প্রথম পাতা

রাজপুর সোনারপুর পৌরসভায় নতুন সংযোজন গড়িয়ার দুই পৌরমাতা, এলাকায় খুশির আমেজেও থেকে গেছে বিশাদের সুর

অম্বর ভট্টাচার্য, তকমা, সোনারপুর, ১৭ই আগস্ট ২০২১ : গতকাল রাজ্যের সব ব্লকের তৃনমূল কমিটি নতুন করে ঢেলে সাজালেন তৃনমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। ৪৪পাতার সেই তালিকায় সোনারপুর উত্তর বিধানসভার ৩টি টাউন সভাপতি, তৃনমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি বা আইএনটিটিইউসি সভাপতির নাম ছিল না। অনেকের কাছে এটা একটা বিস্ময়ের কারণ ছিল। সেই কারণটা সকলের কাছে আজ সন্ধ্যার পর খোলসা হল।আজ সরকারিভাবে রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৩৫টা ওয়ার্ডের প্রশাসকমন্ডলীর তালিকা পরিবর্তন হল।এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হল বিভাস মুখার্জি এবং নজরুল আলি মন্ডলের নাম।এই দু’জনের পরিবর্তে নতুন প্রশাসকমন্ডলী সদস্য হলেন অশোকা মৃধা (৩নং ওয়ার্ডের বিদায়ী পৌরমাতা) ও পাপিয়া মন্ডল হালদার (১নং ওয়ার্ডের বিদায়ী পৌরমাতা)।এবার যেন পৌরসভায় মহিলাদের জয়জয়কার, রনং দেহি, মাতৃরূপেন।আজ আমরা সোনারপুর উত্তরের দু’জন সংযোজন নিয়ে আলোচনা করছি, পরবর্তীতে কুহেলী ঘোষের যে ডবল চ্যালেঞ্জ জয় তাই নিয়ে আলোচনা করবো।

এই দুই নতুন সংযোজিত সদস্যের নামে অনেক ধরনের সমালোচনা যদিও শোনা গেছে এতদিন কিন্তু আজ তারা দুজনেই প্রমাণ করে দিলেন তারা দুজনেই মানুষের জন্য কাজ করেছেন এবং স্বচ্ছতা বজায় রেখেই করেছেন তাই এই পুরস্কার লাভ করেছেন। ১ নং ওয়ার্ডের পৌরমাতা পাপিয়া হালদার এই খবর শোনার পর প্রতিক্রিয়া দেন, আমি কখনই নজরুল আলি মন্ডলের উর্ব্ধ নই। নজরুল দা আমার থেকে অনেক বেশি অভিজ্ঞ এবং অনেক বেশি সাংগঠনিক দক্ষ। আজ তাঁর নির্দেশে আমরা রাজনীতির অনেক কিছু শিক্ষা ও পরামর্শ নিয়ে থাকি।আজ আমার ভীষণ একা লাগছে যখন জানতে পারলাম যে আমাদের সোনারপুর উত্তর বিধানসভার যাকে আমরা অভিভাবক হিসাবে দেখি বা মানি তিনি প্রশাসকমন্ডলীতে নেই। সত্যিই আজ আনন্দের দিন হলেও আমি ব্যক্তিগতভাবে অভিভাবকহীন হয়ে পড়লাম। এব্যাপারে অশোকা মৃধাও তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি আমার নাম চোখে দেখে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। শেষে সকলের ফোন পেতে আনন্দ হচ্ছিল কিন্তু আমি বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম ও সি আই সি নজরুল আলি মন্ডলের সাথে থেকে রাজনীতিটা শিখেছি। অনেক সময় ওয়ার্ডে দলীয় কর্মীদের বেশ কিছু কার্যকলাপে নিজের মেজাজ হারিয়েছি, সেই সময় নজরুল দা একেবারে অভিভাবকের মত পাশে থেকে পরামর্শ দিয়েছেন। ওয়ার্ডে উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বহুক্ষেত্রে নজরুল দা পৌরসভাগত অনেক সহযোগিতা করেছেন, বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম কোন অংশে কম যান না। তালিকায় নজরুল দার নাম না দেখতে পেয়ে খুবই মর্মাহত। যাকে দেখে রাজনীতি করলাম আজ তাঁকে ছাড়া এই দায়িত্বভার সামলাবো, ভাবতেই কিরকম লাগছে।

অন্যদিকে পাপিয়া হালদারের সারা সমালোচকেরা এবার দিশাহারা হয়ে পড়েছে কারণ যাদের কাছে তারা এতদিন কুৎসা, সমালোচনা করে এসেছেন তাদের কাছে পক্ষের কোন উত্তর নেই। যাদের বলা হয়েছিল পাপিয়ার কেরিয়ার শেষ তাদের এখন সেই পাপিয়া হালদারের কাছে গিয়ে উন্নয়নের জন্য আবেদন করতে হবে। পৌরসভাগত সুবিধার জন্য তাঁকেই বলতে হবে।এবার মানুষকে কি বলবে পাপিয়ার বিপক্ষে, কেউ তো আর তাতে আমোল দেবে না। এর জন্য আমাকেও কম কথা শোনায় নি এই সমালোচকেরা কেন আমি তাদের সাথে বেশি সক্ষতা রাখি এবং তাদের সংবাদ পরিবেশন করি। কেন করি তাঁর কারণ আজ সকলের কাছে পরিস্কার। তাদের সমালোচনার উত্তরে খোদ নজরুল আলি মন্ডল নিজেও কখনও মন্তব্য করে বলেছেন, কে কি বলল তাই দেখে আমার লাভ নেই, আমি দেখি পাপিয়া দলটা করে, দলের কাজ করে, মানুষের পাশে থেকে সরকারি পরিষেবা দেয়।

অশোকা মৃধা-র অবস্থা তো আরও কাহিল ছিল। ওয়ার্ডে যুব নেতা বলে নিজেকে যিনি জাহির করে বেড়িয়েছেন সেই শ্যামল সরদার যেভাবে অতিষ্ট করে তুলেছিল অশোকা মৃধাকে তা আর বলার ছিল না। পদে পদে তাঁকে শারীরিক হেনস্থা না করার সুযোগ হলেও মানসিক হেনস্থা করতে ছাড়ে নি। গোটা ওয়ার্ডের মানুষকে অতিষ্ট করে তুলেছে। গোটা ওয়ার্ডে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাধিয়ে রেখেছে। মানুষ এই শ্যামল সরদারের জন্য একেবারে দিশাহারা হয়ে পড়েছে কাকে ভরসা করে পরিষেবা পাবে। শ্যামল সরদার গোটা ওয়ার্ডের মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছে। যেখানেই সুযোগ পেয়েছে সেখানেই বলেছে অশোকা কে? এখন ওয়ার্ডে কোন কো-অর্ডিনেটর বলে কোন পদ নেই, অশোকা এবার শেষ, আমরাই সব, যা উন্নয়ন করবো সব আমরাই করবো, আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন আর আমাদেরই ভোট দেবেন, এবার আমরাই প্রার্থী হব সব ঠিক হয়ে গেছে। এর সাথে তাঁকে আমোল দিয়েছেন আর এক যুব নেতা, যার কোথাও সেভাবে গ্রহণযোগ্যতা নেই। না আছে লোকবল, না আছে অর্থবল, শুধু আছে বাচনবল। এতদিন সেই বাচনবল দিয়েই মানুষকে চমকে এসেছে, থুরি মানুষকে কেন কয়েকজন পৌর প্রতিনিধিকেও চমকে এসেছেন। আজ তো আর তা হবে না। মানুশ্ন এরপর বুঝে নিয়েছে অশোকা মৃধা এখনও পৌরমাতা হিসাবেই কাজ করবেন। তাঁর হাত ধরেই উন্নয়ন আসবে। যারা এতদিন বলে এসেছে তারা কিছুই করে দিতে পারবে না। যদিও বর্তমানে যুব সংগঠন বলে কিছুই নেই। সব কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এটা এই শ্যামল সরদারের মত কতিপয় যুব নেতা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে ভয় পাচ্ছে পাছে তাদের পাশে যে গুটিকয়েক মানুষ আছে তারাও যদি চলে যায়।

এবার আসি বিভাস মুখার্জি-র কথায়। বিভাস মুখার্জি একজন পরিচিত, জনপ্রিয় দক্ষ সংগঠক বলেই জানে সকলে।দুই বারের সি আই সি এবং টাউন সভাপতি। ভালই ছিল সবটাই কিন্তু ইদানিং কালে এমন কয়েকজনকে নিয়ে বেশি প্রাধান্য দিতেন যারা আরও বেশি করে তাঁর সুনামকে একেবারে রসাতলে ঠেলে দিয়েছে।গোটা ওয়ার্ডে তাঁর পিছনে সমালোচনায় কান পাতা দায়। কিন্তু সামনে এলে সকলেই এমন ভাব করে যে তিনি দেবতা। আমরা ২৬শে নভেম্বর ২০১৯ সালে একটা সংবাদ প্রকাশ করেছিলাম “তবে কি ২০২০ সালে কি বদলাতে চলেছে গড়িয়া টাউন সভাপতি? কে হতে পারে…”। এই সংবাদ প্রকাশের পর অনেকেই বলেছিলেন সত্যিই কি হবে, হলে গড়িয়ার রাজনীতি পরিবেশটা বাঁচে। ওই প্রতিবেদনে বলেছিলাম যিনি টাউন সভাপতি হবেন তিনি কাউন্সিলার হবেন না এমটাই ভাবছে দল। হ্যাঁ ঠিকই সেদিন আমি বলি নি “এক ব্যক্তি, এক পদ” কিন্তু আমার বলার উদ্দেশ্যটা তাই ছিল। আজ ২০২১ সালে সেই কথাটাই কার্যকরি হল। ইতিমধ্যে ৪ নং ওয়ার্ডে যে ভাঙন ধরেছে তা মেরামত করতে হিমশিম খেতে হবে।তবে বর্তমানে যে প্রশাসকমন্ডলী তালিকা প্রকাশ হয়েছে তা আমরা নীচে প্রকাশ করলাম, দেখে নিন একনজরে

ডাঃ পল্লব দাস (চেয়ারপার্সেন), তাপস চক্রবর্তী (সহ চেয়ারপার্সেন, নতুন সংযোজন), কুহেলী ঘোষ (নতুন সংযোজন), অশোকা মৃধা (নতুন সংযোজন), কার্তিক বিশ্বাস, রণজিৎ মন্ডল, পাপিয়া হালদার (নতুন সংযোজন)। এর মধ্যে কেউই তাপস চক্রবর্তীকে চিনে উঠতে পারছে না। কেউ তাঁর নাম বা পরিচয় সম্পর্কে অবগত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *