উষ্ণায়ন থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সংরক্ষণ তাই রাজস্থানের ১৮০০ সালে দূর্গা নিয়ে সচেতনতায় এবার ভবানীপুর দুর্গোৎসব সমিতি
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০১৯ : বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে উষ্ণায়ণ আর বিশ্বায়ণ বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই উষ্ণায়ণের ফলে প্রকৃতি তার নিজের গতি বদল করছে, বদলে যাচ্ছে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট। এর প্রধান কারণ বিশ্বায়নের জন্য আমরা ধ্বংস করে ফেলছি প্রকৃতিকে, মেরে ফেলছি হাজার হাজার গাছ, ভরাট করছি শত শত জলাশয় কারণ আমরা উন্নয়ন চাইছি। কিন্তু এটা ভুলে যাচ্ছি প্রকৃতি কিন্তু আমাদের উপর নির্ভরশীল নয় বরং আমরা প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতি বিরূপ হলে সবটাই ধ্বংস হয়ে যাবে, আমরাও থাকবো না আর বিশ্বায়ন তো নয়ই।
তাই রাজ্যের বহু ক্লাব, সংগঠন, এমনকি বহু অনুষ্ঠানে গাছের চারা তুলে দেওয়া হয় যাতে নিজেদের ছোট গন্ডির মধ্যে বৃক্ষরোপণ করতে পারি। আর এবারের দূর্গা পুজোয় এই সচেতনতাকে বৃহত্তর রূপদান করতে চলেছে ৫৪ বছরের পুরাতন পুজো ভবানীপুর দুর্গোৎসব সমিতি। প্রতিবছর এই পুজোর আয়োজকরা নতুন নতুন থীম নিয়ে মানুষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করে। আর এবারের থীম নিয়ে পুজো উদ্যোক্তা সম্পাদক শুভঙ্কর রায় চৌধুরী জানান, এবার আমাদের থীম বলতে তেমন একটা বিশাল কিছু নয়। রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে হেরিটেজ রক্ষা করতে। আমাদের রাজ্যে এরকম বহু হেরিটেজ আছে যা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে বসেছে। এছাড়া ভবানীপুর নিজেই একটা হেরিটেজ স্পট কারণ এখানে অনেক বিখ্যাত মানুষের বাসস্থান আছে যেমন নেতাজি, সত্যজিত রায়, চিত্তরঞ্জন দাস, উত্তম কুমার, মল্লিক বাড়ি,
সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়, মিত্র ইন্সটিটিউশন সহ আরও অনেক।এছাড়া ভবানীপুর অঞ্চল অবাঙ্গালিদের বাস তাই তাদেরও এই পুজোয় সামিল করতে আমরা রাজস্থানের এও ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছি। জানা যায় ১৮০০ সালে রাজস্থানের জয়পুরে দুর্গাপুজো হয়, এর থেকে বোঝা যায় মা দূর্গা শুধুমাত্র বাংলাতেই পুজিত নয় বাংলার বাইরে পুজিত হতেন। কিন্তু এই দূর্গা প্রতিমা দেখলেই মানুষ বুঝতে পারবে একটা চালচিত্রের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম সংস্কৃতির মেলবন্ধন। যা আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চেয়ে এসেছেন যে ধর্মের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকবে না, কোন সাম্প্রদায়িকতার বার্তা থাকবে না। বর্তমানে এই দূর্গা প্রতিমা ভারতীয় যাদুঘরে রাখা আছে। তাই আমাদের এবারের থীম সবুজায়নের মধ্যে হেরিটেজ রক্ষা করো। গোটা ভারতে এই প্রথম একটা নার্সারির মধ্যে দুর্গাপুজো হতে চলেছে। সবুজায়ন মানে শুধু কয়েকটা বাজারি গাছ দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া নয়। আমাদের সবুজ মন্ডপের মধ্যে থাকছে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন ধরনের অজানা গাছ যা থেকে আমরা বহু উপকার পেয়ে থাকি। সাম্প্রতিক সবাই জানেন অ্যামাজন অরন্যে কিভাবে আগুনে ধ্বংস হয়ে যেতে বসেছে বিশ্বের সব থেকে বড় অরন্য। এরফলে কত গাছ ও বন্যপ্রানীর মৃত্যু ঘটেছে। গাছ আমাদের
প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে বজায় রাখে আর তাই এই অ্যামাজন অরন্যের ধংসের ফলে বৈজ্ঞানিকরা জানাচ্ছেন পৃথিবীর তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। এছাড়া বহুদিন আগে থেকে বলা হচ্ছে এই উষ্ণায়ণের ফলে বরফ গোলে যাচ্ছে এবং যার ফলে ঋতুর অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। এরমধ্যে দিয়ে আমরা মানুষকে সচেতন করতে চাইছি যাতে মানুষ গাছ না কেটে গাছ লাগানোর জন্য উদ্যোগী হয়। এর ফলে আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকবে। বহুতল আবাসন নির্মান করতে হবে ঠিকই কারণ জনসংখ্যা বাড়ছে তার মানে এই নয় যে প্রকৃতিকে হত্যা করে। বহুতল আবাসনগুলোর মধ্যে একটা জায়গায় যদি গাছ লাগিয়ে ছোট্ট উদ্যান করা যায় তাতেও সবুজ বাঁচে। সাম্প্রতিক এই পুজোর খুঁটি
পুজোয় উপস্থিত ছিলেন কলকাতা কর্পোরেশনের ৭২ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় পৌরপিতা সন্দীপ বক্সি, ৭০ নং ওয়ার্ডের পৌরপিতা অসীম বসু, বৈশ্বানর চ্যাট্টার্জি (মেয়র পারিষদ সদস্য, কলকাতা কর্পোরেশন), শচীদানন্দ ব্যানার্জি, বুদ্ধদেব মুখার্জি (সহকারি নগরপাল, কলকাতা পুলিশ), মহঃ এথেশহামুল হক সহ অনেকে। এই পুরো পরিকল্পনার নেপথ্যে যিনি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন সেই দঃ ২৪ পরগণায় অবস্থিত গ্রীনমলের দীনেশ রাওয়াত এবং পুজোর সম্পাদক শুভঙ্কর রায় চৌধুরী সহ স্থানীয় বাসিন্দারা ও পুজোর সাথে যুক্ত থাকা সদস্য ও সদস্যারা।