Warning: mysqli_real_connect(): Headers and client library minor version mismatch. Headers:101106 Library:100236 in /home/u190665168/domains/takmaaa.com/public_html/wp-includes/wp-db.php on line 1653
আশিস রায় পরিচালিত “সিতারা” এক নারীর টানাপড়েনের জীবন, ভোগের জীবন, আক্রোশের কাহিনী – takmaaa.com
You cannot copy content of this page. This is the right with takmaa only

আশিস রায় পরিচালিত “সিতারা” এক নারীর টানাপড়েনের জীবন, ভোগের জীবন, আক্রোশের কাহিনী

অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ২১শে জুলাই ২০১৯ : সাহিত্যিক আবুল বাশারের বিখ্যাত উপন্যাস ‘ভোরের প্রসূতি’ অবলম্বনে ছায়াছবি শিবানী এন্টারটেনমেন্ট প্রযোজিত আশিস রায় পরিচালিত ছবি “সিতারা”।সিতারা নামক বাংলাদেশের এক সাধারণ গ্রাম্য গৃহবধূর জীবনের টানাপোড়েনের গল্প আরও গুছিয়ে করা যেত।

বাংলাদেশ থেকে স্বামী জীবন শেখের হাত ধরে কাঁটাতার পেরিয়ে ভারতে আসে সিতারা। সঙ্গে তার দেহরক্ষী দিলু এবং দিলুর প্রতিবন্ধী বোন নয়না আসে ভারতে। নিজের ব্যাবসায়িক স্বার্থে কবীর মহাজনের কাছে সিতারাকে বিক্রি করে দেয় জীবন। কবীর সিতারার শরীরকে হাতিয়ার করে তার চোরা কারবারকে বড় করার স্বপ্ন দেখে। এভাবেই একের পর এক মহাজনের বিছানায় হাতবদল হতে থাকে সিতারা। একসময় আসে ভাঁটার টান। সিতারার দেহে জন্ম নেয় এক গোপন রোগ। ভাঙতে থাকে শরীর। অসুস্থ সিতারাকে দিয়ে আর কোনও কাজ হবে না ভেবে তাকে কারবার থেকে সরিয়ে দেয়  কবীর। এমন সময় সিতারার আলাপ হয় সমাজসেবী মানব সরকারের সঙ্গে। মানবের চোখে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে সে। সিতারাকে ভালোবাসার মায়াজালে আবদ্ধ করে মানব নিজের কাজ হাসিল করতে চায়। উদ্বাস্তু মানুষদের জন্য কাজ করতে গিয়ে মানবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পথ চলতে শুরু করে সিতারা। কিন্তু মানবও তাদের সম্পর্ককে জনসমক্ষে স্বীকার করতে চায় না। সিতারার জীবনে পুরুষ সঙ্গের স্বাদ পেয়েছে বহুবার। প্রতিবারই তাকে এই ঘৃণ্য পথ থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছে দিলু।দিলু কোথাও যেন সিতারাকে ভালোবাসতে গিয়ে আটকে গেছে বহুবার।মানব ভটযুদ্ধে জয়ী হলেও অবশেষে সিতারার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার দাম দিতে হল বন্দুকের গুলিতে। সিতারা এক এক করে প্রতিশোধ নিয়েছে যারা তাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। অবশেষে সেই দিলুই থেকে গেল সিতারার সাথে, সিতারা সব ছেড়ে দিলুকে নিয়ে ফিরে গেল বাংলাদেশে। ফেলে গেল তার সব তিক্ত অভিজ্ঞতা আর যন্ত্রণা।

সিতারার চরিত্রে রাইমা সেনের অভিনয় ভালো হলেও আরও ভাল অভিনয় করার সুযোগ ছিল। রাইমার বাংলাদেশের ভাষা উচ্চারণ নিয়ে আরও যত্ন নেওয়া উচিত ছিল।মাঝেমাঝে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের বাংলা প্রকাশ পেয়েছে।কবীরের চরিত্রে নাসারের অভিনয় নিয়েও খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারবে না দর্শক।

তবে এ ছবিতে খুব ভাল অভিনয় করেছে দিলুর চরিত্রে জাহিদ ও বাংলাদেশের মেয়ে হয়ে এপার বাংলার বধু সুমা দে।বাংলাদেশী এই অভিনেতার মুখে সেদেশের ভাষা ছিল বেশ মিষ্টি। সিতারার স্বামী জীবন শেখের চরিত্রে ফজলুর রহমান এবং মানবের চরিত্রে সুব্রত যথাযথ। ছোট একটি চরিত্রে পার্থসারথি দেব, কবীরের ব্যবসার আরেক ঘুঁটি লক্ষণার চরিত্রটি চিত্রনাট্যের দাবী অনুযায়ী ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন মেঘনা নাইডু। নয়নার ভূমিকায় শিশুশিল্পী নৈরতা মজুমদারের উপস্থিতি ছিল ভালো।তবে এই ছবি করাটা যে খুব সহজ কাজ তা কিন্তু নয়। আশা রাখবো এই ছবির অভিজ্ঞতা আশিস রায়ের পরবর্তী ছবিতে কাজে লাগবে।

ছবিতে অনেক জায়গায় অসঙ্গতি দেখা গেছে। কোথাও যেন অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, কোথাও অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা থাকা সত্ত্বেও কোথাও যেন খাপছাড়া ছিল। ‘সিতারা’র সঙ্গীত পরিচালনায় দায়িত্বে ছিলেন কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। কালিকাপ্রসাদের অকালপ্রয়াণে সেই দায়িত্ব কাঁদে তুলে নেয় তাঁরই প্রতিষ্ঠিত বাংলা গানের দল ‘দোহার’। ছবির গানগুলি খুবই শ্রুতিমধূর। এই ছবি ছিল কালিকাপ্রসাদের শেষ গান।

ছবিটা দেখার কারণ হল আজকাল বাংলা ছবিতে ছিন্নমূল, প্রান্তিক মানুষদের জীবনের গল্প নিয়ে খুব বেশি ছবি তৈরি হয় না। একা একটি মেয়ের সারাজীবন বেঁচে থাকার লড়াই ও সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে প্রতিটি মানুষের চৌকাঠ থেকে ঠোক্কর খেতে খেতে সেই মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প হল ‘সিতারা’।প্রতিশোধ স্পৃহার আগুনে পুড়তে থাকা সিতারার যন্ত্রণার গল্প সত্যিই গায়ে জ্বালা ধরায়।সেদিনের লেখা ‘ভোরের প্রসূতি’র জীবনযুদ্ধে পরিবর্তন আসেনি এতটুকু বরং আজ এই গল্পের থেকে বাস্তব জীবনটা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। ছবি : রাজীব মুখার্জি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *