রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড নিয়ে জোর জল্পনা, পার্শবর্তী ওয়ার্ডের মহিলা প্রার্থীর সম্ভাবনা
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২০ : এই মুহুর্তে রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার গড়িয়া স্টেশন এলাকায় যদি কোন ওয়ার্ড নিয়ে জটিলতা থাকে তা হল ২ নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ড গত ১০ বছর আগে তৃণমূলের দখলে আসার পর থেকে প্রথম পাঁচ বছর মানুষ উন্নয়ন দেখেছে।এখানে জল জমার একটা সমস্যা ছিল, নিকাশির একটা সমস্যা ছিল, অলিগলি কাঁচা রাস্তার সমস্যা ছিল তার অধিকাংশটাই আগের নির্বাচিত পৌরপিতার উদ্যোগে হয়েছে। কিন্তু গত পৌরসভা নির্বাচনের পর থেকে উন্নয়ন অনেকটাই থমকে গিয়েছে।তা বলে কি রাস্তা হয় নি, ড্রেন হয় নি, আলো লাগে নি? হয়েছে কিন্তু মানুষ যতটা আশা করে চেয়েছিল ততটা হয়নি।যেটা বেশি হয়েছে তা হল সাধারণ মানুষের উপর তান্ডব। এই নিয়ে সাম্প্রতিক কালীতলায় রটন্তি কালী পুজোয় আলোচনা হচ্ছিল বর্তমান পৌরপিতা অমরেশ সরদারের সাথে। তাকে প্রশ্ন করলাম, এবার তো এই ওয়ার্ড সাধারণ (মহিলা) হয়েছে কি ভাবছে? উত্তরে তাঁর মুখের বিকৃতি দেখে বোঝাই গেল প্রশ্নে তিনি খুশি নন। তিনি বললেন, তুমিও জানো কি হয়েছে আর আমি তো আরও ভাল জানি। এভাবে আমাকে অপদস্থ হতে হবে ভাবিনি। তবে এবার মহিলা হওয়াতে আমি কোথাও আমার স্ত্রী-র সুপারিশে কিছু বলিনি আর বলবোও না। শুধুমাত্র একটা বিদ্বেষের কারণে এবারের লোকসভা নির্বাচনে হারতে হয়েছে। নাম না করে তিনি জানান, যেখানে মুখটা সামনে এসেছে সেখানেই হারতে হয়েছে। আমি ছিলাম শুধুমাত্র একটা সাধারণ পৌরপিতা, যখন আমি কিছু করতেই পারবো না তখন আমার পূর পরিষেবা নিয়ে চিন্তা করার কোন মানেই হয় না। তাই আমি আমার শিক্ষকতা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। বিধায়কের ডাকে যখন যেভাবে পেরেছি সহযোগিতা করেছি। তুমি নিজেও খুব ভাল করে জানো তোমার সাথে কি ব্যবহার হয়েছে। সেখানে ওয়ার্ডের কথা বাদ রাখো। আমি আর এই নোংরা ঘাটতে চাই না। তিন থেকে চারজন দিয়ে কি আর ওয়ার্ড চলে? সাধারণ মানুষের পরিষেবা দিয়ে ওয়ার্ড চালাতে হয়, এতদিনে এতটুকু বিঝেছি।আমি তো রাজনীতির সাথে কখনও যুক্ত ছিলাম না, এসে সবটাই অন্তর দিয়ে বুঝেছি।
এবার অমরেশ সরদার তৃণমূলের প্রার্থী না হলেও তাঁরই পরিবার সূত্রে কেউ হবে বলে অনেকে ধারণা করছে। কিন্তু নেতৃত্ব তা ভাবছে না। নেতৃত্ব ভাবছে এবার এই ওয়ার্ডে নতুন মুখ আনতে হবে। এমনও খবর আছে ওয়ার্ড বিন্যাস হতেই এই ওয়ার্ড মহিলা (সাধারণ) হতেই বিজেপি পুজো দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। এর পিছনে একটাই কারণ যদি কোনক্রমে অমরেশ সরদারের পরিবারের কেউ যেন তৃণমূলের প্রার্থী হয়। তারাও মনে প্রাণে চাইছে ওই পরিবার থেকেই প্রার্থী হোক। এমনও শোনা যাচ্ছে এই পরিবারের পরিচিত কেউ প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা হলেই বিজেপি চূরান্ত পুজো দিয়ে জয় নিশ্চিত করবে। যদি তার ফল হাতে হাতে লোকসভা নির্বাচনে পাওয়া গেছে। যারা বেশি লাফিয়েছিল মানুষ তাদের লাফানোকে ভোট যন্ত্রে রুখে দিয়েছে। ওয়ার্ড থেকে জয় কোন ভাবে নিশ্চিত করতে প্রচারে বলিউড নায়িকা ভাগ্যশ্রীকে ও রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুকে আনা হয়েছিল যা ছিল বিরল ঘটনা। লোকসভা নির্বাচনে সামান্য একটা ওয়ার্ডে বলিউড নায়িকাকে ও রাজ্যের মন্ত্রীকে প্রচারে আসতে হয়েছে। তাতেও শেষরক্ষা হয় নি। এবারও হবে বলে ওয়ার্ডের অধিকাংশ তৃণমূল কর্মীরা আশা করছে না। তাঁরা সামনে না হলেও নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বলেই ফেলছে এবার যদি এই পরিবারের কেউ প্রার্থী হয় তবে আর দেখতে হবে না। চোখ বুজেই বিজেপি লোকসভার মত জয় নিশ্চিত করে নেবে।
শোনা যাচ্ছে বিজেপি-র পক্ষ থেকে দেবজিতের স্ত্রী-র নাম উঠে আসছে। দেবজিতের স্ত্রী গত লোকসভা নির্বাচনে শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হয়েছিল। এটা বলা যেতেই পারে মানুষের সাথে সু সম্পর্ক রেখে চললে যে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের লাভ ছাড়া ক্ষতি হয় না। কিন্তু সেখানে সামান্য ক্ষমতার দাম্ভিকতায় কাউকে আঘাত করে কথা বললে সেই অভিষাপ এসে বর্তায়। যার উদাহরণ তাপস পাল। কৃষ্ণনগরে এমন একটা বেফাঁস মন্তব্য করেছিল যার জন্য তাকে পরবর্তীতে ক্ষমা চেয়েও পূরণ করা যায় নি। সেরকমই এই ওয়ার্ডের যিনি নেতৃত্ব তিনি কথায় কথায় কারও মা বা বাড়ির মহিলাদের নিয়ে কটু মন্তব্য করবেন আর তাঁর রাজনৈতিক উত্থান হবে তা কিন্তু নয়। যদি তাঁর দুর্ণীতি বা অপকর্ম সামনে সমালোচনা করা হলে তিনি কুৎসিত ভাষায় প্রশ্ন করবেন “সোনারগাছিতে তোর মা যে দাঁড়াতো কত টাকা নিত?” এটা সভ্যতার মধ্যে আসে না।মৃত্যুকাল পর্যন্ত এধরনের একটা মন্তব্য মনে গেঁথে থাকবে।মনে রাখতে হবে তিনি যার নেতৃত্বে রাজনীতিটা করছেন তিনিও একজন নারী। সেই নারীকে মাথায় রেখে তাঁর রাজনীতি এবং তাঁর সংসার। যে চাকরিটা তিনি করছেন সেটাও সেই নারীর নেতৃত্বে রাজনীতি করেছে বলেই, তাঁর নিজস্ব যোগ্যতার বলে নয়। তাকে আজ পৃথিবী চিনিয়েছে সেই নারী, তাঁর সংসারটা সামলাচ্ছেন সেই নারী, তাঁর বিধানসভার বিধায়ক সেই নারী। আর সেই নারীত্বকে নিয়ে কুৎসিত ভাষার প্রতিবাদ মানুষ মুখে না বলতে পারলেও ভোট যন্ত্রে দিয়ে বুঝিয়ে দেবে। তিনি তো তাঁর স্ত্রীকে এবার সামনে আনতে চাইছেন কিন্তু জেলা নেতৃত্ব তাকেই ভোট রাজনীতিতে সামনে রাখতে চাইছেন না। রাজনৈতিক মহল তাকে নিয়ে যে মন্তব্য করে তাতে তাঁর সম্মান যত না বাড়ছে তাঁর থেকে অসম্মান হচ্ছে অনেক গুণ বেশি। তাঁর থেকে বেশি অসম্মান হচ্ছে সেই মহিলার যিনি প্রাণপাত করে তিল তিল করে রাজ্যটাকে উন্নয়নের আলো দেখিয়েছেন সেই মমতা ব্যানার্জির।
এই মুহুর্তে শোনা যাচ্ছে শিখা সরদার (অমরেশ সরদারের স্ত্রী), সুলেখা হালদার (অমরেশ সরদারের শালিকা), শুক্লা মন্ডল এবং উত্তরপাড়া ও নবপল্লী থেকে যোগেশ্বর ঘোষের কন্যার নাম উঠে আসছে।তবে অনেকেই মনে করছে এই ওয়ার্ডের এমন একজনের স্ত্রীকে প্রার্থী করা হোক যার নামেতেই মানুষের ভক্তি প্রকাশিত হবে। সেরকম একজনের নাম জনমত নির্বিশেষে সকলের মুখে ঘুরছে।এখন দলের সিদ্ধান্তে সেই প্রার্থী বাছাই করা। নেতৃত্বের একজন তো বলেই দিল এসবকে সামনে রেখে ভোট হবে না। জয় আনতে হলে এদেরকে একেবারে দূরে সরিয়ে দিয়ে ভোট করতে হবে। এরা দলের জন্য ক্ষতিকারক। এরা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না, মানুষের কাছে এদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। এরা জীবনে কোনদিন মঞ্চে উঠে বক্তব্য রাখার সাহস দেখায়নি বরং মঞ্চে উঠে আসন ভরাট করার কাজে বেশি উৎসাহ দেখিয়েছে।তবে এই ওয়ার্ডে বিজেপি যে ভাল ফল করবে এটা নিশ্চিত করে বলা যেতেই পারে যদি তৃণমূলের তরফে কোন পরিবর্তন হয় সেক্ষেত্রে আলাদা হতে পারে। ভোটের দায়িত্ব যদি অন্য কারও হাতে দেওয়া হয় তবেই এই ওয়ার্ডে সুফল দেখবে তৃণমূল।এমনও হতে পারে ১ নং ও ৩ নং ওয়ার্ডের গতবারের জয়ী মহিলা প্রার্থীদের মধ্যে কাউকে এই ওয়ার্ডের প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল।প্রশান্ত কুমারের দল ওয়ার্ড ঘুরে সার্ভে করে গেছে, তাঁর রিপোর্টও জমা হয়েছে, এবার দলীয় নেত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।