গুরু নানকের জন্ম বার্ষিকীতে জীবন ও দর্শন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে এল জে আই এস বিশ্ববিদ্যালয়
তানিয়া সাহা, এবিপিতকমা, উত্তর ২৪ পরগণা, ৫ই জুলাই ২০১৯ : এ দেশে কত ধর্মের মানুষই না একসঙ্গে বসবাস করেন। যুগ যুগ ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। এখানে বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে রয়েছেন শিখরাও। এই বছর তাঁদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। কারণ চলতি বছরে নভেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন অংশে শ্রী গুরু নানক দেবের ৫৫০তম জন্মবার্ষিকী পালন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এই বিশেষ দিনটি পালন করার জন্য এখন থেকেই বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে। পাঞ্জাব সরকার তো দিনটি মহাসমারোহে পালন করবেই, পাশাপাশি আরও অনেক সংগঠনও পালন করবে। শ্রী গুরু নানক দেবের জীবন এবং দর্শন আরও বেশি করে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে কলকাতার জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি (এসজিপিসি) নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করল। কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে, ১৫ জুন, শনিবার।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন শ্রী অমৃতসর সাহিবের এসজিপিসি–র প্রেসিডেন্ট ভাই গোবিন্দ সিং লঙ্গোয়াল। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শ্রী অমৃতসর সাহিবের এসজিপিসি–র প্রধান সচিব ডা. রূপ সিং, পাতিয়ালার পাঞ্জাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ডা. যশপাল সিং, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এস তারলোচন সিং–সহ বিশিষ্টরা।
ভাই গোবিন্দ সিং লঙ্গোয়াল বলেন, ‘আমি এই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের শুভেচ্ছা জানাই। তাঁদের ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য। তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা ধর্মশিক্ষা লাভ করবে। এর থেকে তারা আদর্শ, জীবনের মূল্যবোধ সম্পর্কে জানতে পারবে। এবং এগুলিই তাদের অসৎসঙ্গ, নেশা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।’
জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সর্দার তরণজিৎ সিং বলেন, ‘শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের মনে কলকাতার বিশেষ জায়গা রয়েছে। এক অসাধারণ সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক যোগাযোগ রয়েছে এই শহরের সঙ্গে। এই শহরেই পবিত্র গ্রন্থ সাহিবের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। শ্রী গুরু নানক দেবের জীবন এবং দর্শন নিয়ে এই আলোচনা সভার আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত। তাঁর জীবন, কাজ আমাদের অনুপ্রাণিত করবে, দিকে–দিকে ছড়িয়ে দেবে শান্তি, মানবপ্রেম, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যের বার্তা। এই অনুষ্ঠানে ভাই গোবিন্দ সিং লঙ্গোয়াল আমাদের মধ্যে পেয়ে আমরা অত্যন্ত খুশি হয়েছি। ১৫ জুন তারিখটি আমাদের কাছে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ ১৬০৬ সালের ওইদিনটি শ্রী গুরু হর গোবিন্দ সাহিবজী শ্রী অকাল তখতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।’
কলকাতার শিখ মিশন (পূর্ব ভারত)–এর সাধারণ সম্পাদক এবং ইনচার্জ (সাম্মানিক) সর্দার জগমোহন সিং গিল বলেন, ‘পূর্ব ভারত এবং পাঞ্জাবের মধ্যে ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম। তখন আমি ভাল খবর জানতে পেরেছি। বাংলার মহান সন্তান, সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে পাঞ্জাবের একটা যোগসূত্র রয়েছে। যোগধ্যান মিসার ১৭৯৭ সালে পশ্চিম পাঞ্জাবের এক সারস্বত ব্রাক্ষ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরচন্দ্রকে জ্যোতির্বিজ্ঞান শিখিয়েছিলেন। এরপর ১৮২৬ সালে যোগধ্যান মিসার জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন কলকাতার সংস্কৃতি কলেজে। সেখানে তিনি ২৩ বছর শিক্ষকতা করেছেন। কলকাতার সংস্কৃত কলেজে যে বিষয়গুলি নিয়ে লেখাপড়ে করেছিলেন, তার মধ্যে একটি হল জ্যোতির্বিজ্ঞান। তার মানে তিনি যোগধ্যান মিসারের একজন অন্যতম ছাত্র ছিলেন।’
অকাল তখত মানে কালাতীত এক সিংহাসন। এটি শিখদের পাঁচটি তখতের মধ্যে অন্যতম। এটি পাঞ্জাবের অমৃতসরের হরমন্দির সাহিব কমপ্লেক্সে অবস্থিত। শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি (এসজিপিসি) দেশের সব গুরুদ্বার ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সংগঠন। একইসঙ্গে ওই সংগঠন পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং হিমাচল প্রদেশ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চন্ডীগড়ে অবস্থিত শিখদের প্রার্থনাস্থলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বেও রয়েছে। প্রচারে : গ্রে ম্যাটার্স।