন্তু মানুষের কথা চিন্তা করে পাঁচপোঁতা রোডের উপর মাঠে কিশান মজদুরের কিছু ব্যবসায়ীদের সবজি ও মাছ নিয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বসার অনুমতি দেন বিধায়ক।কিন্তু মাছের কাটা ও সান্ধ্য বাজার তখনও চালু করার কথা বলা হয় নি। হয় নি।
এই বাজারে একইসাথে সকালে যেমন মাছের কাটা চলে তেমনিই রাতে চলে সবজি বাজার। আনলক ঘোষণার ঠিক আগেই মাছের কাঁটার ব্যবসায়ীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন সোনারপুর উত্তর বিধানসভার মূল সংগঠক নজরুল আলি মন্ডল, সোনারপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর সরকার, সোনারপুর উত্তর বিধানসভার তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি পাপাই দত্ত, আই এন টি টি ইউ সি আহ্বায়ক পিন্টু দেবনাথ, স্থানীয় যুবনেতা জয়ন্ত সেনগুপ্ত সহ পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী সদস্যরা। এই সভায় স্থানীয় পাইকারি মাছ ব্যবসায়ীরা নেতৃত্বকে অনুরোধ করেন মানুষের কথা চিন্তা করে স্যানিটাইজিং ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চালু যাতে করা যায়। এই অনুরোধের সাথে সাথে স্থানীয় কিছু নেতৃত্বের তরফে এই বাজার সংক্রান্ত বহু অভিযোগ তোলা হয় নেতৃত্বের সামনে।
সান্ধ্য বাজার নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগ তোলা হয় যার মধ্যে প্রধান হল ১) এই সান্ধ্য বাজারের পরিচালনার ব্যর্থতার কারণে এই অঞ্চল দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারে না। রাস্তার উপর লাইন দিয়ে যেমন থাকে মাছের গাড়ি তেমনই থাকে সবজির গাড়ি। এছাড়া সবজির বাজারের সময় ক্রেতারা যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করে চলে যায় যার ফলে যান চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ২) বাজারের ময়লা রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। মাছের বাজারের নোংরা জল যেমন রাস্তায় চলে এসে কাঁদা করে দেওয়ার ফলে মানুষ চলাচল করতে পারে না আবার সবজির ময়লা রাস্তা সহ পাশের ঝিলের ধারে ফেলার কারণে দুর্গন্ধে চলতে পারে না। ৩) পাইকারি মাছের বাজারে যেমন অধিকাংশ ব্যবসায়ী স্থানীয় কিন্তু সান্ধ্য বাজারের সবজি ব্যবসায়ীরা অধিকাংশই বাইরের। ৪) বাজার পরিচালন কমিটি এই বাজার থেকে যেভাবে টাকা আদায় করে চলেছে যার কোন হিসাব দীর্ঘদিন ধরে পেশ করা হচ্ছে না। এছাড়াও সবজি ব্যবসায়ীদের ছোট ছোট করে জায়গা করে দিয়ে দোকান দেওয়ার জন্য এককালীন বড় অঙ্কের টাকা তোলা হচ্ছে যার কোন হিসাব নেই। ৫) পরিচালন কমিটির মানুষের সাথে দুর্ব্যবহারের কারণে অনেকেই আসতে চায় না বাজারে। ৬) বাজারের পাশের ঝিল বাজারের ময়লা দিয়ে তিল তিল করে ভরাট করে বাজারের জায়গা বাড়ানো হচ্ছে।এই ময়লার স্তুপের জন্য ঝিলে মাছচাষ ব্যহত হচ্ছে সাথে দূষণ ও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।হাজার বলেও এই জমে থাকা ময়লা সরানো হয় না বরং তা বেড়ে চলে ৭) বাজারের পাশে দুটো অটো স্ট্যান্ড থাকায় মানুষের দীর্ঘ লাইনের কারণেও মানুষ স্বস্তিতে চলাচল করতে পারে না।
এত অভিযোগ উঠার পর সোনারপুর উত্তরের মূল সংগঠক নজরুল আলি মন্ডল মন্তব্য করেন সান্ধ্য বাজার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বহু ধরনের অভিযোগ আসছে।আমার কাছে এমনও খবর আছে এখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বহু অসামাজিক কাজ হয়, মানুষের সাথে অকথ্য ব্যবহার হয়।আগে সান্ধ্য বাজারকে একটা সুষ্ঠ পরিকাঠামোর মধ্যে আনতে হবে তবেই খোলা হবে সান্ধ্য বাজার।তিনি বলেন আজ জানলাম মাছের কাঁটার অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা স্থানীয় কিন্তু আমায় বলা হয়েছিল পাইকারি মাছের ব্যবসায়ীরা অধিকাংশ বাইরের। স্থানীয় ব্যবসায়ী থাকার জন্য পাইকারি মাছের কাঁটা চালু করা হবে যদিও এই ব্যবসায়ীদের নিয়ে (মাছ ও মাংস) একটা কমিটি গঠন করতে হবে যেখানে দলের তরফ থেকেও প্রিতিনিধি থাকবে।তিনি আরও বলেন সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে, স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং সকলকে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া যে ব্যবসায়ীদের কাঁটা আছে তাদের স্থানীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একটা তালিকা তৈরি করতে হবে। কিন্তু সান্ধ্য বাজারের অধিকাংশ বাইরের ব্যবসায়ী তাই এই বাজার এই অবস্থায় খোলা যাবে না। যদি স্থানীয় ব্যবসায়ী হয় তবে একইভাবে তালিকা তৈরি করে দেখাতে হবে যে অধিকাংশ ব্যবসায়ী স্থানীয়, সেই অবস্থায় চিন্তা করা যাবে। কিন্তু মাছের পাইকারি দোকান খোলা হচ্ছে বলে এলাকার কিছু তৃণমূল নেতা বাজার গরম করছে একই ভাবে সান্ধ্য বাজার খুলতে হবে তা কিন্তু বরদাস্ত করা হবে না। বাজার নিয়ে কোন নোংরা রাজনীতি করতে দেবো না। প্রয়োজনে সেই সব নেতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যেখানে করোনার অবস্থা খুব মারাত্মক হয়ে উঠছে সেখানে পরিচালনার অভাবে সান্ধ্য বাজার খোলা সম্ভব নয় তাই ফের একবার নজরুল আলি মন্ডল গড়িয়া স্টেশনের বাজার, রাস্তার ধারে ও ফুটপাথে গজিয়ে ওঠা দোকান, সান্ধ্য বাজারের রাস্তা নোংরা হওয়ার ব্যাপারে ফের একটা জরুরী বৈঠক করেন যেখানে উপস্থিত ছিলেন পৌরপ্রশাসক ডাঃ পল্লব দাস, নজরুল আলি মন্ডল, প্রবীর সরকার, পৌরসভা ইঞ্জিনিয়ার শুভাশিস বসু, পিন্টু দেবনাথ, শ্রীমন্ত নস্কর, জয়ন্ত সেনগুপ্ত, তপন দে, সুধাংশু দে, সুকান্ত মন্ডল, সহ অনেকে। এই আলোচনায় উঠে আসে রাস্তার ধারে কোন ব্যবসায়ীকে বসতে দেওয়া হবে না। বিধায়ক হকারদের জন্য হকার কর্নার তৈরি করে স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।নতুন করে আর হকার বসতে দেওয়া যাবে না। নবগ্রামের প্রবেশ পথে যেভাবে রাস্তা নোংরা হয়ে থাকে তা অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সান্ধ্য বাজারের পরিচালনায় রাস্তার উপর চলে আসা দোকান ভেঙে ছোট করে দিতে হবে। দোকানের বাড়তি কোন অংশ যেন রাস্তায় না আসে। সি ৫ বাসস্ট্যান্ড থেকে যে দুটো বাস ও মিনিবাস চলাচল করে তাদের জন্য রাস্তায় জ্যাম হয়ে যায়, সেই বাস ইউনিয়নের পরিচালনায় যারা দায়িত্বে আছে তাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। এই রুটে বেশ কিছু বেআইনি বাস চলছে যা সনাক্ত করে বাতিল করতে হবে। এই আলোচনা সভাতেও একই সিদ্ধান্ত হয় সান্ধ্য বাজার এই মুহুর্তে খোলা সম্ভব হবে না। সব কিছু স্বাভাবিক হলে তখন ফের আলোচনা করে খোলার ব্যবস্থা করা হবে।নজরুল আলি মন্ডল আবার মনে করিয়ে দেন ততক্ষনে যেসব নেতারা এই বাজারকে ঘিরে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন বা যাদের নাম উঠে আসছে বারবার তাদের কোনভাবেই রেহাত করা হবে না। দল কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। তাঁরা ব্যবসায়ীদের তাঁতিয়ে দিচ্ছে পাইকারি মাছের খোলা হলে কেন সান্ধ্য বাজার খোলা হবে না, এটা মেনে নেওয়া যাবে না।