স্বাস্থ্য

মেডিকা হসপিটালের ডাক্তার রোবোটিক-অ্যাসিস্টেড সার্জারি প্ল্যাটফর্ম দা ভিঞ্চির মাধ্যমে কলকাতায় প্রথম ডে কেয়ার জরায়ু অপসারণ করলেন

• অস্ত্রোপচারের দিনেই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি , অ্যান্টিবায়োটিক বা হাই ডোজ-এর ব্যথানাশক ওষুধের প্রয়োজনও হয়নি।


সংবাদদাতা, তকমা, কলকাতা,১৫ই মার্চ ২০২২: মেডিকা হাসপাতাল, কলকাতার একটি শীর্ষস্থানীয় মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল। এবার তারা কলকাতার প্রথম ডে-কেয়ার রোবোটিক জরায়ু অপসারণের সার্জারি করেছে। রোগীকে অস্ত্রোপচারের দিনেই ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। ‘হিস্টেরেক্টমি’ নামক এই অস্ত্রোপচার মার্কিন ভিত্তিক ইনটুইটিভ দ্বারা তৈরি সবচেয়ে উন্নত রোবোটিক-অ্যাসিস্টেড সার্জারি সিস্টেমগুলির একটি। এটি দা ভিঞ্চি এক্সের সাহায্যে করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের দিন সকাল ৭টায় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং একই দিন সন্ধ্যা ৮টার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মেদিনীপুরের ৫০ বছর বয়সী মহিলার উপর এই অনন্য রোবোটিক-সহায়তা অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে ছিলেন সিনিয়র গাইনি-অনকোলজিস্ট ডাঃ অরুণাভ রায়। এই পদ্ধতিটি সদ্য উদ্বোধন করা অনকোলজি বিভাগে করা হয়েছিল।
প্রথম ডে-কেয়ার রোবোটিক হিস্টেরেক্টমি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে অ্যাডভান্সড রোবোটিক অ্যান্ড ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন এবং গাইনোকোলজিক অনকোলজির সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ অরুণাভ রায় বলেছেন, “WHO- দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি ৬ জন মানুষের মধ্যে এক জনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৪৫-৬০ বছর বয়সী মহিলারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সময়মতো স্ক্রিনিং, সনাক্তকরণ, এবং প্রয়োজনীয় চিকিত্সা তাদের সুস্থ জীবনযাপন করতে সহায়তা করতে পারে। এই ডে-কেয়ার হিস্টেরেক্টমিতে রোগীর কোনো রক্ত সঞ্চালন, অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যথানাশক ওষুধের প্রয়োজন হয় না। ন্যূনতম ওষুধ এবং প্রায় কোনও ব্যথা ছাড়াই তাঁকে একই দিনে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এটি প্রকৃতপক্ষে পূর্ব ভারতে ক্যান্সারের সার্জারির ক্ষেত্রে একটি ল্যান্ডমার্ক। এটি রোগীদের সেরা চিকিত্সার সুবিধা পেতে এগিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত করবে।”
৫০ বছর বয়সী গৃহবধূ মিসেস সামন্ত দীর্ঘস্থায়ী ঋতুস্রাবের সমস্যায় ভুগছিলেন। মেডিক্যাল ডায়াগনোসিস থেকে জানা যায়, ক্যান্সারের আগের অবস্থা রয়েছে। ফলে তড়িঘড়ি চিকিৎসা না করলে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন তিনি। রোগী এবং তাঁর পরিবার রোবোটিক সহায়তায় অস্ত্রোপচারের সুবিধাগুলি বোঝার পরে রোবোটিক হিস্টেরেক্টমি সার্জারি বেছে নিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের দিনেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি সম্পূর্ণ ফিট হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। রোবোটিক সার্জারির জন্য নির্দিষ্ট যে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে হাসপাতালে থাকার ন্যূনতম খরচ, ওষুধপত্র এবং অস্ত্রোপচারের পরে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে তাঁকে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনার।
মিসেস সামন্ত বলছিলেন, “আমি সত্যিই ডাঃ অরুণাভ রায় এবং মেডিকা হাসপাতালের পুরো টিমের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁরা না থাকলে এবং ওই হাসপাতালে এমন অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচার প্রযুক্তি না থাকলে আমি এত দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারতাম না। অস্ত্রোপচারের পরে খুব কম ব্যথা ছিল। আমি আমার অস্ত্রোপচারের এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে প্রতিদিনের কাজকর্ম করার জন্য পুরোপুরি ফিট ছিলাম।”
ডাঃ অভয় কুমার,সার্জিক্যাল অনকোলজি এবং রোবোটিক সার্জারির প্রধান এদিন বলেছেন, “ভারতের ক্যান্সারে আক্রান্তের হার কয়েক বছর ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী ২০১০-২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ২১% এবং মারণ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ২৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা স্ক্রিনিং গ্যাপ-কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০২০ সালে ভারতে প্রায় ১৪ লক্ষ লোকের ক্যান্সার হয়েছিল। প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং রোগ নির্ণয়ই মৃত্যু রোধে একমাত্র উপায়। ক্যান্সারের চিকিত্সায় মেডিকার বিশ্বমানের সুবিধা রয়েছে এবং ফোর্থ জেনারেশন দা ভিঞ্চি সার্জিক্যাল রোবট প্রযুক্তি মেডিকার ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। এই ডে-কেয়ার ট্রিটমেন্ট হল মেডিকা ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের সেরা একটি পদক্ষেপ, যা সামনের দিনগুলিতে আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *