প্রথম পাতাবিনোদন

বাংলা হারালো সিরিয়াল জগতের শ্রেষ্ঠ অভিভাবক, অশোক সুরানা

অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ২১শে জুলাই ২০১৯ : নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। ক’দিন আগে “সেকশন ৩০২” সিরিয়ালের সাংবাদিক সম্মেলনে শেষ দেখা হয়েছে। সেদিনও বুঝতে পারিনি এই স্বল্পভাষী, সদাহাস্য মানুষটা আমাদের সকলের মায়ার বাঁধন ছিরে নিজের দুনিয়ায় চলে যাবেন।আজ মনে পড়ছে গতমাসে চ্যালেন আটের অফিসে বসে কথা হচ্ছিল তার সুযোগ্যা কন্যা ঈশিতা সুরানার সাথে যে এই মানুষটার একটা ডকো ফিচার বানিয়ে রাখতে। সেই মানুষটা অশোক সুরানা।অশোক সুরানা আমার একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড, তাঁর সর্বশেষ বার্তা ছিল ১৬ই জুলাই সকাল ৯.৫০ মিনিটে “আমার একটা অপারেশন হবে, আমি ক’দিনের জন্য ফেসবুকে থেকে বিরত থাকবো”। কে ভাববে যে তিনি আর কখনই ফেসবুকে ফিরে আসবেন না।অশোক সুরানা ১৯শে অক্টোবর ১৯৫৬ সালে জন্মগ্রহন করেন। চেন্নাই-এর এ এম জৈন স্কুলে তাঁর পঠনপাঠন এবং চেন্নাই-এর পানাগাল পার্কের রামকৃষ্ণ মিশন থেকে তিনি স্নাতক হন।বাংলা সিরিয়াল জগতের অন্যতম প্রধান স্বপ্নদ্রষ্টা, আকাশ ৮ চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাতা অশোক সুরানার জীবনাবসান হল ২১ জুলাই। একটি অপারেশনের জন্য ভর্তি ছিলেন মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। আকাশ ৮ সংস্থার প্রতিনিধি সূত্রের খবর, অপারেশন সফল হলেও সম্ভবত তার পরের ধকলটি নিতে পারেননি প্রযোজক অশোক সুরানা।

সূত্র মারফৎ জানা যায় সার্জারি ঠিকঠাক হয়েছিল দেখে তাঁর পুত্র কলকাতা ফিরে এসেছিল। আজ সকালে হঠাৎ জানা যায় যে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। তখনই তাঁকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। তার কিছু পরেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ছেলে ইতিমধ্যেই মুম্বই রওনা হয়ে গিয়েছেন। সে সব মিটিয়ে সম্ভবত রাতে তাঁকে কলকাতা আনা হবে অথবা কাল সকালে।

প্রয়াত অশোক সুরানাকে বলা হয় বাংলা টেলিভিশনের মেগাসিরিয়ালের জনক। নয়ের দশকে প্রথম মেগাসিরিয়াল ‘জননী’-র সম্প্রচার হয় আকাশ বাংলা চ্যানেলে। সেই চ্যানেলের শেয়ারহোল্ডার ছিলেন প্রয়াত প্রযোজক। এর পরে ২০০১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর প্রযোজনা সংস্থা ‘চ্যানেল এইট’। বহু ধারাবাহিক ও ছবি প্রযোজনা করেছে এই সংস্থা।

এর পরে আকাশ বাংলা চ্যানেলটি যখন পরিবর্তিত হয় আকাশ ৮-এ, তখন থেকেই চ্যানেলের স্বত্বাধিকারী হিসেবে সমস্ত দায়িত্ব নেন তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তিনি ছিলেন একজন কর্মব্যস্ত মানুষ। সারাক্ষণ কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেন। শহরে থাকলে দিনে অন্তত ২ ঘণ্টার জন্য হলেও অফিসে আসতেন। সারাক্ষণ টেলিজগত নিয়েই ভাবতেন। নতুন কী কাজ করা যায়, সেই নিয়ে চিন্তা করতেন। বাংলা টেলিভিশনের অনেক নতুন ফরম্যাট ছিল তাঁর ভাবনা যেগুলি পরে অন্যান্যরা গ্রহণ করেছেন। তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত সজ্জন মানুষ। সবার সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল, প্রযোজক অশোক সুরানা-র প্রয়াণ নিঃসন্দেহে বাংলা টেলিজগতের একটি অপূরণীয় ক্ষতি।আমরা এবিপিতকমা-র তরফ থেকে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি ও পরিবারের সকল সদস্যদের সমবেদনা জ্ঞাপন করি। এই ক্ষতির কোন ভাষা হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *