বর্ধমানের বিদায়ী পৌরপিতা প্রদীপ রহমান প্রমাণ করে দিলেন তৃণমূল ধর্ম নিরপেক্ষ
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, পূর্ব বর্ধমান, ১লা অক্টোবর ২০২০ : রাজ্যে চলছে ধর্ম নিরপেক্ষের লড়াই। একদিকে বিজেপি বলছে তাঁরা হিন্দুবাদীতে বিশ্বাসী আর অন্যদিকে তৃণমূল বলছে তাঁরা ধর্ম নিরপেক্ষ। একই কারণে উত্তরপ্রদেশে একদিকে রাম মন্দির তৈরির জন্য ধুমধাম হল আর বাবরি মসজিদকে সরে যেতে হল কিন্তু সেই উত্তরপ্রদেশেই প্রকাশ্যে দূর্গা পুজো করার অনুমতি দিলেন না মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, একই অবস্থা বিজেপি শাসিত অসম ও ত্রিপুরাতে। তবে কি করে বিজেপি হিন্দুবাদীতে বিশ্বাসী হল।তফাতটা কোথায়? রামমন্দির তৈরির সময় গোটা ভারতে লকডাউন চলছিল আর দূর্গা পুজোর সময় গোটা ভারতে আনলক ৩ চলছে। ট্রেন চলছে, সিনেমা খুলছে, বাস চলছে, বার খুলছে, পরীক্ষা হচ্ছে কিন্তু দূর্গা পুজোর অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তৃণমূল একদিকে ঈদ উৎসব হচ্ছে, দল উৎসব হচ্ছে, রাখী উৎসব হচ্ছে আবার শারদীয় উৎসবও হচ্ছে। সেই কথাকে মাথায় নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “ধর্ম আমার, ধর্ম তোমার, উৎসব সবার”।
বর্তমানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষ মানুষের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে। জাতপাত আর ধর্মের অনুষঙ্গে মানুষ ভাগ হয়ে যাচ্ছেন দেশজুড়ে। এই অকালে স্বপ্ন দেখতে শেখালো পূর্ব বর্ধমানের ভাতছালা। সেখানে বাঁকার পাড়ে একটি শিবমন্দির গড়ে দিলেন প্রাক্তন কাউন্সিলর। তিনি আবার ধর্মে মুসলিম।নাম প্রদীপ রহমান। কিন্তু কেন এই উদ্যোগ? প্রদীপ রহমান জানিয়েছনে মানুষের পাশে থাকা তার দায়িত্ব। এলাকার হিন্দু ভাইয়েরা অনেক দিন থেকেই ভাবছিলেন একটা শিবমন্দির তৈরির কথা। শিবরাত্রির সময় জল ঢালতে পাড়ার মেয়েদের অনেক দুর যেতে হয়।এছাড়া নানা উপলক্ষে শিবকে বন্দনা করতে চান তারা। তাদের সেই ইচ্ছেকে মাথায় রেখে প্রদীপবাবু একটি সুন্দর শিবমন্দির গড়ে দিলেন এলাকায়। শুধু তাই নয়; এর আগেও ওই এলাকায় একটি কালিমন্দির গড়ে দিয়েছেন তিনি। পুজোর আগে এই উপহার পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ। বাঁকার পাড়ে ভাতছালার এই অংশটি ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে পড়ে।এই এলাকায় প্রচুর গরিব মানুষ থাকেন। তার জানিয়েছেন অত খরচ করে মন্দির গড়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। প্রদীপবাবু প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করে এই মন্দির গড়ে দিলেন। রীতিমতো ভাবগম্ভীর পরিবেশে সুন্দর করে উদ্বোধন করা হল মন্দির।উদ্বোধন এর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী পৌরপিতা খোকন দাস সহ অন্যান্য বিশিষ্ট মানুষেরা। খোকন দাস জানান; দেশের মানুষকে ভাগ করার চেষ্টা চলছে। এই সময়ে প্রদীপবাবু সারাবছর মানুষের পাশে থাকেন। এই উদ্যোগ সম্প্রীতির বন্ধনকে দৃঢ় করবে। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন প্রদীপ রহমান উদার ভাবধারার মানুষ। তিনি দুর্গাপুজো কমিটিতে থাকেন। আবার ঈদ বা মহরম উদযাপনেও থাকেন। কালী থেকে সরস্বতী পুজো সবেতেই তার সাহায্যের হাত বাড়ান। বর্ধমানে যেমন সর্বমঙ্গলা দেবী আছে তেমনি আছে খক্কর শাহের মাজার আবার প্রদীপ রহমান কবরস্থান তৈরি করেছেন।প্রদীপ রহমান ফের একবার প্রমাণ করে দিলেন তৃণমূল দলটা শুধু ধর্ম নিরপেক্ষ নয়, তাঁরা শিখিয়ে দেয় মানুষের উন্নয়নের মানুষের পাশে থাকতে।