প্রথম পাতা

বালি বিধায়ক বৈশালীর পর এবার বেসরকারি স্কুলের বেতন ছাড়ের জন্য হাওড়া বিধানসভায় সরব হলেন রাষ্ট্রীয়মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন

অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, হাওড়া, ১ই জুন ২০২০ : ২২শে মার্চ ২০২০ ভারতে করোনার কারণে লকডাউন ঘোষণা করে রাজ্য ও কন্দ্র সরকার। লকডাউন ঘোষণার সাথে সাথে মানুষকে গৃহবন্দি থাকার নির্দেশ দেয় সরকার। সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় মানুষ গৃহবন্দি হয়ে থাকতে বাধ্য হয়। প্রথম মাসটা কোনমতে মানুষ মেনে নেয় এই গৃহবন্দি অবস্থা। কিন্তু এরপর ধাপে ধাপে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বাড়তে থাকে লকডাউনের সময়সীমা। মানুষ এবার দিশাহারা হয় পড়ে কারণ তখন বাড়িতে খাদ্যের অভাব সবে উঁকি মারছে সাথে অর্থাভাব। রাজ্যে সরকারের বিভিন্ন বিধায়ক, কাউন্সিলার, জননেতা বিভিন্ন এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে। মানুষ কিছুটা স্বস্তি পায়। এরপরও যখন পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে তখন খাদ্য সামগ্রী বিতরণও প্রায় বন্ধের পথে। সরকার উদ্যোগ নিয়ে রেশনে বিনা পয়সায় চাল দেওয়া শুরু করে। যাদের রেশন কার্ড আছে তাঁরা কোনমতে সেই চাল দিয়ে সংসারের খাদ্য সঙ্কট মেটাতে শুরু করে। কিন্তু এরপর পকেটে তো টান পড়ছে। কেউ তো আর অর্থ প্রদান করছে না। না দিচ্ছে রাজ্য সরকার না দিচ্ছে কেন্দ্র। যদিও রাজ্য সরকার প্রচেষ্টার মাধ্যমে হাজার টাকা দিতে শুরু করেছে। কিন্তু ১০০০ টাকা দিয়ে কতটা উপকৃত হবে মানুষ, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

বাড়ির ইলেকট্রিক বিল দিতে হবে, টিভি-র কেবল লাইনের রিচার্জ করতে হবে, ফোনের রিচার্জ করতে হবে, চাল না হয় পেল কিন্তু সবজি ও মাছ বাজার করতে হবে, ওষুধ কিনতে হবে। এছাড়াও আরও অন্যান্য খরচ তো আছেই।সব থেকে বড় সমস্যা নিজেদের সন্তানদের পড়াশুনো। স্কুলের মাইনে দিতে হবে, স্কুলের বাসের ভাড়া মেটাতে হবে। ইতিমধ্যে সরকার উদ্যোগী হয়ে বৈদ্যুতিন চ্যানেলে সরকারি স্কুলের পড়াশুনোর ক্লাস শুরু করে দিল আর বেসরকারি স্কুলগুলো তাই দেখে নিজেদের স্কুল মাইনে নেওয়ার ফন্দিতে অনলাইন ক্লাস শুরু করে দিল। এবার সমস্যা আরও বাড়তে থাকলো।যাদের বাড়িতে মোবাইল ফোন অথবা ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ তাদের এবার নতুন করে কিনতে হবে, নেটের জন্য রিচার্জ করতে হবে। জুমের মাধ্যমে বেসরকারি স্কুলগুলো ক্লাস চালু করে দিল। কিন্তু যেখানে স্কুলে প্রতিদিন ৭টা পিরিয়ড হয় সেখানে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে মাত্র ৪টে। অর্থাৎ ৩টে পিরিয়ড কম হচ্ছে। এবার স্কুল থেকে বলা হচ্ছে মাসিক বেতন জমা দিতে।সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করল ২০২০ সালের সকলকে পরবর্তী ক্লাসে প্রোমোশন করে দেওয়া হবে। এর থেকেই পরিষ্কার যে শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে স্কুল খোলার কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা সরকার দিতে পারছে না। এরইমধ্যে বালি বিধানসভার বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া বিধানসভার অনেক অভিভাবকদের থেকে অনুযোগ শোনার পর নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁর বিধানসভার বেসরকারি স্কুলগুলোর সাথে অলোচনা করেন। তাঁর সাথে আলোচনার পর স্কুলগুলো তাঁর অনুরোধকে মান্যতা দিয়ে বিভিন্ন স্কুল বিজ্ঞতি জারি করে এপ্রিল, মে এবং জুন মাসের কোন মাইনে দিতে হবে না, এপ্রিল, মে এবং জুন মাসের কোন বাসের খরচ দিতে হবে না এবং আগামী সেশনে স্কুলের বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের থেকে বাৎসরিক খরচের ৫০% নেওয়া হবে।নতুন করে যারা ভর্তি হবে তাদের পুরো সেশন ফি দিতে হবে। বালির মানুষ এই মানবিক বিধায়কের উদ্যোগকে দু হাত তুলে সাধুবাদ জানিয়েছে।

এবার সেই একই পথে হাঁটতে চলেছেন হাওড়া বিধানসভার বিধায়ক প্রাক্তন ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্লা।তিনি আজ নিজের পরিচালনায় ক্রিকেট অ্যাকাদেমির মাঠ থেকে সব বেসরকারি স্কুল কতৃপক্ষের জন্য যে বার্তা দিয়েছেন তা আবার এক ভাল উদ্যোগ। তিনি বলেন, আমি এই স্পোর্টস অ্যাকাদেমিতে পাঁচ বছর ধরে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি সম্পূর্ণ বিলামূল্যে তার প্রধান কারণ আমার বাবা আমাকে ও আমার ভাইকে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের জন্য টাকা খরচ করতে পারেন নি, আমরা দুই ভাই নিজের উদ্যোগে ক্রিকেট খেলাটা শিখেছি, তাই আমি ক্রিকেট শিখিয়ে কোন অর্থ উপার্যন করতে চাই না। এই কারণকে সামনে রেখে আমি সব বেসরকারি স্কুলগুলোকে হাত জোর করে অনুরোধ করবো যেখানে দেশ ও রাজ্যে এক মহামারী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, মানুষ লকডাউন পরিস্থিতিতে বাইরে রোজগার করতে যেতে পারছে না, তার সাথে গোটা রাজ্যে আমফান ঘুর্নি ঝড়ে মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই কথা মাথায় নিয়ে যদি বেসরকারি স্কুলগুলো তাদের মাসিক বেতনের ৪০% থেকে ৬০% ছাড় দেন। এটা কোন প্রতিবাদ বা আন্দোলন নয়, এটা শুধুমাত্র পরিস্থিতির উপর নজর রেখে এটা আমার এক অভিভাবক হিসাবে একটা মানবিক অনুরোধ।ইতিমধ্যে অনেক বেসরকারি স্কুল অনুরোধ মেনে নিয়ে স্কুলের মাইনের ছাড় দিয়েছেন। বাকিদের জন্য একই অনুরোধ করবো যাতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পায়।সকলে দেখছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিভাবে মানুষের কথা চিন্তা করে রাস্তায় নেমে কাজ করছেন সেখানে বেসরকারি স্কুলগুলোর উচিত মুখ্যমন্ত্রীকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসে মাসিক মাইনে ত্যাগ করা।

বেসরকারি স্কুলগুলো প্রতি মাসে মোটা টাকার মাইনে নেয় যেখানে থাকে জেনারেটর চার্জ, ডেভেলপমেন্ট ফি, বিল্ডিং ফি, মেডিক্যাল ফি-র মত বেশ কিছু অতিরিক্ত চার্জ। কিন্তু এই অবস্থায় যেখানে স্কুলটাই খোলা নেই সেখানে জেনারেটর চলছে কোথায়, যেখানে স্কুল খোলা নেই সেখানে বিল্ডিং ফি কেন, এখন কোথায় বিল্ডিং-এর কাজ করছে স্কুল, যেখানে স্কুল বন্ধ সেখানে এই সময় কি ডেভেলপমেন্ট করছে স্কুল কতৃপক্ষ, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যাচ্ছে না সেখানে মেডিক্যাল খরচ কোথায়? একটা ছাত্র বা ছাত্রী নার্সারি থেকে ক্লাস ১২ পর্যন্ত পড়বে সেখানে অভিভাবকেরা ১১ বছর ৬ মাস মাইনে দেবেন আর সেখানে স্কুল কতৃপক্ষ ৩ থেকে ৬ মাসের বেতনের ছাড় দিতে পারবেন না? এতটাই অমানবিক কি করে স্কুল কতৃপক্ষ হতে পারে। আর যদি তাঁরা এতটাই অমানবিক হবে তবে তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের কি করে মানবিক হওয়ার শিক্ষা দেবেন? তবে মানুষ তৈরি করার কারিগরদের থেকে কি শিক্ষা লাভ করবে বর্তমান প্রজন্ম?

Follow us at : www.facebook.com/abptakmaa.newspaper/
www.twitter.com/abptakmaa

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *