আইন সম্বন্ধে অজ্ঞতার কারণে ভুল মন্তব্য করে জোর ধাক্কা খেল রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার অলিখিত পৌর প্রতিনিধি পাপাই
অম্বর ভট্টাচার্য, তকমা, সোনারপুর, ১৪ই জুন ২০২২ : সবে পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে, কোনভাবে একে ধরে, কারও সুপারিশ নিয়ে নিজের স্ত্রী-র জীবন বৃত্তান্ত জমা করে পৌরমাতার টিকিট হাসিল করেছে। এরপরেরটা তো আর বলার বাকি রাখে না। রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের এতকালের ইতিহাসে যা ধটে নি তাই এবারের নির্বাচনে ঘটেছে নবগ্রামে। সিপিএম আমল থেকে কোনদিনও নবগ্রামে ছাপ্পা ভোট হয় নি। এবার এলাকার মানুষ থেকে দলের পুরানো কর্মীরাই লজ্জায় মাথা নিচু করেছে। তারা নিজেরাই বলেছে বাম আমল থেকে এভাবে কোনদিনও এই এলাকায় নির্বাচন হয় নি। যাই হোক নির্বাচনে বেশি ভোটের ব্যবধানে জয় হাসিল করতে হবে আর হয়েছেও তাই।
ফল প্রকাশের পর দায়িত্ব পেয়ে পৌরমাতা ও তার স্বামী ভেবে নিলেন স্বর্গলাভ করে ফেলেছেন। এবার থেকে যা মনে ইচ্ছে হবে তাই করা যাবে আর তাই সেই ওয়ার্ডে দীর্ঘদিনের প্রোমটার (সেই বাম আমল থেকে) মিঠু দে (হিমাংশু দে) বলে পরিচিত একটা বহুতল ফ্ল্যাট নির্মানের কাজ করছে। হঠাৎ কোন আইন না জেনেই এই পাপাই দত্ত বলে দিলেন যে মিঠু-র ফ্ল্যাট বেআইনি, আমরা এই ফ্যাটের ব্যাপারে পৌরসভার চেয়ারম্যানকে অভিযোগ জমা দিয়েছি, বোর্ড মিটিং-এ এই ফ্ল্যাটর বেআইনি অংশ যাতে ভাঙা হয় তার আর্জি জানাবো এবং ভাঙবো। কোন বেআইনি নির্মান কাজ হতে দেবো না। কেন এই আস্ফালন? তবে কি কোন স্বার্থে আঘাত লেগেছে তাই? (আমরা তার কল রেকর্ডিং-এর সবটাই এখানে প্রকাশ করেছি, সকলকে অনুরোধ করবো একবার শোনার জন্য)।
গতকাল বোর্ড মিটিং ছিল, প্রায় অনলাইনে আবেদন করা ৬০টা বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমোদন দেন পৌর প্রধান ডাঃ পল্লব দাস। আজ পৌর প্রধানের সাথে দেখা করে যখন এই মিঠু দে-র নির্মান নিয়ে প্রশ্ন করি তিনি সাফ জানান কোন অবস্থাতেই এই নির্মান বেআইনি নয়। আমাকেও তাই বলা হয়েছিল কিন্তু আমি তাদেরও একই উত্তর দিয়েছি। আমরা পৌরসভার অনুমোদিত প্ল্যানের নকশা এখানে প্রকাশ করলাম যাতে আপনারা দেখতে পারেন যে রাস্তা থেকে দুদিকে কতটা ছাড় দিয়ে এই নির্মান হয়েছে। এমনকি জমি যেহেতু রাস্তার কোনায় অবস্থিত তাই টার্নিং-এ কতটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। এব্যাপারে মিঠু দে-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, পৌরসভা যদি বেআইনি নির্মান দেখাতে পারে তবে আমি ভাঙতে রাজি, কে কোথা থেকে কি বলল তাতে আমি কান দিই না। এতদিন ধরে এই কাজ করছি, কেউ কোনদিনও আঙুল তুলে বলতে পারে নি আর আজ যাদের আইন সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নেই তাদের কথায় কি উত্তর দেবো। আমি তৃনমূল দল করি মানে এই নয় বাকিদের মতো দলকে সামনে রেখে মুনাফা লুটবো। এটাও ঠিক কথা এটা যদি কোন ব্যক্তিগত বাড়ি হত তবে বেআইনি নির্মান করা যায় কিন্তু যেখানে এটা ব্যবসায়িক কারণে নির্মান সেখানে বেআইনি করলে পৌরসভা পরবর্তীতে কমপ্লিশন সার্টিফিকেট দেবে না। তাতে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে বিপাকে পড়তে হবে কারণ ক্রেতাদের তো ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে, তারা ছাড়বে কেন? আমরা নকশা অনুযায়ী নির্মানের ছবিও প্রকাশ করলাম যাতে পাঠকদের বুঝতে সুবিধা হয়।
এটা কেন বললেন পাপাই দত্ত জানেন, আমরা ৫ নং ওয়ার্ডে একটা ৮ফুটের রাস্তার উপর তিনতলা বেআইনি নির্মানের কথা জানিয়েছিলাম পাপাই দত্তকে কারণ পৌর প্রধানকে এই বেআইনি নির্মানের তথ্য দিতে তিনি বলেছিলেন ওয়ার্ডের পৌরমাতাকে জানাতে। কিন্তু এই ওয়ার্ডের পৌরমাতা কোন এক কলেজের লাইব্রেরিয়ান তাই তার পরিবর্তে সব কাজটাই দেখেন তার স্বামী পাপাই দত্ত। পাপাই দত্ত-কে জানাতে তিনি বলেন, যে বেআইনি নির্মান নিয়ে আমি বলেছি তা তিনি লোক পাঠিয়ে দেখেছেন এবং সেই বাড়ির মালিক-কে ডেকে পাঠিয়েছেন। পরে তিনি জানান, মালিক এসেছিলেন, তিনি একজন অধ্যাপক। সেই অধ্যাপক এসে অনুরোধ করে বলেছেন গরীব মানুষ তিনতলা করে ফেলেছেন তা এখন ভাঙতে হবে। কতগুলো টাকা নষ্ট হবে। তাই মানবিকতার খাতিরে ছেড়ে দিতে হল, সমাজের একজন গুনী মানুষ একটু হয়তো ভুল করেই ফেলেছে। এরপর তিনি আমায় বলেন, তুমি একবার আমায় সাথে এসে দেখা করো সব বুঝিয়ে বলবো। কি বুঝিয়ে বলবে তা নিশ্চয়ই আশাকরি আর আপনাদের সামনে খুলে বলতে হবে না। কিন্তু আমি আর দেখা করতে যাই নি। কথাটা হল ইনি কি রকমের গরীব যিনি তিনতলা নির্মান করতে পারেন? আইন সম্পর্কে কিছু পড়াশুনো করে কোন মন্তব্য করা উচিত। আসলে যেটা নেই সেটা নিয়ে বলে আর কি হবে? হয়তো এবার থেকে ভেবে বলবে।
এরপর সেই পৌরমাতা আর থাকতে পারলেন না কারণ তিনি যে আমায় হাড়ে হাড়ে চেনেন, এই কথার ফল কি হতে পারে তাই আক্রোশে ফেটে পড়লেন আর আমাদের নিয়ে মন্তব্য ছুড়তে লাগলেন যার ফল আজকের এই প্রতিবেদন। একটা কথা সেই পৌরমাতাকে জানিয়ে রাখতে চাই, আপনি নিজের চাকরি তৎকালীন জেলার উচ্চ পদের এক যুব নেতার কাছে হাত পেতে নিতে পারেন (থুড়ি আপনার ভাশুরের ও তার স্ত্রীর চাকরিও করে দিয়েছে সেই নেতা), সেদিন না করে দিলে একবারও স্বপ্নে ভেবেছেন কি হতো? হাত পেতে না নিলে তো আপনার ফ্ল্যাট বা গাড়ি কোনটাই হবে না। আমায় কিন্তু হাত পেতে নিতে হয় না, সবাই জানে আমি অতি গরীব, তাই আমি এখনও আপনার থেকে বেশ শান্তিতেই আছি ও শান্তিতেই ঘুমোই, আপনার স্বামী দেখা করতে বলেছিল, যারা এই প্রতিবেদন পড়ছে তারা বুঝতে পারছে কেন দেখা করতে বলা হয়েছিল কিন্তু আমি তাও দেখা করিনি। আপনারা বলেন না স্বচ্ছতার প্রতীকে আপনারা লড়াই করেন, কে বা কারা স্বচ্ছ তা এবার মানুষ বলবে। তাই করো দিকে একটা আঙুল দেখালে কিন্তু আপনার দিকে তিনটে আঙুল দেখিয়ে বলে নিজে কি করেছো একবার ভাবো। যখন লিখতেই হচ্ছে তাই আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি সেদিন আপনার স্বামীকে সাংসদ মিমি চক্রবর্তী-র অফিসে আমাকেই নিয়ে যেতে হয়েছিল, আপনার স্বামীর দুর্দিনে বিধায়কের কাছে আমাকেই সুপারিশ করতে হয়েছিল। যদিও আজ দিনগুলো অতীত তাই ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তব বলে ইতিহাস আবার ফিরে আসে। “History Repeats”। জানি এরপর আমি এবং আমার পরিবারের উপর অনেক ঝড় আসবে, অনেক প্রাণনাশের হুমকি হবে, হয়তো প্রাণহানিও হতে পারে কিন্তু প্রতিবাদ করেই যাবো, অহংকার নাশ করে পতন ঘটাবো।
পৌরসভা বোর্ড গঠনের পর থেকে রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে কটা এরকম বেআইনি বাড়ি হয়েছে ছবি সহ তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করার ইচ্ছে প্রকাশ করছি যদি আপনাদের বাধাপ্রাপ্ত না হতে হয় তবেই সম্ভব।