আগামী পুরভোটের প্রাক্কালে রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার গৌরহরি দাসের ৩৫ নং ওয়ার্ডের হাল হকিকত
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২০ : CAA এবং NRC-র বিরুদ্ধে প্রচার তুঙ্গে – রাজপুর সোনারপুর পৌরসভা-র 35 নং ওয়ার্ডে । গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে ৩৫ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের দাপুটে নেতা ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ দেবাশিস দাশ এবং এই ওয়ার্ডের দাপুটে যুব নেতা সুদীপ্ত দাসের নেতৃত্বে তিনটি বর্ণাঢ্য বড় মিছিল , ছয়টি পথসভা করার পর গত ১৯শে জানুয়ারি এই ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলন । মূল উদ্দেশ্য ছিল মমতা ব্যানার্জির নির্দেশ মেনে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতি, CAA ও NRCর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা । এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ও সাংসদ শ্রী শুভাশীষ চক্রবর্তী, বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি শ্রী শক্তিপদ মন্ডল সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউসিলারগণ এবং বোড়াল টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কানাই কর্মকার।সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন এই সম্মেলন বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও গ্রহণযোগ্য। মমতা ব্যানার্জির CAA ও NRCর আন্দোলনকে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দিতে কর্মীরা এইভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে সারা বাংলায় সাড়া জাগিয়ে তুলুক।দেশের এই সংকট সময়ে সকল দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে জননেত্রী মমতা ব্যানার্জির আন্দোলনে সামিল হয়ে সর্বস্তরের কর্মীদের এক হওয়ার আহ্বান জানালেন সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী । এই সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের সাংসদ সাধুবাদ জানান দিদির নির্দেশ পালন করার জন্য।
উল্লেখ্য যে, বিগত লোকসভা নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে বিজেপি প্রায় ১৪২৫ ভোটে এগিয়ে যায় । সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আগামী পৌরসভা নির্বাচনে র দিকে তাকিয়ে এই ধরনের কর্মসূচী একটা আলাদা গুরুত্ব দেয় বলে অনেকে মনে করছেন । তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল যে, ৩৫ নং ওয়ার্ডের সভাপতি ও পৌরপিতা গৌরহরি দাস ও তাঁর গোষ্ঠী এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না । তাঁর অনুমতিতে এইসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করতে পারেন নি । কিন্তু এই সম্মেলনে উপস্থিত কর্মীদের থেকে জানা যায় যে ৩৫ নং ওয়ার্ডের তৃণমূলের সভাপতি ও পৌরপিতা গত দুবছর যাবৎ দলীয় কাজে উদাসীন এবং তিনি অসুস্থ । তাঁর অসুস্থতার কথা বলা হলেও বাস্তবে এই ওয়ার্ডের তৃণমূলের কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ সকলের মনে এই পৌরপিতার উপর চাপা ক্ষোভ আছে । যার প্রকাশ গত লোকসভা ভোটে এই ওয়ার্ড থেকে বিজেপির বিপুল ভোট পাওয়া প্রমাণ করে।ঐ ওয়ার্ডের জনমত বলছে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে গৌরহরি বাবুকে তৃণমূল যদি আবার টিকিট দেয়, তাহলে বিজেপির এই ওয়ার্ড দখল করতে সুবিধা হবে। ৩৫ নং ওয়ার্ডের জনমত বলছে, এই ওয়ার্ডে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব থাকলেও তৃণমূল যদি স্বচ্ছ ও শিক্ষিত যোগ্য কাউকে টিকিট দেয় তাহলে মানুষের ভোটে তৃণমূল সহজেই ওয়ার্ডটা ধরে রাখতে পারবে।৩৫ নং ওয়ার্ডে তৃণমূলের যোগ্যতাহীন অনেকে কাউন্সিলার পদে দাঁড়াতে রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের অফিসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন । তাঁরা অনেকে মনে করছেন, গত ২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনে গৌরহরি বাবু যেমন এলাকার বিধায়ককে এড়িয়ে রাজ্যের এক মন্ত্রীকে ধরে টিকিট পেয়েছিলেন তেমনি এবারও ঐসব নেতৃত্বকে ধরে দলীয় টিকিট পেয়ে যাবেন । এই ওয়ার্ডের মানুষ বলছেন, ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে ৩৫ জন কাউন্সিলার টিকিট নিতে আগ্রহী যাদের কোনো যোগ্যতাই নেই । সাধারণ মানুষের অভিযোগ তৃণমূল দলের নেতারা গৌরহরি বাবুকে শিক্ষক ভেবে ভুল করে গতবার দলের টিকিট দিয়ে ৩৫ নং ওয়ার্ডের উন্নয়নকে পাঁচ বছরে একেবারে স্তব্ধ করে দিয়েছেন।আসলে তিনি শিক্ষকই নন, একটা টিনের স্কুল খুলে বসলেই যদি তিনি মাস্টার হয়ে যান তবে আর কিছুই বলার নেই। মমতা ব্যানার্জি সারা রাজ্যে উন্নয়ন করলেও এই ওয়ার্ডে তার কোনো ছিটে ফোঁটা দেখা যায় নি । যেটুকু কাজ হয়েছে – অবাঙালি মানুষের জন্য ছটপূজা ঘাট, হাসপাতাল, ওয়ার্টার রিজার্ভার প্রভৃতি বিধায়ক ফিরদৌসী বেগমের বদান্যতায় । সাধারণ মানুষের মতামত, ৩৫ নং ওয়ার্ডে তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে দুই জন নেতা রয়েছেন যাদেরকে মানুষের পাশে থাকতে দেখা যায় এবং এলাকায় তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা আছে।কিন্তু কাউন্সিলার তাঁদের কে দলীয় কোনো কাজে ডাকেন না । এলাকায় খবর নিয়ে দেখা যায়, রানিয়া এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী ও তৃণমূল নেতা দেবাশিস দাশ ও তৃণমূল যুব সভাপতি সুদীপ্ত দাস এলাকার বিধায়ক ফিরদৌসী বেগমের সহযোগিতা নিয়ে প্রায় সমস্ত ক্লাবের উন্নতিসাধন করেছেন । তাছাড়া, এই অঞ্চলের মানুষ বলছেন গত পাঁচ বছর ধরে পৌরপিতার অফিসে গিয়ে মানুষ কোনো কাজ পায়নি । কিন্তু, দেবাশিস দাশের কাছে গিয়ে মানুষ অনেক কাজ পেয়েছেন । দেবাশিস দাশ ও সুদীপ্ত দাসের নেতৃত্বে এলাকায় প্রায় ২২টা গলি রাস্তার কাজ হয়েছে এলাকার মানুষের সহযোগিতায় । এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গলিগালা রাস্তাগুলিতে রাবিশ ফেলে উঁচু করার কাজ চলছে দেবাশিস দাশের সহযোগিতায়।দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ডের তৃণমূলের সভাপতি ও পৌরপিতা গৌরহরিদাস এই দুই লড়াকু নেতৃত্বকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করলেও দুজনের দলের প্রতি আনুগত্যতা ও পরিশ্রমকে প্রাধান্য দেন উচ্চ নেতৃত্বরা । সাধারণ মানুষ মনে করছেন, পৌরপিতার দলবলের তোলাবাজি রুখে দেওয়া কিংবা একটা ছয় বিঘা সরকারি জমি বিক্রি করার বিরুদ্ধে দেবাশিস বাবুরা লড়ছেন বলেই এই বিরোধ ।
আসন্ন পুরভোটে যদি দল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে প্রাধান্য দিয়ে নিরপেক্ষ কাউকে খুঁজতে গিয়ে এই ওয়ার্ডে যোগ্য প্রার্থী বাছতে ভূল করে তাহলে মাস্তান বাহিনী লাগিয়েও এই পুরভোটে ওয়ার্ড দখলে রাখতে পারবে না তৃণমূল – একথা মনে করছেন এলাকার মানুষ । তবে, আমাদের সমীক্ষা থেকে একটা পরিষ্কার হয় যে, ৩৫ নং ওয়ার্ডে তীব্র গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব থাকলেও এই পুরভোটে যদি এই ওয়ার্ড থেকে নতুন কোনো যোগ্যতাপূর্ণ স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কাউকে টিকিট দেয় তাহলে মানুষের ভোটে সেই প্রার্থী অনায়াসে জিতবেন । সাধারণ মানুষের বক্তব্য, যদি সেই মানুষটিকে তৃণমূল টিকিট দেয় তাহলে বিরোধী দলের কাউকে এই ওয়ার্ডে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।সেক্ষেত্রে ওয়ার্ডটা তৃণমূলের বিরোধীহীন ওয়ার্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । একবাক্যে ঐ অঞ্চলের মানুষ স্বীকার করছেন যে , সিপিএম জমানা থেকে তৃণমূল জমানায় , বিজেপি-অবিজেপি অনেকে কাউন্সিলার টিকিট নিয়ে লড়েছেন ও জিতেছেন, কিন্তু উন্নয়ন সেই তিমিরেই । তাই এবার মানুষ ভোট দেবেন দল দেখে নয় , মানুষ দেখে । এটাই এখন মানুষ দেখতে চান, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর টিকিটে কে দাঁড়াচ্ছেন এই ওয়ার্ডে।