এন আর সি তে থাকতে গেলে ১০ দিনের মধ্যে কি জমা দিতে হবে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মমতা
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ১২ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ : বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্র সরকার উঠে পড়ে লেগেছে লোক দেখাতে ভারতে লোকসংখ্যা কমাতে এন আর সি চালু করতে। কিন্তু এর পিছনে যে প্রধান কারণ সেটা হল ভারত থেকে মুসলমান তাড়াতে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলো থেকে বহিরাগতদের ভারতের বাইরে করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এন আর সি মানে ঠিক কি? এন আর সি মানে নাগরিতত্ব প্রমাণ পত্র (National Registration of Citizenship)। এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই এন আর সি তালিকার মধ্যে নিজেকে রাখা যাবে। কেন্দ্র সরকার জানিয়েছে এন আর সি তালিকার মধ্যে থাকার জন্য নিজেকে ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করতে কোন শংসাপত্র দেখাতে হবে।কেন্দ্র সরকার ১৪টি পয়েন্ট দিয়েছে ভারতে একজন বাসিন্দাকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে সাহায্য করবে যা আমরা নীচে দিলাম।
১) পিতৃপুরুষের উত্তরাধিকার সূত্রে ১৯৫১ সালে বা তার আগে থেকে ভারতের বাসিন্দা ছিলেন তার প্রমাণপত্র (Residence proof from or before 1951 with any link with grand father, grand mother, father and mother) 2) ২৪শে মার্চ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যে কোন ভোটার লিস্টে নিজের নাম থাকা প্রয়োজন (Any voter list upto 24th March 1971) ৩) নিজের নামে জমির দলিল থাকা প্রয়োজন অথবা ভাড়াটে হিসাবে কোন সরকারি নথি (Land and Tenancy records) ৪) নাগরিকত্বের সরকারি পরিচয় পত্র (Indian Citizenship certificate) ৫) স্থায়ী বাসিন্দার পরিচয় পত্র (Permanent Residential Certificate) ৬) উদবাস্তু পরিচয় পত্র (Refugee registration certificate) ৭) পাসপোর্ট (Passport) ৮) জীবনবীমা পলিসি (Life Insurance Policy) ৯) সরকার দ্বারা দেওয়া কোন লাইসেন্স অথবা শংসাপত্র (Any documents issued licence or certificate) ১০) কোন সরকারি চাকরি অথবা কর্মসংস্থানের চুক্তি (Any government service or employment certificate) ১১) ব্যাঙ্ক অথবা পোস্ট অফিসের কোন জমানোর বই (Bank or Post Office accounts) ১২) জন্ম সার্টিফিকেট (Birth Certificate) ১৩) কোন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়) সার্টিফিকেট (Board/University certificate) ১৪) আদালতের নথি (Court records/ Processes)।
উপরের যে পয়েন্ট দেওয়া হল তার মধ্যে কোন একটায় ২৪শে মার্চ ১৯৭১ সালের মাঝরাতের আগে যদি আপনার নাম উল্লেখ করা থাকে তবে আপনি এন আর সি তালিকার মধ্যে থাকবেন কিন্তু একই সাথে কেন্দ্র সরকার এমনও জানাচ্ছে উপরের ১৪টি পয়েন্টের মধ্যে যত বেশি সম্ভব ডকুমেন্টস জোগাড় করে ১৯৫১ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত আপনার পরিবার সূত্রের যোগসূত্র প্রমাণ করার জন ১০ দিনের মধ্যে জমা করতে হবে। এই দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ, পাকিস্থান, বার্মা, শ্রীলঙ্কা, নেপাল বা তার বাইরের দেশ থেকে ভারতে আসা কোন ব্যক্তি উচিত সরকারি শংসাপত্র ছাড়া ভারতে থাকতে দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সমালোচকেরা বলছেন প্রধানমন্ত্রী ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করতে চাইছেন আর তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এই আইনের মাধ্যমে তিনি দেশ থেকে বহিরাগত বিদায়ের নামে হিন্দু জাতি ব্যতীত কোন মানুষকে ভারতে থাকতে দেবেন না। ইতিমধ্যে আসামে এন আর সি চালু হয়েছে যার মধ্যে বহু মানুষের নাম নেই। তাঁরা এখন নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন। কোথায় যাবে এই মানুষগুলো যাদের এই ১৪টার মধ্যে একটাও প্রমাণপত্র নেই বা ১টা বা ২টো আছে? সকলের কাছে এটা বড় প্রশ্ন। আসামে সফল হতেই এবার এন আর সি চালু করতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গে। তাই কেন্দ্রের এই নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। আজ মমতা ব্যানার্জি সিঁথি মোড় থেকে পদযাত্রা করেছেন শ্যামবাজার পাঁচ মাথা মোড় পর্যন্ত। সেখানে তিনি সভাও করেছেন। মমতা ব্যানার্জি বলেন, সাম্প্রদায়িক বিভেদ করতে কেন্দ্রের এটা একটা নতুন চক্রান্ত। কেন্দ্র সরকার চাইছে দেশের দুই প্রধান ধর্মের মানুষের মধ্যে একটা বিভেদ তৈরি করে দাঙ্গা বাঁধাতে। কিন্তু বিজেপি জানাচ্ছে, দেশে ভারতের বাইরে থেকে অসংখ্য মানুষ এসে বসবাস করছে যাদের জন্য ভারতে থাকা মানুষদের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে, খরচ বাড়ছে, মানুষের রোজগার কমেছে। এর একটা সুরাহা করা প্রয়োজন।উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে এই পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন মমতা ব্যানার্জি ছাড়াও আরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসু, ফিরাদ হাকিম, সাধন পান্ডে, দেবাশিস কুমার, দীনেশ ত্রিবেদী, বৈশ্বানর চ্যাটার্জি, শশী পাঁজা, তাপস রায়, প্রিয়াল চৌধুরী, সুদীপ ব্যানার্জি, নয়না দাস, স্মিতা বক্সি, মালা সাহা, তরুণ সাহা, মালা রায় সহ অনেকে।সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কলকাতায় জানিয়েছেন খুব জলদি পশ্চিমবঙ্গে এন আর সি চালু হবে। এরপর থেকেই কেন্দ্রের বিরধীতায় রাস্তায় নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।ছবি : চুনী পাল।