গনেশ পুজোর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ৩২ নং ওয়ার্ডের মন্ত্রী সাধন পান্ডে অনুগামী ক্লাব কর্তার হাতে শ্লীলতাহানি ও হুমকির কবলে মিহিলা সঙ্গীত শিল্পী পিউ
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ৬ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ : সাম্প্রতিক বাংলায় এত উৎসবের মেলা বসে গেছে যে মানুষও নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে। আগে ছিল ১২ মাসে ১৩ পার্বন কিন্তু এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ মাসে প্রায় ৫০ পার্বন। ইদানিং কালে গনেশ পুজোর চল বেড়েছে এই রাজ্যে। গনেশ পুজো স্বাভাবিক ভাবে আগে অবাঙ্গালিরা পালন করতো কিন্তু হালে অবাঙালি থেকে বাঙালি কোন সম্প্রদায় বাকি নেই এই পুজোয়। রাজ্যের সর্বত্রই বিশেষ করে কলকাতায় এই পুজোর চল বেড়েছে প্রচন্ড হারে। তা নিয়ে কোন আপত্তি নেই কারণ সংস্কৃতি বেশি হওয়াটা ভাল।কিন্তু তার পরের প্রভাবটা খুবই যন্ত্রণার। ৫ই সেপ্টেম্বর একদিকে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মানুষ তৈরির কারিগরদের সম্মান জানাচ্ছেন আর অন্যদিকে কলকাতা কর্পোরেশনের ৩২ নং ওয়ার্ডে উল্টোডাঙ্গা মুরারিপুকুর এলাকায় মিলন সংঘ ক্লাবের উদ্যোগে গনেশ পুজোকে কেন্দ্র করে এক বিচিত্রা অনুষ্ঠানের আয়োজনের নামে মহিলাদের সাথে নোংরামোয় লিপ্ত হতে বাধ্য করছে তাঁরই দলের দায়িত্ববান নেতা বা সদস্য সুরোজিত সাহা।সারা রাজ্যে দলকে শিক্ষক দিবস করার নির্দেশ দিয়ে কি শিক্ষা দেবেন
মুখ্যমন্ত্রী? এই অনুষ্ঠানে পার্থ মিত্রের তত্ত্বাবধানে এ এম মিউজিকাল ট্রুপের ব্যানারে এক সঙ্গীত সন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী মৌ দাস, জিত জৈন, বাবু সোনা, পিউ ও দেবজিত। রাত ১১.৩০ মিনিটে স্টেজে ওঠে এবং তাঁর সঙ্গীত পরিবেশন করে শেষ করে রাত ১২.১৫ মিনিটে। স্টেজ থেকে নেমে গ্রীন রুমে আসার পর ঘটে বিপত্তি। গ্রীন রুমে ঢোকার পর সেখানে আসে ক্লাব কর্তা সুরোজিত সাহা অরেফে ভানু যার উদ্যোগে এই পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। ভানু গ্রীন রুমে ঢুকে ঘরে থাকা সকলকে বেড়িয়ে যেতে বলে। এরপর ভানু অনুগামীরা বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। পিউকে একলা পেয়ে ভানু তাঁকে কুপ্রস্তাব দেয়। ভানুর কুপ্রস্তাবে রাজি না হতে সে তখন হাতে পিস্তল তুলে তাঁকে হুমকিও দেয়। পিউ কিছুক্ষন চিৎকার করে কোন ফল পায় নি।এরপর পিউর সামনে কোন রাস্তা না খোলে থাকায় বাধ্য হয়ে
রাজি হতে হয় ভানুর কুপ্রস্তাবে সায় দিতে। ভানু পিছন থেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরে এবং শরীরের বিভিন্ন গোপন অঙ্গে হাত দিতে থাকে। নিজের উপর তখন ঘেন্না হচ্ছিল পিউ-র। এরপর পিউ নাটক করতে শুরু করে, ভানুর পায়ে ধরে বাকি ইজ্জত রক্ষর ভিক্ষা চায়। এরপর পিউ ছাড়া পেলে বাইরে তখন পিউর বাকি সঙ্গীরা অপেক্ষা করছিল। সেখান থেকে সোজা পিউ ও তাঁর সঙ্গীরা মানিকতলা থানায় এসে লিখিত
অভিযোগ জানায়। এরপর দলের অন্য সদস্য অমল সরদার পিউকে পিছনের রাস্তা দিয়ে নিরাপদে বাড়ি নিয়ে যায়।পিউ সঙ্গীত দুনিয়ায় আসার পিছনে নিজের সংসারের সমস্যা। পিউর বাবা দুটো কিডিনি ড্যামেজ হওয়ার কারণে গুরুতর অসুস্থ, সপ্তাহে তিনবার ডায়লেসিস নিতে হয়, এছাড়া ছোট বোনের পড়াশুনো আছে যা পিউকে চালাতে হয়। এক কথায় বলতে গেলে পিউকে গোটা পরিবারের খরচ চালাতে হয়। কিন্তু ভানু ঘর থেকে ছাড়ার আগে হুমকি দিয়েছে কাউকে এই ঘটনার কথা জানালে প্রাণে মেরে
দেবে। এবার কোন রাস্তা তবে খোলা রয়েছে পিউ-র সামনে। যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা এবং তিনি বর্তমানে চাইছেন সমাজকে পরিবর্তন করার, মহিলাদের রাতে নিরাপত্তা দেওয়ার, এধরনের মহিলাদের উপর অত্যাচার হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সেখানে তাঁর দলে থাকা পুরপিতা শান্তি রঞ্জন কুন্ডু ও রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পান্ডের অনুগামী ভানু (সুরজিত) মহিলা সঙ্গীত
শিল্পীকে আমন্ত্রণ করে এনে এধরনের অকথ্য দুর্ব্যবহার দল ও মুখ্যমন্ত্রী কি মেনে নেবেন? এরপর কি কোন মহিলা সঙ্গীত শিল্পী রাতে কোথাও গিয়ে নিরাপদে অনুষ্ঠান করার কথা চিন্তা করবে? এদের কি শাস্তি দিতে পারবে প্রশাসন? কি শাস্তি দেয় প্রশাসন তার অপেক্ষায় এখন পিউ ওরেফে লীনা বিশ্বাস। আমরা পিউ-র থানায় অভিযোগের কপিও এখানে প্রকাশ করলাম, দেখি মন্ত্রী সাধন পান্ডে ও পুরপিতা শান্তি রঞ্জন কুন্ডু কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন সমাজের এই অসভ্য মানিসিকতার মানুষদের বিরুদ্ধে।এই নিয়ে পিউ সরব হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়াতেও, গোটা ঘটনার কথা সে তার ফেসবুকের বন্ধুদের বিস্তারে লিখে পোস্ট করে, তারও ছবি আমরা প্রকাশ করলাম। এখন অপেক্ষা শুধু ব্যবস্থার।