সোনারপুর উত্তরে পুষ্প অভ্যর্থনায় ভাসলেন তৃনমূলের ফিরদৌসী, যেন জয়ের পূর্বাভাস
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ২৩শে মার্চ ২০২১ : সামনে, মানে ১০ই এপ্রিল সোনারপুর উত্তর বিধানসভায় নির্বাচনের দিন। সেই দিনকে সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দল তাদের প্রচার চালাচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল বলতে এই বিধানসভায় তেমন কেউ প্রচারে এগিয়ে না থাকলেও গত ২বারের তৃনমূলের টিকিটে জয়ী বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম সকলের থেকে এগিয়ে। তৃনমূল দল সবার আগে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে আর তার অনেক আগে থেকেই ফিরদৌসী বেগম নজরুল আলি মন্ডলের সহযোগিতায় প্রচারের কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। ছোট ছোট সভা করে ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, শ্রমিক, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, শিক্ষক, সমাজসেবী, স্বাস্থ্যকর্মী সকলের সাথে আলাদা আলাদা বৈঠক করেন। তাদের সাথে দলীয় প্রচার করেন, মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। এরপর দুয়ারে সরকার প্রকল্পে সরকারের প্রকল্প নিয়ে মানুষের কাছে প্রচার করেন এবং প্রয়োজনে মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতা করেন। তখনও তিনি জানতেন না যে তিনি প্রার্থী হবেন কিনা। কিন্তু তাঁর আদর্শ মমতা ব্যানার্জি তাই তিনি মমতা ব্যানার্জির একজন একনিষ্ঠ সদস্যা হিসাবে মানুষকে বুঝিয়েছেন সরকার কি করতে চাইছে, কি বলতে চাইছেন মমতা ব্যানার্জি, মমতা ব্যানার্জির স্বপ্ন কি।
এরপর প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম প্রস্তাবিত হতে কাজটা অনেক সুবিধা হয়ে গেল কারণ অনেক আগে থেকেই নেট প্র্যাক্টিস করে রেখেছিলেন। তাই এবার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শর্ট পিচ বল হোক আর বাউন্সার হোক ব্যাটে বলে করতে কোন অসুবিধা নেই ফিরদৌসীর। প্রচারের দিকে অনেক পিছিয়ে বিজেপি বা সিপিএম, এছাড়া বাকি দলগুলোর কথা না বলাই ভাল। যদিও বিজেপি নিয়ে সোনারপুর উত্তরের কেউই তেমন একটা মাথা ঘামাচ্ছেন না কারণ এবার বিজেপি-র টিকিটে যিনি প্রার্থী হয়েছেন তিনি এতদিন ফিরদৌসীর ঘরের আদরের দুলাল ছিলেন। ফিরদৌসী বেগমের সহযোগিতায় রাজনৈতিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। একসময় এবারের বিজেপি প্রার্থী রঞ্জন বৈদ্য পঞ্চায়েত সদস্য থেকে যখন জেলা পরিষদের প্রার্থী হবেন স্বপ্ন দেখছেন তখন তৎকালীন জেলা সভাপতি তাঁর নাম নাকচ করে দেন।
তখন কিন্তু সেই ফিরদৌসী বেগম তাঁর হয়ে সুপারিশ করে সেই স্বপ্নকে সফল করেন। আজ তিনি ফিরদৌসী বগমের বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন। একসময় এই রঞ্জন বৈদ্য মঞ্চে মাইক ফুঁকে মানুষকে বলেছিলেন সোনারপুরের নয়নের মনি ফিরদৌসী বেগম, এই সোনারপুরের উন্নয়নের কান্ডারী ফিরদৌসী বেগম, সোনারপুরের সকলের প্রিয় ফিরদৌসী বেগম। কিন্তু সব মোহ ভঙ্গ হল গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে যখন তাঁর আশা আরেকটু বেড়েছিল। রঞ্জন বৈদ্য সেদিন চেয়েছিলেন আদরের নন্দদুলাল হিসাবে সোনারপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির চেয়ারটা। এটা না পাওয়াতে দুঃখে কষ্টে তলে তলে দাদার অনুগামী হয়ে উঠলেন। কিন্তু তখনও তিনি জেলা পরিষদের দ্বিতীয়বারের সদস্য। এবার ফিরদৌসীর বিরুদ্ধে প্রচার করতে গেলে তাঁর আগের সব স্লোগান উল্টে দিয়ে ব্যক্তিগত কিছু কুৎসা মানুষের কাছে তুলে ভোট ভিক্ষা ছাড়া কোন রাস্তা নেই। কারণ তিনিও নিশ্চিত ভাবে জানেন না এই নির্বাচনে তাঁর জয় আসবে কিনা।নজরুল আলি মন্ডল দাবি করেন, আমরা কি হব তা বলবো না তবে এটা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি বিরোধীরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় কে হবে তা ঠিক করে নিক।
আজ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফিরদৌসী বেগমের সমর্থনে প্রথম প্রচার র্যালি হয় গড়িয়া বড়োদা প্রসাদ স্কুল থেকে কাঠিপোঁতা ব্রিজ পর্জন্ত। আজকের এই র্যালি ছিল মহা মিছিল। শুধুমাত্র কথাতে নয় একেবারে বাস্তবে মহামিছিল হয়েছে। যেভাবে মহিলারা পা মিলিয়েছেন মিছিলে ঠিক একইভাবে পাল্লা দিয়ে পুরুষরাও সামিল হয়েছেন। নমিতা দাস, নিতু দাস, দীপা ঘোষ, অশোকা মৃধা, দিপালী নস্করেরা যেমন মিছিলে ছিলেন ঠিক তেমনিই ছিলেন তরুণ কান্তি মন্ডল, রণজিৎ মন্ডল, বিশ্বজিৎ দে, সঞ্জিত চ্যাটার্জি, অভ্র মুখার্জি, কার্তিক বিশ্বাসের সাথে পা মিলিয়েছেন গোপাল দাস, কানাই কর্মকার, পাপাই দত্ত, বিশ্বজিৎ দাস (নন্দ), দেবাশিস দাশ, অরুণ রায়, বরুণ, ব্যোমকেশ কাউল, সুকান্ত মন্ডল, শ্রীমন্ত নস্কর, শান্তনু নস্কর সহ অনেকে। মিছিলে প্রবীর সরকার, গোরাচাঁদ নস্কর, শেখ মুস্তাক, চিরঞ্জিত, খলিল আহমেদ, অভিজিত মাকাল, সীমা মজুমদার সহ অনেক পঞ্চায়েত সদস্য ও সদস্যাদের।কিন্তু সবার ফাঁকে চোখে পড়ল কিছুদিন আগে ফিরদৌসী বেগম ও নজরুল আলি মন্ডলের বিরোধীতা করা এক নেতৃত্বকে, তাঁকে দেখে অনেকেই বেশ অবাকই হয়েছিলেন, নামটা নাইবা প্রকাশ করলাম।
কিন্তু সবার মাঝে দেখা যায় নি এক স্বঘোষিত পৌরমাতাকে আর অন্যজন তো সেই আবার আশাভঙ্গ হয়ে বিজেপিতেই যোগ দিয়েছেন। তবে হয়তো এবার বিজেপির মঞ্চ অলংকৃত করতে দেখা যাবে। তৃনমূলে থাকাকালীনও তাঁকে কোন বক্তব্য রাখতে দেখা যায় নি, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না। মিছিলে বৈশাখী ক্লাবের মোড় ও ৪৫ নং বাসস্ট্যান্ডের সামনে পুষ্পবৃষ্টিতে মানুষ বুঝিয়ে দেন ফিরদৌসী বেগমের জনপ্রিয়তা অটুট আছে ও থাকবে। এরপর থেকে দফায় দফায় পুষ্পবৃষ্টিতে ভেসে গেলেন ফিরদৌসী। উৎসাহিত মানুষ প্রথমদিনেই দুহাত তুলে উন্নয়নকে সমর্থন করে জানান দিয়ে দেন ফিরদৌসী বেগম তৃতীয়বারের জন্য জয়ী হচ্ছেন। সকলের কাছে আশির্বাদ প্রার্থনা করে প্রচার শেষ করলেন কাঠিপোঁতা ব্রিজে।