অ্যাপোলো হসপিটালে হৃদপিণ্ডের বিরল জন্মগত ত্রুটির চিকিৎসা করিয়ে নতুন জীবন
দেবকুমার মল্লিক, তকমা, কলকাতা, ১৯শে এপ্রিল ২০২২ : হাওড়ার বছর পঁয়ত্রিশের শান্তনুর হাই ব্লাড প্রেশার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তাই তিনি গিয়েছিলেন চেকআপ করাতে। পরীক্ষায় ধরা পড়ে যে শান্তনুর হৃদপিণ্ডে ট্রাইকাসপিড (তিনটে লিফলেট) ভালভের বদলে বাইকাসপিড (দুটো লিফলেট) ভালভ রয়েছে। সমস্ত স্বাভাবিক মানুষের হৃদপিণ্ডে ট্রাইকাসপিড আওর্টিক ভালভ থাকে। এছাড়াও ওঁর আওর্টার CT অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করে দেখা যায় সেখানে কোআর্কটেশন (জন্মগত সঙ্কীর্ণতা) রয়েছে। এর সমাধান করার প্রণালী এতই জটিল যে বহু হাসপাতাল সেই অপারেশনটা করতে অস্বীকার করে। তারপর শান্তনু অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালটি হসপিটালস, কলকাতায় আসেন।
ডাঃ বিকাশ মজুমদার, ডাঃ আফতাব খান, ডাঃ তমাশিস মুখার্জি এবং ডাঃ যমন কলিতাকে তত্ত্বাবধানে তৈরি একটা টিমের অধীনে এন্ডোভাস্কুলার স্টেন্টিং প্রোসিডিওরের জন্য শান্তনুকে প্রস্তুত করা হয়। আওর্টা হল শরীরের সবচেয়ে বড় ধমনী, যা অক্সিজেনপূর্ণ রক্ত হৃদপিণ্ড থেকে বাকি শরীরে পৌঁছে দেয়। আওর্টিক কোআর্কটেশন, অর্থাৎ আওর্টার সঙ্কীর্ণ হয়ে যাওয়ার ফলে হৃদপিণ্ড আওর্টার মধ্যে দিয়ে রক্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য বেশি জোরে পাম্প করতে বাধ্য হয়।
এ সম্বন্ধে ডাঃ বিকাশ মজুমদার বলেন “কোআর্কটেশন অফ আওর্টা নামের এই জন্মগত ত্রুটি এতটাই বিরল যে ১০,০০০ শিশুর জন্ম হলে ৪ জনের মধ্যে দেখা যায়। যত লোকের হৃদপিণ্ডে জন্মগত ত্রুটি থাকে, তাদের মধ্যে মাত্র ৬% লোকের মধ্যে এই ত্রুটি দেখা যায়। সাধারণত এটা ছোটবেলাতেই (কৈশোর পেরোবার আগে) ধরা পড়ে যায়। তখন এর চিকিৎসা অনেক সহজ থাকে, আর এর প্রধান লক্ষণ হল ছোট বয়সে হাই ব্লাড প্রেশার।”
ডাঃ আফতাব খান বললেন “শৈশব শেষ হয়ে যাওয়ার পরে যেসব রোগীর কোআর্কটেশন অফ আওর্টার চিকিৎসা হয়, তাদের বয়সের কারণে আওর্টিক রাপচার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। শান্তনুবাবুর বেলায় একটা বেলুন ডাইলেশনের পর চেথাম প্ল্যাটিনাম আওর্টিক স্টেন্ট বসানো হয়েছিল। এই জটিল ব্যাপারটা সামলানোর জন্য ৪৯ মিলিমিটার লম্বা সংকীর্ণ জায়গাটার উপর একটা ৬০ মিলিমিটারের সাধারণ স্টেন্ট হ্যান্ড মাউন্ট করতে হয়েছিল। বেলুনটা সংকীর্ণ আওর্টাকে চওড়া করতে সাহায্য করেছে, ফলে প্রস্থটা রক্ত চলাচলের জন্য স্বাভাবিক হয়ে যায়। স্টেন্ট প্রসারিত হয়ে যাওয়া এবং বয়সের কারণে স্টেন্ট সরে যাওয়ার সম্ভাবনার কারণে এই কেসটা কঠিন ছিল।”
শান্তনুবাবুর অপারেশন হয়েছিল ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ। তারপর থেকে তিনি স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছেন। কোনো চিকিৎসা না করা হলে তাঁর মৃত্যুও হতে পারত। হাই ব্লাড প্রেশারের কারণে স্ট্রোক এবং দীর্ঘমেয়াদি কার্ডিয়াল জটিলতার সম্ভাবনাও ছিল। কার্ডিয়াক ক্যাথিটার ল্যাবরেটরিতে জেনারেল অ্যানাস্থেশিয়ার মাধ্যমে রাইট ফেমোরাল আর্টারি রুট (ডানদিকের কুঁচকির পথ) দিয়ে এই প্রোসিডিওর করা হয়েছে।