প্রথম পাতা

জয় হিন্দ বাহিনীর উদ্যোগে গড়িয়ায় ভারতের ৭৩তম প্রাক স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হল ছাত্রছাত্রীদের স্মবর্ধনা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে

নিজস্ব প্রতিনিধি, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ১৪ই আগস্ট ২০১৯ : ভারতের মধ্যরাতের স্বাধীনতা পালনের রীতি চালু করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ২০১১ সাল থেকে। এর প্রধান কারণ ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস হলেও ১৪ই আগস্ট ইংরেজ শাসনের হাত থেকে ভারত প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করেছিল।এই মধ্যরাতে স্বাধীনতার একটা ইতিহাস আছে। ১৯৪৭ সালে ভারতের গভরনর জেনারেল ছিলেন মাউন্ট ব্যাটন, তাঁর সাথে তৎকালীন কংগ্রেস প্রধান নেহেরুর খুবই সুসম্পর্ক ছিল। সেই সময় যখন মাউন্ট ব্যাটন জানিয়েছিলেন ভারতের স্বাধীনতা হবে ১৫ই আগস্ট তখন দেশের কিছু পন্ডিত বিধান দিয়েছিলেন যে ভারতের জন্য ১৫ তারিখ শুভ নয়, সেই হিসাবে ১৪ই আগস্ট ভারতের জন্য শুভ এবং ১৪ই আগস্ট ভারত স্বাধীন হলে মঙ্গলময় হবে। মাউন্ট ব্যাটন তো ১৫ই আগস্ট করবেন বলে একপ্রকার সিধান্ত নিয়েই নিয়েছেন। তিনি ১৫ই আগস্ট বাদে অন্য কোন দিন মানতে নারাজ কারণ তিনি ভারতকে স্বাধীনতা দেবেন তার আগে তাঁর জীবনের একটা মাইলস্টোন রেখে যাবেন, তা হল ভারত ১৫ই আগস্ট স্বাধীন হলে সেই দিনটা হবে তাঁর জীবনের “রেড লেটার ডে” কারণ এইদিনে তিনি আজাদ হিন্দ বাহিনী ও জাপান সৈন্যদের ভারতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই-এ পিছু হটতে বাধ্য করেছিলেন। আর সেই দিনটাকে তিনি ভারতের স্বাধীনতার সাথে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন। এদিকে নেহেরুকে প্রধানমন্ত্রী হতে হবে, তখন তিনি মাউন্ট ব্যাটনকে জানালেন যে ইংরাজি মতে দিন শুরু হয় রাত ১২টার পর আর ভারতীয় মতে দিন শুরু হয় সূর্য উদয়ের পর। সুতরাং যদি রাত ১২টার পর ভারত স্বাধীন হয় তবে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। দুই দিক বজায় থাকবে। ইংরাজি মতে ১৪ই আগস্ট মাঝরাত মানে তাদের মতে ১৫ই আগস্ট আর ভারতীয় মতে ১৪ই আগস্ট থাকল কারণ তখন সূর্য উদয় ঘটে নি। তাই বলা যেতেই পারে মধ্যরাতের স্বাধীনতা হয়েছে তাই তা পালন করা হবে ১৫ই আগস্ট। আর সেই শুভক্ষনকে স্মরণীয় করতে মমতা ব্যানার্জি শুরু করেছেন মধ্যরাতের স্বাধীনতা। ২০১১ সাল থেকে মধ্যরতের স্বাধীনতা পালিত হয়ে চলেছে।

মমতা ব্যানার্জির অনুপ্ররনায় তাই এবছরও গোটা পশ্চিম বাংলায় ভারতের ৭৩ তম স্বাধীনতা পালিত হল ১৪ই আগস্ট মধ্যরাতে।১৪ই আগস্ট সোনারপুর উত্তর বিধানসভার গড়িয়া স্টেশনে রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে তৃণমূলের শাখা সংগঠন জয়হিন্দ বাহিনীর উদ্যোগে পালিত হল মধ্যরাতের স্বাধীনতা। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছিল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে এলাকার প্রায় ৮০ জন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। তাদের সকলের হাতে গাছের চাড়া তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া ছিল তৃণমূলের পুরানো কর্মীদের সম্মান জ্ঞাপন অনুষ্ঠান এবং গড়িয়া স্টেশনের পুর প্রতিনিধি ও স্থানীয় গুনীজন সম্বর্ধনা।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দঃ ২৪ পরগণা জেলা জয় হিন্দ বাহিনীর সভাপতি প্ললব কান্তি ঘোষ, ছিলেন ১ নং ওয়ার্ডের পুরমাতা পাপিয়া হালদার, ৪ নং ওয়ার্ডের পুরপিতা তথা সি আই সি বিভাস মুখার্জি, স্থানীয় পুরপিতা তরুণ কান্তি মন্ডল সহ পুরানো কর্মীদের মধ্যে তপন দে, মাখন চক্রবর্তী, অপা গাঙ্গুলি সহ বর্তমান সংগঠনের নব্য নেতৃত্বদের মধ্যে অনেকে। উপস্থিত ছিলেন সোনারপুর উত্তর বিধানসভার যুব তৃণমূল সভাপতি পাপাই দত্ত, গড়িয়া টাউন যুব তৃণমূলের সভাপতি জয়ন্ত সেনগুপ্ত সহ অনেক কর্মী ও সমর্থক। সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম, তিনি ছাত্রছাত্রীদের হাতে সম্বর্ধনা তুলে দেন এবং বক্তব্য রাখেন। যদিও অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসাবে রাজ্য জয় হিন্দ বাহিনীর সভাপতি কার্তিক ব্যানার্জির আসার কথা থাকলেও তিনি এদিন উপস্থিত হতে পারেন নি কারণ দলের নেত্রীর নির্দেশ ছিল হাজরা মোড়ে মধ্যরাতের স্বাধীনতার দায়িত্ব পালন করবে জয় হিন্দ বাহিনী।তাই তিনি সেই অনুষ্ঠানকে সফল করতে সেখানে ব্যস্ত ছিলেন, কিন্তু তিনি ফোনে উপস্থিত মানুষ ও নেতৃত্বদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন যা যন্ত্র মারফৎ সকলকে শোনানো হয়।তিনি তাঁর বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করেন এবং বলেন গড়িয়ায় জয়হিন্দ বাহিনীর আগামীদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।সম্বর্ধনা দেওয়া হয় এবিপিতকমা সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক অম্বর ভট্টাচার্যকে। সম্বর্ধনা দেন গড়িয়া জয় হিন্দ বাহিনীর সভাপতি অরিন্দম দত্ত।

এই অনুষ্ঠানের সাফল্যের জন্য গড়িয়া জয়হিন্দ বাহিনীর সভাপতি অরিন্দম দত্তের অক্লান্ত পরিশ্রম প্রশংসনীয় এবং অনুষ্ঠানকে সাফল্যমন্ডিত করতে পূর্ণ সহযোগিতা করেন সোনারপুর উত্তর বিধানসভার যুব তৃণমূল সভাপতি পাপাই দত্ত। অনুষ্ঠানে ছিল স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশন, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন যা উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে তোলে।অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন তৃষা মন্ডল। অনুষ্ঠানের বিষয়ে স্থানীয় পুরপিতা তরুণ কান্তি মন্ডল বলেন প্রতিবছর মধ্যরাতের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় ওয়ার্ডের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে। এবছর আমার ওয়ার্ডের তিন রাস্তার মোড়ে করা হচ্ছে। এছাড়া কাল সকাল থেকে সমগ্র ওয়ার্ডের বিভিন্ন ক্লাব ও পার্টি অফিসে স্বাধীনতা দিবস পালিত হবে কিন্তু মধ্যরাতের স্বাধীনতা পালিত হবে একটা জায়গায় তাই প্রতিবছর এই মধ্যরাতের স্বাধীনতা আলাদা জায়গায় পালন করা হয় যাতে ওয়ার্ডের সব মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেন। সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন তাপস দাস।প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পুরপিতা তরুণ কান্তি মন্ডল, দঃ ২৪ পরগণার জয় হিন্দ বাহিনীর সভাপতি পল্লব কান্তি ঘোষ, সোনারপুর উত্তর বিধানসভার যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পাপাই দত্ত, গড়িয়া টাউন জয় হিন্দ বাহিনীর সভাপতি অরিন্দম দত্ত সহ অনেকে। একেই বলে স্বাধীনতার স্বাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *