১৬২ তম জন্মদিবসে স্বামী বিবেকানন্দকে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম..
অম্বর ভট্টাচার্য, তকমা নিউজ, কলকাতা, ১২ই জানুয়ারি ২০২৪ : সালটা ছিল ১৮৯৩, জুলাই মাসের পড়ন্ত বেলায় জাপান থেকে কানাডা জলপথের একই জাহাজের দুই যাত্রী ছিলেন একজন গেরুয়া বসন পরিহিত সন্ন্যাসী ও আর একজন হলেন মধ্যবয়স্ক পার্সি ব্যবসায়ী। ইয়োকোহামা থেকে ভ্যাঙ্কুবার অভিমুখী জাহাজ চলেছে তার নিজের ছন্দে। ১২ দিনের যাত্রাপথেই জমে ওঠে দুজনের আলাপ। একজন যাচ্ছেন বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে মার্কিন মুলুকে আর অন্যজন চলেছেন শিকাগো ধর্মসভাতে।এনাদের একজন হলেন স্বামী বিবেকানন্দ ও অন্যজন হলেন আধুনিক ভারতবর্ষের শিল্পের জনক জামশেদজি টাটা।🌻
সেদিনের দুইজনের আড্ডাতে উঠে এসেছিল ভারতবর্ষের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি ও বাণিজ্যের প্রসঙ্গ। স্বামী বিবেকানন্দের থেকে তিনি উৎসাহিত হয়েছিলেন দেশে ইস্পাত কারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার। এছাড়াও তাদের বার্তালাপ এ উঠে আসে জাপানের দেশলাই কারখানার ব্যবসার কথা।স্বামী বিবেকানন্দ জামশেদজি কে বলেছিলেন জাপান থেকে দেশলাই আমদানি না করে কেন নিজের দেশে কারখানা গড়ে তুলছেন না? তিনি আরও বলেন, কারখানা হলে তো দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মজবুত হবে। দেশের ছেলেরা কাজ পাবে এবং দেশের অর্থ দেশেই থাকবে।১৪ বছরের ছোট সন্ন্যাসীর কাছ থেকে এই রকম একটা অভিমত পেয়ে জামশেদজি টাটা বেশ অভিভূত হয়েছিলেন। তাঁদের কথোপকথন বেশ অনেক দূর গড়িয়েছিল।ব্রিটিশ শাসনে ভারতীয় জনগণ কতটা অত্যাচারিত হচ্ছে এবং যার জন্য দু’বেলা অন্ন জোগাড় করা কতটা কষ্ট সাধ্য তা নিয়ে জামশেদজির কাছে বিশদে ব্যাখ্যা করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
১৮৯৩ সালে ১১ সেপ্টেম্বর শিকাগো ধর্ম মহাসভায় বক্তৃতা দিয়ে এক ইতিহাস সৃষ্টি করেন স্বামী বিবেকানন্দ।তারপর থেকে গোটা দুনিয়া তাঁকে চিনে যায়।তাঁর এই সাফল্যে খুশি হন বোম্বাইতে বসবাসরত জামশেদজি টাটা। ততদিনে তাঁদের দুইজনের জাহাজ যাত্রার গল্প হৃদয়ে গেঁথে যায়। ১৮৯৮ সালে ২৩ নভেম্বর জামশেদজি স্বামী বিবেকানন্দকে এক পত্র লিখলেন, সেই পত্রে জানালেন ভারতের বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ার চিন্তা ভাবনা করছেন। তাই তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন ভারতীয়দের বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য প্রচার পত্র লিখে দিতে।
তার মধ্যেই স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশন নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ায় জামশেদজির অনুরোধ গ্রহণ করতে না পারলেও ভগিনী নিবেদিতাকে দেখা করতে বলেছিলেন জামশেদজি টাটার সঙ্গে।১৯০২ সালে স্বামী বিবেকানন্দ পরলোকগমন করেন। ঠিক তার দুই বছরের মধ্যেই ১৯০৪ সালে জামশেদজি টাটার মৃত্যু ঘটে।ভারতের ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলার স্বপ্ন জামশেদজি টাটা তার উত্তরসূরিদের হাতে অর্পণ করে চলে গেলেন।১৯০৭ সালে তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের হাত ধরে গড়ে ওঠে টাটা স্টিল। এই কারখানাটি বর্তমানে বৃহত্তম ভাবে দন্ডায়মান বহুজাতিক সংস্থা রূপে।১৯০৯ সালে গড়ে ওঠে টাটাদের উদ্যোগে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স যা আজ আমাদের গোটা ভারতবর্ষের গর্ব।