জেলায় পৌরসভা নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোটে জয়ী হয়ে নজির করলেন রাজপুর সোনারপুরের নজরুল আলি মন্ডল কিভাবে?
অম্বর ভট্টাচার্য, তকমা, সোনারপুর, ১৩ই মার্চ ২০২২ : ২০২২ সালের পৌরসভা নির্বাচনে একমাত্র রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ২৭ নং ওয়ার্ডের তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী নজরুল আলি মন্ডল জয়ের ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিন্ত ছিলেন। এর পিছনে কিন্তু কোন বুথ জ্যাম বা অবাধে ছাপ্পা ভোট বলে কিছুই ছিল না। এই ওয়ার্ডে মোট প্রার্থী ছিল ৪ জন। জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন সাকাউদ্দিন মন্ডল, বিজেপি প্রার্থী ছিলেন সুপ্রতিম কর্মকার, তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন নজরুল আলি মন্ডল এবং যে নামটা না নিলেই নয় তিনি হলেন সিপিএম প্রার্থী আয়ুব আলি সেখ। কিন্তু এই চারজনের মধ্যে সিপিএম প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। এরফলে এই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন মাত্র তিনজন প্রার্থী। কিন্তু নজরুল আলি মন্ডল বিগত ৫ বছর এই ওয়ার্ডের পৌরপিতা ছিলেন এবং সাথে সি আই সি (জল) ছিলেন। মানুষ নজরুল আলি মন্ডলের উন্নয়ন নিয়ে পরীক্ষিত, তাই তাকে বেশি প্রচার করতে হয় নি। যেহেতু এই ওয়ার্ড সংখ্যালঘু অধ্যুষিত তাই বিজেপি এখানে ভাল ফল করবে না এটা জানাই ছিল, এছাড়া জাতীয় কংগ্রেসের অবস্থা গোটা দেশে সকলের জানা। তাই মানষের পছন্দের জন্য শুধুমাত্র তৃনমূল কংগ্রেস বাকি থাকলো। আর এটাই নজরুল আলি মন্ডলের জয়ের কারণ হিসাবে যথেষ্ট ছিল। বিশেষ করে এই ওয়ার্ডের মহিলারা নজরুল আলি মন্ডলের প্রধান ভরসা জুগিয়েছেন। মহিলারা তাকে সাহস জুগিয়েছেন নিজের ওয়ার্ডে প্রচারের প্রয়োজন নেই, রাজপুর সোনারপুরের ৩৫টা ওয়ার্ডের মধ্যে সোনারপুর উত্তর বিধানসভার ১৭টা ওয়ার্ডে প্রচারের কাজে।
নজরুল আলি মন্ডল খুব শান্তিতে বাকি ১৬টা ওয়ার্ডে প্রার্থীদের হয়ে প্রচার থেকে কর্মীসভায় মনোনিবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন যাতে তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেন। এছাড়া সোনারপুর উত্তর বিধানসভার মোটের উপর নজরুল আলি মন্ডলের সাংগঠনিক দায়ভার অনেক বেশি কারণ পঞ্চায়েত থেকে পৌরসভা সংগঠনের কাজটা তাঁকেই দেখতে হয়। আর তাই তাকে গোটা সোনারপুর উত্তর বিধানসভার সাংগঠনিক প্রধান হিসাবেই মান্যতা দেওয়া হয়। এবারের পৌরসভা নির্বাচনে নজরুল আলি মন্ডল ১৬টা ওয়ার্ডে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন কারণ তার ওয়ার্ড নিয়ে সেভাবে কোন পিছটান ছিল না বললেই চলে। বরং তিনি বিজেপি ও কংগ্রেস প্রার্থীদের সাথে সৌজন্যমূলক ও বন্দুত্বসুলভ সহযোগিতা করেছেন যেটা নজির। বিভিন্ন জায়গায় বিরোধীদের প্রচার করতে দেওয়া হয় নি, দেওয়াল লিখতে দেওয়া হয় নি, পথসভা করতে দেওয়া হয় নি বলে অভিযোগ উঠলেও এই ওয়ার্ডে বিরোধীদের সেরকম কোন অভিযোগ ছিল না। তিনি একটাই কথা বিশ্বাস করেন, আগে ওয়ার্ডে উন্নয়ন করেছি, মানুষ সরকারি উন্নয়নের সুবিধা পেয়েছে, তাই মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেবে। এর সাথে তিনি জানান ভোট পরবর্তী কোন হিংসার ঘটনাকে দল প্রশ্রয় দেবে না, সোনারপুর উত্তর বিধানসভার বিধায়ক এখানে এধরনের কোন ঘটনাকে পছন্দ বা প্রশ্রয় দেবে না। যদি এরকম ঘটনার সাথে দলের কেউ যুক্ত থাকে দল তার ব্যবস্থা নেবে। এটা দলের পক্ষ থেকে কড়া বার্তা।
একঝলকে দেখে নেওয়া যাক ২০১৫ সালে এই ওয়ার্ডে কি ফল হয়েছিল মোট ভোটার – ১০৭২৬ মোট ভোট প্রদান – ৮২৬৩ তৃনমূল কংগ্রেস – ৫২৫৩, সিপিএম – ১৬৭১, বিজেপি – ৭২১ ও কংগ্রেস – ৬১৮ ভোটের জয়ের ব্যবধান – ৩৫৮২
এবার ২০২২ সালে এই ওয়ার্ডে কি ঘটেছিল একবার দেখে নেওয়া যাক কারণ এবার ভোটার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মোট ভোটার – ১৪৬১১ মোট ভোট প্রদান – ১১৮৫৬ তৃনমূল কংগ্রেস – ১০৩৩৭, সিপিএম – নিল , বিজেপি – ৬৪২ ও কংগ্রেস – ৮৭৭ ভোটের জয়ের ব্যবধান – ৯৪৬০ তাহলে চিত্রটা এরকম হল সিপিএম না থাকায় কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে কিন্তু বিজেপির ভোট কমেছে। আর সিপিএমের যে ভোট ছিল তা তৃনমূল কংগ্রেসের ঝুলিতে গেছে।